ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

গোপালগঞ্জ ও হাওর জেলা সুনামগঞ্জ আমার কাছে সমান: প্রধানমন্ত্রী 

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ২৩:১২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের সাতটি জেলা ও তেইশটি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার জন্মজেলা গোপালগঞ্জ ও হাওর জেলা সুনামগঞ্জ আমার কাছে সমান। আমি হাওরবাসীর উন্নয়নে আছি থাকব। হাওরের যে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে। পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম রচিত বাউলপুত্র শাহ নূর জালালের কণ্ঠে একটি গান শুনেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ছাতক উপজেলাকেও শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেন। এসময় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত সুধীজন করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।

বুধবার সকালে সুনামগঞ্জে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শতভাগ বিদ্যুৎতায়িত উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সুনামগঞ্জের প্রসঙ্গ আসার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে সুনামগঞ্জবাসীর জন্য নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ও সুদূরপ্রসারী উদ্যোগের জন্য জেলাবাসীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান।

জেলা প্রশাসক ভিডিও কনফারেন্স প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ২০১৭ সালে হাওরের সম্পূর্ণ ফসলহানির কারণে অসহায় হয়ে পড়েন জেলার কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। হাওরবাসীর এই দুঃসময়ে প্রধানমন্ত্রী মমতাসিক্ত হাতে তখন পাশে দাঁড়ান। প্রায় ২ লাখ কৃষক পরিবারকে পরবর্তী ফসল না ওঠা পর্যন্ত প্রতি মাসে চাল ও নগদ টাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ১০টাকা কেজিতে চাল বিক্রির সুযোগ করে দেন। এতে খুশি হন হাওরবাসী। জেলাবাসীকে এই জরুরি সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এ ঘটনা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ।
 
এদিকে অনুষ্ঠানে বাউল আছেন জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জের বাউলদের গান শুনতে চান। তখন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের ছেলে বাউল শাহ নূও জালাল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা শাহ আবদুল করিমের গান ‘শেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু সবাই কয়, বন্ধু ছিলেন সত্য বটে, আসলে শত্রু নয়। এনেছিলেন স্বাধীনতা, তাইতো বলে জাতির পিতা, সাক্ষী দিছে দেশ-জনতা, এই কথা মিথ্যা নয়। শেখ মুজিব জাতির পিতা, করিম বলে নেই সংশয়।’ এই গানটি তন্ময় হয়ে শুনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কালজয়ী গান সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।

এসময় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎবিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমুস সাদাত সেলিম, পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম. এনামুল কবির ইমন, সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন, স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোহেল আমিন, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান,মুক্তিযোদ্ধা মালেক হুসেন পীরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪০টি জেলা এবং ছাতকসহ ৪১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎতায়ন করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাকি জেলাগুলোতে মুজিববর্ষেই আলো জ্বালানোর কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান যুগটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে এটা কখনো হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মকে এমনভাবে শিক্ষিত করতে চাই যেন প্রতিযোগিতাময় এ বিশ্বের সঙ্গে তারা তালমিলিয়ে চলতে পারে। সেজন্য প্রযুক্তি শিক্ষাটা একান্তভাবে প্রয়োজন।

তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্প্রসারণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রযুক্তি নির্ভর একটা জাতিগোষ্ঠী গড়ে তুলতে চাই। নতুন প্রজন্ম যেন আরও বেশি আগ্রহী হয় সেদিকে নজর রেখে আমরা কম্পিউটার শিক্ষা, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমসহ বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছি।

অনলাইনে ঘরে বসে অর্থ উপাজর্নের সুযোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেমেয়েরা ঘরে বসে অনলাইনে আউটসোর্সিং করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। একেবারে গ্রামে বসে। সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করেছি, এ সুযোগ আরো সম্প্রসারণ করতে সরকার কাজ করছে।

‘শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেটর অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার’ এর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে ট্রেনিং নেবে, এর ফলে দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, তারা নিজেরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।

চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, উদ্যোক্তা হতে হবে। চাকরি না করে চাকরি দেবো এই চিন্তাটা থাকতে হবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব সুলতান আহমেদ নিজ নিজ বিভাগের উন্নয়ন তুলে ধরে তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। 

কেআই/আরকে
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি