ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

বরগুনা-হবিগঞ্জ হাসপাতালে চীন ফেরত দুই শিক্ষার্থী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২৪, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ০৯:৫১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস আতঙ্কে এবার বরগুনা ও হবিগঞ্জে চীন ফেরত দুজন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সর্দি ও জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাদের দেহে এখন পর্যন্ত করোনার কোনো সংক্রমণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।  

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন শাহীন খান জানান, ‘ইমরান হোসাইন নামে এক শিক্ষার্থী গত শনিবার চীন থেকে তার নিজ বাড়িতে ফেরেন। তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। পরের দিন রোববার রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ইমরানকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়। 

২২ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী জেলার সদল উপজেলার ৯নং এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। 

শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, ‘তিনি চীনের স্যানডং প্রদেশের রিজাউ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী। গত শনিবার সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।’

বরগুনা জেলা সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘চীন ফেরত ইমরান গায়ে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। তার গায়ে সামান্য জ্বর থাকলেও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। করোনা ভাইরাসের যে লক্ষণ একজন মানুষের শরীরে থাকে, তার মধ্যে সেরকম কোনও আশঙ্কা নেই। তবু যেহেতু চীন থেকে ফিরেছে, তাই তাকে আমাদের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’

এদিকে, হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় শহরের শায়েস্তানগরের চীন ফেরত রায়হান আহমেদ নামে এক যুবক অসুস্থ হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এসময় চিকিৎসক তাকে করোনার সন্দেহে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।

তিনি জানান, ‘আগামীকাল (আজ) সোমবার তার রক্তের স্যাম্পল নিয়ে ঢাকায় প্রেরণ করা হবে। সেখান থেকে পরীক্ষা করে নিয়ে আসলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে করোনা আক্রান্ত কোনও রোগী এখনও বাংলাদেশে পাওয়া যায়নি।’

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, সদর হাসপাতালে ভর্তি যুবক রায়হান চীন থেকে দেশে ফেরার পর ঢাকায় আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে ১৫ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। 

এদিকে, মরণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্তের আশঙ্কায় গতকাল রোববার উত্তরের জেলা রংপুর মেডিকেলে এক চীনা নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুরের উত্তরা ইপিজেডে কর্মরত জাংওয়াই নামের ওই নারী গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ও সর্দিতে ভুগছিলেন। পরে তাকে করোনা আইসোলেশন বিভাগে নেয়া হয়।

তবে রোববার পর্যন্ত তার শরীরে করোনা ভাইরাসের কোনো লক্ষণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। জাংওয়াই করোনায় আক্রান্ত কি না তা জানতে গতকালই তার রক্ত ও লালা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। 

এ নিয়ে গত কয়েকদিনে রংপুর মেডিকেলে করোনা আশঙ্কায় চারজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনই চীন ফেরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তবে তাদের শরীরেও এখন পর্যন্ত করোনার সন্ধান মিলেনি। 

প্রসঙ্গত, মরণঘাতি করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত চীনে এক হাজার ৭৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে। নিহত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই উৎপত্তিস্থল হুবেই প্রদেশ। 

আর চীনের বাহিরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত জাপানে। সূর্য্যদয়ের দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসের শুরুর দিকে উহানে এক জাপানি নাগরিক মারা গেলেও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো জাপানে এ ভাইরাসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক নারীর মৃত্যু হয়।

এছাড়াও চলতি মাসের প্রথমদিকে হংকং ও ফিলিপাইনে একজন করে মারা যান। গত শনিবার এশিয়ার বাইরের দেশ ফ্রান্সে এক চীনা পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববারও এশিয়ার আরেক দেশ তাইওয়ানে করোনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। 

এদিকে করোনার প্রাণকেন্দ্র চীনের উহান শহরটি এখন কার্যত বন্ধ বা অচল হয় আছে। এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই বহু স্বেচ্ছাসেবী আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা-নেয়া করছেন। আবার অনেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের যাদের পরিবহনের ব্যবস্থা নেই তাদের সহায়তার চেষ্টা করছেন। দেশটিতে সাধারণ রোগীর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ৬ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।

তবে চলমান পরিস্থিতেও সহসাই আসছে না প্রতিষেধক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্যানুযায়ী, অন্তত ১৮ মাস সময় লাগবে প্রতিষেধক হাতে আসতে। ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহতার দিকে যাবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এআই/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি