বাসের বুকিং সহকারি থেকে শত কোটি টাকার মালিক!
প্রকাশিত : ১৫:৫৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
ডাবলু সরকার
রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু পরিবারের সম্পত্তি দখল, জালিয়াতি ও দুর্নীতির মাধ্যমে পাঁচ বছরে শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগগুলো উঠেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কমিশনের বৈঠকে ওই সিদ্ধান্ত হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বরে রাজশাহীর আটজন আওয়ামী লীগ নেতার সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়। কমিশনের রাজশাহী আঞ্চলিক অফিস থেকে পাঠানো তালিকায় প্রথমে রয়েছে ডাবলু সরকারের নাম। প্রাথমিক তদন্ত করে এ তালিকা পাঠায় দুদকের রাজশাহীর কর্মকর্তারা।
এদিকে, সম্প্রতি রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধারা ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বাড়িঘর দখল ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন ডাবলু সরকার। অথচ তিনি এখনো বিআরটিসির বাসের বুকিং সহকারি পদে কর্মরত।
তারা জানান, ডাবলু সরকারের বাবা আব্দুর রশিদ সরকার রাজশাহীর কুখ্যাত রাজাকার আবদুস সাত্তার ওরফে টিপুর অন্যতম সহযোগী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, অপহরণ ও লুণ্ঠনের অভিযোগে ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ মামলার চার নম্বর আসামী রশিদ সরকার। আসামীদের বিরুদ্ধে উল্লিখিত অভিযোগের প্রমাণ পায় প্রসিকিউশন টিম। তবে ছয়জনের মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা ও আবুল হোসেন আগেই মারা গেছেন। বেঁচে আছেন একমাত্র আসামি টিপু সুলতান। গত ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল টিপু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, ডাবলু সরকার আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী। তার পরিবারের সবাই আগে মুসলিম লীগ ও পরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তার বড় ভাই ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল হামিদ টেকন এখনো বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ভগ্নিপতি নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি মীর ইকবালের হাত ধরে ডাবলু সরকার আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেন। নগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক পদ নিয়ে আওয়ামী লীগে আসা ডাবলু পরে নগর সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজশাহীর কুমারপাড়ায় ‘সখিনা বোর্ডিং’ দখল করে এক হিন্দু ব্যবসায়ীকে দেশ ছাড়া করে ডাবলু। পরে তিনি সেখানে ১৬ তলা বিশিষ্ট সরকার টাওয়ার নির্মাণ করেন। রাজশাহীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে আবদুল জলিল বিশ্বাস মার্কেটটি নামমাত্র মূল্যে দখলে নিয়েছেন ডাবলু। রাতের আঁধারে ছোটবনগ্রামের বস্তিবাসী উচ্ছেদ করে ১২ বিঘা জমি দখল করেছেন।
কুমারপাড়ার বিআরটিসির ডিপোর জায়গাটি এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে দখলে নেন ডাবলু। সিএন্ডবি মোড়ের পাশেই জায়গা দখল করে তিন তারকা হোটেল নির্মাণ করছেন তিনি। সেখানে তার দুই অংশীদার বিএনপি নেতা শিমুল ও এনায়েত। এছাড়া কুমারপাড়ায় রঘুশাহ নামের এক হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে পাঁচ কাঠা জমিও দখল করে নেন ডাবলু সরকার।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাবলু সরকার বলেন, আগামী ১ মার্চ মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। দলের সম্মেলন সামনে রেখে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
আরও পড়ুন