ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবিতে ৬ জনের লাশ উদ্ধার 

রাজশাহী প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৭:০৫, ৭ মার্চ ২০২০

রাজশাহীর পদ্মায় বিয়ের অনুষ্ঠানের নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযানে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কনেসহ নিখোঁজ রয়েছে তিনজন। দমকল বাহিনী, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি দল যৌথভাবে এই উদ্ধার অভিযান চালায়। 

নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার বিকেল পর্যন্ত তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সকালে চারঘাট থেকে মনি খাতুন (৩০) নামের এক নারী, দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই এই দুইজনের লাশ ভেসে উঠে। বিকেল ৪টার দিকে ডুবুরিরা পানির নিজ থেকে শামিম হোসেন (৩৫) ও তার মেয়ে রশ্নি খাতুন (৭) লাশ উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ছয়জনে। তবে এখনো তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও ডুবে যাওয়া নৌকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান নৌ পুলিশের ওসি।

নিখোঁজরা হলেন,পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলী মেয়ে কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০),কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া খাতুন (১৩) ও খালা আখি খাতুন (২৫)।

শনিবার সকালে কনের চাচা শামিমের স্ত্রী মনি খাতুনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। আর বিকেলে পাওয়া যায় শামিম ও তার মেয়ে রশ্নির লাশ। উদ্ধারের সময় রশ্নি তার বাবার বুকে জড়িয়ে ছিল। এর আগে দুপুরে পাওয়া যায় তার আত্মীয় একলাস আলীর লাশ। এরপর পাওয়া গেছে কনের ভগ্নিপতি রতন আলীর লাশ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই রতনের মেয়ে মরিয়মের (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন রতনের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন (২০)।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌ-পুলিশ রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান চালায়। সকালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ডুবুরি দল। তারা যৌথভাবে উদ্ধার কাজ চালায়।

তিনি বলেন, এই নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে নিখোঁজ ও হতাহতের অনুসন্ধান এবং উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয়ে কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিহতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আহতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার বলেও জানান এই সরকারি কর্মকর্তা।

তদন্ত কমিটির প্রধান আবু আসলাম বলেন, দুই নৌকায় ধাক্কা, নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া ও ওই সময় ঝড় বাতাসের কারণে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এতে তারা নড়াচড়া করলে নৌকায় পানি উঠে যায়। এছাড়াও এক নৌকা থেকে আরেক নৌকায় লাফিয়ে উঠে দুইটি নৌকায় ডুবে যায়। তবে সে সময় ওই দিক দিয়ে একটি বালুবাহী বোর্ড যাচ্ছিল। তারা অনেককে উদ্ধার করেছে। বাকিরা সাঁতার কেটে পাড়া উঠে গেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে চরখিদিপুর ও শ্রীরাপুর এলাকার মাঝ পদ্মায় বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ৩৬ জন যাত্রী নিয়ে দুইটি নৌকা ডুবি যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের যাত্রী নিয়ে পবা উপজেলার খানপুর থেকে ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল নৌকা দুইটি। রাতেই দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌপুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। খবর পেয়ে সিটি মেয়র ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।

দুই মাস আগে চরখানপুরের মৃত ইনছার আলীর ছেলে আসাদুজ্জামান রুমনের (২৫) সঙ্গে পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে নিখোঁজ কনের নাম সুইটি খাতুন পুর্ণির (২০) রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। শুক্রবার বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে কনের বাড়ি ফিরছিল তারা।

রাজশাহী সদর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আব্দুর রউফ বলেন, খানপুর এলাকায় বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে বর কনে নিয়ে পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল। দুইটি নৌকায় ৩৬ জন যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১৭ জন নারী ও ৬ জন শিশু। সন্ধ্যায় চরখিদিরপুর ও শ্রীরামপুর এলাকার সীমানায় মাস পদ্মায় এই নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। 

কেআই/আরকে


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি