ঢাকা, রবিবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝালকাঠিতে কালেক্টরেট স্কুলের কক্ষ ও দেয়াল ভাঙচুর!

ঝালকাঠি প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২০:২৮, ১৫ মার্চ ২০২০

ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন পরিচালিত কালেক্টরেট স্কুল ভবনের দুইটি কক্ষ ও সীমানা প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কালেক্টরেট স্কুলের পাশেই বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভবন নির্মাণের জন্যই এ ভাঙচুর চালানো হচ্ছে। প্রকাশ্যে এ ভাংচুরকালে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতাকর্মীকে ঘটনাস্থলে পাহারা দিতে দেখা গেছে। 

এঘটনায় কালেক্টরেট স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ স্থানীয় অনেকেই এমন কর্মকাণ্ডে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তবে প্রভাবশালী মহলের ভয়ে এতে কেউ বাধা দিতে সাহস পায়নি। 

জানা যায়, সুগন্ধা নদীর তীর ঘেঁষা শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রæয়ারি কালেক্টরেট স্কুলটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে স্কুলটিতে ২০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। মনোরম পরিবেশে স্কুলটি যাত্রা শুরু করায় দিন দিন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। বিদ্যালয়টির সৌন্দর্য বর্ধণের জন্য জেলা প্রশাসন সামনেই একটি পুকুর ও চারপাশে সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে। সীমানা প্রাচীরের ভেতরে বিভিন্ন ফুল ও ফলের গাছ লাগানো হয়। সম্পতি সীমানা প্রাচীরের পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ মিনার। 

কালেক্টরেট স্কুলটির সীমানার বাইরে পশ্চিম পাশ ঘেঁসে সরকারী জমিতে কয়েক বছর পূর্বে বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ভবন নির্মাণ করার জন্য বরাদ্দ নেয়। গত দু’দিন পূর্বে কলেজের ভবন নির্মাণের আগেই টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মীদের নিয়ে পাহারা বসিয়ে কালেক্টরেট স্কুলের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এরপরে তারা স্কুলের শ্যেনীকক্ষ হিসাবে ব্যবহৃত দুটি শ্রেণি কক্ষও ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।

সরজমিনে দেখা যায়, ছয়মাস আগে নির্মিত সীমানা প্রাচীরের ৫৫০ ফুট দেয়াল কতিপয় শ্রমিক ভেঙ্গে ফেলছে। তাদের কাছে জানতে চাইলে শ্রমিকরা জানায়,‘ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের সভাপতি আমদের দেয়াল ও রুম দুটি ভাংতে বলছে তাই আমরা ভাঙছি।’ দুইদিন ধরে স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের পাহারায় শ্রমিকরা এ ভাংচুরের কাজ করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভাংচুরের সময় উপস্থিত থাকছেন বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের কয়েকজন শিক্ষক।

বেসরকারী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ স্থাপনের জন্য এ ভাংচুরের কারণে কালেক্টরেট স্কুলের সীমানা কমে যাওয়া ও সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি এই স্কুলের দুটি শ্রেণি কক্ষ ভেঙ্গে ফেলায় শ্রেণিকক্ষেরও স্বল্পতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রকাশ্যে কেউ বাধা না দিলেও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।
     
নাম প্রকাশে অনিচ্ছক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, জেলা প্রশাসন বিদ্যালয়টি স্থাপনের পর এখানে আমাদের সন্তানকে ভর্তি করেছি। শিক্ষাঙ্গনের সুন্দর পরিবেশ ও শিক্ষার মান ভালো হওয়ায় অনেকেই তাদের সন্তানদের কালেক্টরেট স্কুলে ভর্তি করাচ্ছেন। চতুরপাশে সীমানা প্রাচীর থাকায় একটি নিরাপত্তা ছিল। অথচ অন্য একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার জন্য এখন এধরনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রুম ভেঙে ফেলছে, এটা সঠিক হয়নি। তাদেরতো অনেক জমি রয়েছে, সেখানে ভবন করলেই পারতো। এভাবে সরকারি জমি দখল করে কেন আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেটাই অবাক বিষয়। 

এ বিষয়ে বেগম ফিরোজা আমু ঝালকাঠি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র লিয়াকত আলী তালুকদার সাংবাদিকদের জানায়, কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য যে জমি আছে, তাতে ভবন হচ্ছে না। এজন্য আমরা সমঝোতার মাধ্যমে কিছু জমি নেয়া হয়েছে। শীগ্রই কালেক্টরেট স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্ধারিত সীমনায় করে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কালেক্টরেট স্কুলের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। সীমানা প্রাচীর ও কক্ষ ভাঙচুরের ব্যাপারো কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি