জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
কাল সহকারী শিক্ষককে নির্যাতনের তদন্ত প্রতিবেদন পেশ
প্রকাশিত : ১৮:০৩, ২২ মার্চ ২০২০
সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফুর রহমান ও তার ভাই আতিকুর রহমান কতৃক সহকারী শিক্ষকের উপর শারীরিক নির্যাতন করায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিঠির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা পাল’র বরাবরে অভিযোগ দায়ের। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ ২১ জন শিক্ষক ও কর্মচারী স্বাক্ষরীত অভিযোগ এবং নির্যাতিত ২ সহকারী শিক্ষক মো. কবির উদ্দিন (বাংলা) ও মো. মোজাহিদ হোসেনের (ইংরেজি) পৃথক অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ সদস্য তদন্ত কমিঠি গঠন করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল কবির কে আহবায়ক করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শরিফ উদ্দিন ও জন-স্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী রাম চন্দ্র সাহার ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিঠিকে সোমবার ২৩ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত সোমবার ১৬ মার্চ বিকেলে জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে শিক্ষক মন্ডলীর জরুরি বৈঠক ছিল। বৈঠকের শুরুতে বাংলা শিক্ষক সকল শিক্ষকের জাতীয় করনের বিষয়ে বিলম্ব কেন জানতে চাইলে উজ্জল আদর্শে লালিত এই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস গেল পাল্টে। প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফুর রহমান ও তার ভাই খন্ডকালীন শিক্ষক আতিকুর রহমান কর্তৃক সহকারী ২ শিক্ষকের উপর শারীরিক স্টিমরোলার চালালে অন্য সকল শিক্ষক কর্মচারীরা এই নেক্কারজনক ঘঠনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। সহকারী শিক্ষকদের উপর নির্যাতন করায় সকলে ঐক্যবদ্ধ হলে পরিস্তিতিকে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে প্রধান শিক্ষক নিজেকে অসুস্থ তৈরি করে সিলেট চলে যান। পরদিন ১৭ মার্চ বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ের দুই শিক্ষক পৃথকভাবে ও সকল শিক্ষক সমন্বয়ে নির্বাহী অফিসারের কাছে এই অভিযোগ দায়ের করেন।
কি ঘঠেছিল সেদিন?
১৬ মার্চ বৈঠকের শুরুতেই বাংলা শিক্ষক কবির উদ্দিন শিক্ষক পদ সরকারী করনের জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে দেওয়া ১৩ লক্ষ টাকার আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও কেন সরকারী করন হচ্ছে না জানতে চাইলেই প্রধান শিক্ষক ও সহোদর আতিকুর রহমান কবির উদ্দিনকে শারিরিকভাবে ভূলুন্ঠিত করে। মো. মোজাহিদ হোসেন প্রধান শিক্ষক ও আতিকুর রহমান কে ফেরাতে গেলে মোজাহিদ হোসেনের উপরও ঝাঁপিয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে দরজা বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক ও তার ভাই লন্ঠভন্ড করে বিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। অভিযোগকারী শিক্ষকদ্বয় বলেন ১৪ই জুন ২০১৭ তারিখে বিদ্যালয়টি সরকারী করন হয়। শিক্ষক সরকারী করনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কয়েক লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে প্রধান শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষককে ৫৩ হাজার, কর্মচারীদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ১৩ লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও সরকারী করনের কাজের কোন অগ্রগতি না হওয়ায় প্রত্যেক শিক্ষকই এই সম্পর্কে জানতে চান। আর এই জানতে চাওয়াটাই কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূচনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়:
অভিযোগকারী শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন পৃথক পৃথক ভাবে বলেন, মো. লুৎফুর রহমান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়াও উপজেলার ১০টি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন আইন সহায়তা কেন্দ্র জামালঞ্জ শাখার সভাপতি। কিন্তু তিনি একজন স্বেচ্চাচারী, ব্যবিচারি, লোভী, অর্থ-আত্মসাতকারী ও দুর্ণীতি পরায়ন লোক। তৎকালীন সময়ে তিনি ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের পদ পেয়েছিলেন।
প্রধান শিক্ষকের পদ পাওয়ার পর স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষানীতিমালা বহির্ভূত খন্ডকালীন শিক্ষক ও লাঠিয়াল হিসেবে তার আপন ভাই মো. আতিকুর রহমান কে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষনে এমপিওভুক্ত শিক্ষককে না দিয়ে তার অযোগ্য আপন ভাইকে সকল প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করিয়ে অনারিয়ম (অর্থ) পাওয়ার সুযোগ করে দেন। প্রধান শিক্ষকের লাঠিয়াল ভাই আতিকুর রহমান বিগত ২৭/০১/২০১৯ইং এস.এস.সি পরীক্ষার্থী লোকমানকে ছুরিকাঘাতে আহত করলে জামালগঞ্জ থনায় ০৩/০৩ নং মামলা হয়। যার প্রথম আসামি আতিকুর রহমান। আসামি অবস্থায় তিন মাস পলাতক থাকলেও প্রধান শিক্ষক তার ভাইকে বেতন-ভাতা দিয়ে রেখেছেন। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।
অভিযোগকারীরা আরো জানান, সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা মাপে প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র অযোগ্যতার কারনে অন্য সকল শিক্ষকদের সরকারী করনে গড়িমসি করছে। অনেকেই বলছেন লুৎফুর রহমান প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়ের আর্থিক কেলেঙ্কারী আরো প্রকট আকার ধারন করছে। জামালগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২ শতক ভূমি তিনি জোর পূর্বক মডেল হাইস্কুলের নামে রেকর্ড করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও বিদ্যালয় সরকারী করনের পর থেকে তিনি কোন অডিট বা হিসাব নিকাশ প্রকাশ করেননি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিঠির সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষক ও সাবেক অভিভাবক সদস্যরা আরো জানান, বিদ্যালয়ের অর্থ এখন হরিলুঠ চলছে। ১২০০ শিক্ষার্থীর প্রতিমাসে ৭০ টাকা করে টিফিন ফির ৮৪০০০ টাকার মধ্যেও রয়েছে অর্থ আত্মসাতের ঘঠনা। বিগত বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় প্রতি বছরের ন্যায় ৩২ হাজার টাকা ব্যয় হলেও ব্যয় বিল ভাউচারে ১লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে বলেও জানা যায়।
উপরোক্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের লুৎফুর রহমানের সহকারী শিক্ষকদের প্রতি অসদাচরন, শারিরিক নির্যাতন, অবমাননা, অর্থ আত্মসাৎ বিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্ণীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাবী জানান সকল শিক্ষক অভিবাবক ও জামালগঞ্জের সুশীল সমাজ।
আরকে//
আরও পড়ুন