করোনা আতঙ্কের সাথে কিস্তির জ্বালা!
প্রকাশিত : ১৯:২৯, ২২ মার্চ ২০২০
করোনা আতঙ্কের সাথে কিস্তির জ্বালা
প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় বাড়ছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে রাতদিন মাঠে কাজ করছেন উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান ছাড়া সব ধরনের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আজ রোববারও নবাবগঞ্জে ২৫০ জন ও দোহারে ৫৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিল। খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া সারাদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই যখন বাড়িতে থাকার কথা চিন্তা করছে, ঠিক তখনই ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির কথা চেপে বসছে এ দুই উপজেলার দরিদ্র মানুষের মাথায়।
ইতোমধ্যে দুই উপজেলার হোটেল, রেস্ট্যুরেন্ট, চায়ের দোকান বন্ধ করে দেয়ায় বেকার জীবন যাপন করছে সেখানে কর্মরত কর্মচারীরা। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেও তাদের চোখমুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাত্রী পাচ্ছেন না অটোরিকশার চালকরা। কাজ না পেয়ে বসে বসে সময় কাটছে দিন-মজুরদের। বাজারেও কমছে জনসমাগম।
তবে দুই উপজেলা দরিদ্র মানুষের কাছে করোনার পাশাপাশি আরেক আতঙ্কের নাম এনজিও। করোনা আতঙ্কে মানুষ ঘরবন্দি হলেও তাদের কাছ থেকে ঋণের টাকা আদায় বন্ধ করেনি এনজিও কর্তৃপক্ষ।
একাধিক ঋণগ্রহীতারা জানান, করোনা আতংকিত হয়ে কাজ না থাকায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে এসব মানুষের। এরপরও এনজিওগুলো আমাদের কোনও সাহায্য সহযোগিতা না করে উল্টো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। এসব মানুষের মধ্যে আছে দিন মুজুর, রিকশাচালক, অটো চালক, ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী।
নবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জাভেদ মিয়া জানান, আমার নিজের কোনও টাকা নেই। একটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে দোকান করি। ঘরে থাকতে হলে তো দোকান চালাতে পারবো না। তাহলে ঋণের কিস্তি শোধ করবো কীভাবে?
হোটেল শ্রমিক আলামিন, রাহুল ও সাব্বির বলেন, কাজ করলে আমাদের পেটে ভাত জোটে, আর না করলে পরিবারসহ না খেয়ে থাকতে হয়। হোটেল বন্ধ থাকলে আমরা কিভাবে চলব। এর ওপর কম-বেশি কিস্তি আছে সবার। আবার এই আতঙ্কের মধ্যে হোটেলও খোলা রাখা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ ভাইরাস যতদিন না যায় ততদিন অন্তত আমাদের কিস্তিটা বন্ধ রাখুন। একদিকে করোনার আতঙ্ক তার ওপর কিস্তির চাপে দিশেহারা হয়ে পড়বো।
নতুন বান্দুরার চা বিক্রেতা মামুন বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতিদিন দোকানে ভিড় থাকে। কয়েকদিন ধরে রাস্তাায় মানুষ খুব কম। তাই বিক্রিও কমে গেছে। এই দোকানের আয় থেকে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে। পাশাপাশি দোকান চালানোর জন্য দুটি সমিতি থেকে ঋণ নিয়েছি। দোকানের আয় থেকেই কিস্তি দুটো চালাতাম। এখন তো চায়ের দোকানও বন্ধ। এই সপ্তাহে কিস্তি দিব কিভাবে সেই চিন্তায় আছি।
বেশিভাগ মানুষের দাবি, দেশের এই সংকটের সময়ে ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি উত্তোলন বন্ধ করা হোক। তা না হলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ বিপদে পড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাঠ পর্যায়ের এনজিও কর্মী জানান, ঋণ বিতরণ করার পর উত্তোলন করার দায়িত্ব তাদের। কেউ কিস্তি না দিলে পকেট থেকে অফিসকে জমা দিতে হয়। সরকার কিস্তি বন্ধের সিদ্ধান্ত দিলে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। অফিস আমাদের যে নির্দেশনা দিবে আমরা তাই পালন করব।
এনএস/
আরও পড়ুন