করোনায় বিপাকে দোহার-নবাবগঞ্জের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
প্রকাশিত : ১৪:২২, ৮ এপ্রিল ২০২০
ছোট এই দোকানের আয় থেকেই চলে আমার সংসারের সব খরচ। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছি। এমন যদি আরও অনেক দিন থাকে তাহলে বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে। আর যদি এই অবস্থা আরো বাড়ে তাহলে প্রচন্ড বিপদে পড়তে হবে আমাকে। কিভাবে সংসার চলছে বা চলবে তা কেউ বুঝবে না। দোকান কয়েকদিন ধরে বন্ধ তাই দেখতে এসেছি সব ঠিক আছে কি না।
মঙ্গলবার সকালে এভাবেই প্রতিবেদকের কাছে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন নতুন বান্দুরা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া।
দোকানের সামনে একা বসে ছিলেন এই ব্যবসায়ী। তবে মুখে মাস্ক না থাকায় মাস্ক কোথায় প্রশ্ন করতেই বলেন, ভাই মাস্কের দাম ৪০ টাকা। আর ১০ টাকা জোগার করতে পারলে এক কেজি চাল কিনতে পারব। আগে তো খেয়ে বাঁচতে হবে তারপর না হয় করোনায় মরবো। যে অবস্থা করোনায় মরার আগে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ীর কথাতেই বুঝা যায় করোনার এই অবস্থায় কেমন আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এমন অবস্থা শুধুমাত্র ওই দোকানদারের নয়, ছোট ছোট ব্যবসা করা সকলেরই। দোকান বা ব্যবসা বন্ধ থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেকে। এভাবে দুই চারদিন সামলাতে পারলেও বেশি সময় ধরে চললে কী হবে তা তারা জানেন না।
করোনা ভাইরাসে স্তব্ধ গোটা বিশ্ব। দেশে করোনা রুখতে সাধারণ ছুটি চলছে। বন্ধ রয়েছে যাবতীয় যান চলাচল, দোকান-পাট সব। মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। ঘরের বাইরে চলাচলে দেয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এমন অবস্থায় মহা বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
করোনার প্রভাব কেমন পড়েছে জানতে চাইলে বান্দুরার ব্যবসায়ী বিপ্লব মাহমুদ বলেন, দোকান বন্ধ রাখলে কিভাবে সংসার চালাবো। এদিকে সংসার খরচ অন্যদিকে দোকান ভাড়া। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
কথা হয় ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ী আলী আকবরের সাথে। তিনি জানান, ‘তাঁর দুইটি সন্তান আছে। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে তাঁর আয় একদম কমে গেছে।
একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে কেমন আছে এটা বাহির থেকে কেউ বুঝবে না। অনেক ব্যবসায়ী আছে যাদের ঘরে এখন খাবার নেই। বেশিভাগ ব্যবসায়ীরাই বিভিন্ন ব্যাংক বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। নিম্ম বিত্ত মানুষজন বিভিন্নজনের কাছে সহযোগিতা পায় কিন্ত আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কারো কাছে চাইতে পারে না। আবার কেউ সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে না।
এদিকে দোহার ও নবাবগঞ্জের যে সব ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে তাদের স্বপ্ন বাধে সেই সব উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের এবার মাথায় হাত। অনেক ব্যবসায়ী পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পড়েছে বিপদে। এই পরিস্থিতিতে তাদের ব্যবসায় টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছেন তারা। সরকার যদি কোন সহযোগিতা না করে তাহলে তাদেরকে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন হতে হবে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মনে করেন, দোকানপাট বন্ধ থাকলে ভাড়া দিতে হিমসিম খেতে হবে তাদের। একদিকে সংসার খরচ অন্যদিকে দোকান ভাড়া। সরকারের উচিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকান ভাড়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া।
এমবি//
আরও পড়ুন