সীতাকুণ্ডে জাহাজভাঙ্গা শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন
প্রকাশিত : ২০:৩১, ১৫ এপ্রিল ২০২০ | আপডেট: ২০:৪১, ১৫ এপ্রিল ২০২০
বাংলাদেশে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা একটি বৃহৎ শিল্প অঞ্চল। ১৯৬০ সালের দিকে এই অঞ্চলে স্বল্পপরিসরে প্রথম শিপব্রেকিং এর কাজ শুরু হয়। ১৯৭০ এর দিকে একটু একটু বিকাশ ঘটলেও আশির দশকে এই শিপব্রেকিং শিল্প একটি নতুন শিল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তখন থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংক সহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এর সাথে ওৎপ্রোতভাবে জড়িত হয়। ব্যবসা ও সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এ শিল্পটি।
বিভিন্ন শিপব্রেকার্স মালিক সূত্রে জানা যায়, শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি শিপব্রেকিং লাইসেন্স থাকলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে সাথে লড়াই করে টিকতে না পেরে বর্তমানে চালু আছে ৫০ থেকে ৫৫টি শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এসব ইয়ার্ডে বর্তমানে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
সীতাকুণ্ডের এই শিল্প ইন্ডাস্ট্রিয়াল বেল্টে করোনা নামক মহামারীর ঝুঁকি রোধে বন্ধ রয়েছে এখানকার অনেক শিল্প-কারখানা। জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পও তাদের মধ্যে অন্যতম। এখানে দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করত হাজার হাজার শ্রমিক। যারা এখন লকডাউনে বন্দি। আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়ায় এসব শ্রমিকেরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
শ্রমিকরা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ হয়ে গেলেও শ্রমিকরা অবস্থান করছে ভাড়া বাসায়। কর্মহীন হয়ে পড়া শ্রমিকদেরকে কয়েকটি ইয়ার্ড মালিক এবং কাটিং কনটাক্টার ছাড়া বেশিরভাগ ইয়ার্ড মালিক ও কাটিং কনটাক্টদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।
উপজেলার মাদামবিবির হাট এলাকায় অবস্থিত আছাদি শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের শ্রমিক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, কাটিং কনটাক্টার আমাদেরকে জানান ২৬ তারিখ থেকে লকডাউন প্রত্যাহার হবে বলে আমাদেরকে এখানে রেখে দেয়। যদি লকডাউন প্রত্যাহার না হয় তাহলে কাটিং কন্টাকটার নিজ দায়িত্বে বাড়িতে পৌঁছে দেবে অথবা এখানে থাকা খাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করে দিবে ওয়াদা করেন। কিন্তু ওয়াদা করেও বর্তমানে আমাদের খোঁজখবর না রাখায় আমরা আর্থিক সংকটে আছি। লকডাউন ও অর্থের অভাবে উত্তরবঙ্গে আমাদের বাড়িতেও যাইতে পারতেছিনা। বর্তমানে আমরা এখানে খাবারও পাচ্ছি না বাড়িতেও যাইতে পারছিনা। আর এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নয় তাই সরকারি ইউনিয়ন পরিষদ থেকেও কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা বা ত্রানও পাচ্ছি না আমরা।
এ ব্যাপারে একজন কাটিং কনটাক্টার মোহাম্মদ মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা ইয়ানু সাহেবের সাথে যোগাযোগ করে শ্রমিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো। এছাড়া স্থানীয় ইউপি মেম্বার সাহেবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এই ভাসমান শ্রমিকেরা বর্তমানে আমাদের এলাকার জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং ম্যাক কর্পোরেশনের মালিক মাস্টার আবুল কাশেম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সহযোগিতার বিষয়টি ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে সকল প্রকার মানবিকতা চিন্তা করে শ্রমিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি। তবে একটি কথা এই শিপব্রেকিং শিল্পটি নিয়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত একটি বিশেষ মহল শিল্পটিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করতেছে। এদের থেকে দেশবাসী এবং সাংবাদিদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে।
এদিকে জাহাজভাঙ্গা শ্রমিকদের চিকিৎসা ক্ষতিপূরণ, ন্যায্য মজুরি এবং তাদের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধার জন্য এ অঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছে স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন ইপসা। এ বিষয়ে ইপসার প্রকল্প সমন্বয়কারী মোহাম্মদ আলী শাহিন জানান, আমরা ১৯৮৫ সাল থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের খুব কাছ থেকে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারকে নানা রকম তথ্য দিয়ে টেকনিকেল সহযোগিতা দিয়ে ইপসা তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। বর্তমানেও এই দুর্যোগ মুহূর্তে মানুষের পাশে থেকে নিবেদিতভাবে কাজ করে আসছি। এ জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে বেকার শ্রমিকদের ১০৭০ পরিবারকে মানবিক ত্রাণ সাহায্য দিয়ে তাদের পাশে আছি এবং ভবিষ্যতেও আমরা থাকবো।
তবে এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় শিপব্রেকার্সদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান।
আরকে/
আরও পড়ুন