৮০ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ৩০ কেজি!
প্রকাশিত : ১৪:১৭, ১৬ এপ্রিল ২০২০
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মৎস্য অধিদপ্তরের ত্রাণের চাল বিতরণে অনিয়ম ও লুটপাটের অভিযোগ তুলেছেন জেলেরা।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, চরএলাহী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসারকে চাল বিতরণে না রেখে কয়েকজন ইউপি সদস্যদের যোগসাজশে চাল বিতরণের নামে দুর্নীতি ও হরিলুটের ঘটনা ঘটায়।
জানা যায়, জনপ্রতি ৮০ কেজি করে ৫৫০ জন জেলের জন্য মার্চ ও এপ্রিল মাসের ৪৪ মেট্রিক টন বরাদ্দকৃত চাল খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে চর এলাহী ইউপি চেয়ারম্যান। তবে জেলেরা উত্তোলনের কথা জানলেও বিতরণের কোন তথ্য জানতেন না।
অপরদিকে ইউপি সচিব কামাল উদ্দিন চাল বিতরণে অনিয়ম হয়নি দাবি করে বলেন, ‘চাল ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে বিতরণ করা হয়নি। ইউপি সদস্যদের হাতে দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা তাদের বাড়ি থেকে এ চাল বিতরণ করেন।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত জনপ্রতি ৮০ কেজি চাল দেয়ার কথা। কিন্তু সেখানে কিছু সংখ্যক জেলেকে ১০-২৫-৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ আবার এর চেয়ে কম পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৮ এপ্রিল থেকে জেলে কার্ডের ৪৪ মেট্রিক টন চাল নামমাত্র বিতরণ শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান। এরপর ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদের খাদ্য গুদামে ৩০ কেজি ওজনের ৪০০ বস্তা চাল চেয়ারম্যান কৌশলে মজুদ রেখে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, জেলে কার্ডের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাকের কাছে চাল কম দেয়ার কারণ জানতে চান। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান চাল বিতরণে অনিয়মের ঘটনায় কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, এত কিছুর পরও সিদ্ধান্ত বদলায়নি ইউপি চেয়ারম্যান। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়রের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পরদিন মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) প্রকৃত কার্ডধারীদের শেষ সময়েও চাল দেননি। একইদিন বাকি ৪০০ বস্তা চাল আধা ঘণ্টার মধ্যে গুদাম থেকে বিতরণের নামে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একেক ব্যক্তি ৪০-৫০ বস্তা চাল নিয়ে যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘চাল বিতরণে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি হয়নি। তবে তিনি জনগণের প্রতি আবেগ ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে কার্ডধারীদের চাল ভাগ করে একাধিক ব্যক্তিকে দিয়েছেন।’
চরএলাহী ইউনিয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী খুরশিদ আলম জানান, ‘চাল উত্তোলন করার সময় আমাকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অবহিত করে। কিন্তু ত্রাণের চাল বিতরণের সময় আমাকে জানানো হয়নি। শুনেছি ইউপি সদস্যদের বাড়ি থেকে কিছু চাল বিতরণ হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে আজ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে গিয়েছি। তদন্ত চলমান আছে।’
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোতালেব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মৎস্য অধিদপ্তরের জেলে কার্ডের চাল বিতরণে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগের তেমন করার কিছুই নেই। আমাদের কাজ মৎস্যজীবীদের তালিকা দিয়েই শেষ। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন দায়িত্ব পালন করে থাকে।’
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তার প্রশ্রয়ে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহাব উদ্দিন মুঠোফোনে জানান, ‘তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন, এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ‘অভিযোগের আলোকে তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো হবে।’
এআই/
আরও পড়ুন