‘আমি করোনায় আক্রান্ত আমাকে বাঁচান’ অতঃপর!
প্রকাশিত : ১৬:০০, ২১ এপ্রিল ২০২০
নাটোর ম্যাপ
হটলাইন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে বলা হয়- ‘আমি করোনায় আক্রান্ত, আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছি, আমাকে বাঁচান।’ নাটোর শহরের আলাইপুর এলাকার আব্দুল করিম পরিচয়দানকারী করোনায় আক্রান্ত ওই ব্যক্তিকে খুঁজতে মাঠে নামে পুলিশ।
করোনামুক্ত নাটোরের জন্য বড় দুঃসংবাদ হিসেবে দেখা দেয়ায় পুলিশ ওই ব্যক্তিকে উদ্ধারে তাদের সকল প্রক্রিয়া কাজে লাগায়। কিন্তু তার কোনও হদিস করতে পারেনা পুলিশ। করোনা আক্রান্ত হওয়ার সংবাদে সকলেই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে।
খবর পেয়ে উদ্ধারকারী দলের সহায়তায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলও মাঠে নামেন। কিন্তু সোমবার (২০ এপ্রিল) দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সন্ধান করেও ফোনকারী সেই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান করতে পারেনা পুলিশ। অবশেষে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে খুঁজে পান নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাতের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। পুলিশের ওই দলটি সোমবার রাত ৮টার দিকে সদর উপজেলার লক্ষ্মিপুর ইউনিয়নের টলটলিয়া পাড়া থেকে মোবাইলসহ সেই ফোনকারীকে আটক বা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তাকে আটকের পর চোখ কপালে ওঠে সবার।
কারণ, আটক করা হয় সুমন নামে ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরকে। সে ওই গ্রামের নবীনূরের ছেলে। স্থানীয় একটি স্কুলে ৭ম শ্রেণীতে পড়ে।
জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন হটলাইন নম্বরে কল দিয়ে তার নাম বলে আব্দুল করিম। শহরের আলাইপুর এলাকায় তার বাড়ি। করেনায় আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে পালিয়ে এসেছে। বর্তমানে শ্বাসকষ্টে ভুগছে, তার জরুরী চিকিৎসা দরকার। এমন ফোন পেয়ে তৎপর হয়ে ওঠে জেলা পুলিশ।
এদিকে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে করোনামুক্ত নাটোরের মানুষের মাঝে দেখা দেয় উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। বিভিন্ন স্থান থেকে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ঘটনার সত্যতা জানতে চাওয়া হয়। এভাবেই পার হয় কয়েক ঘন্টা। রাত ৮টার দিকে তাকে আটকের পর প্রশাসনে স্বস্তি ফিরে আসে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে লিখিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় যে, ওই ফোনটি ছিল প্রতারণা বা হয়রানিমূলক। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ূয়া ওই স্কুলছাত্র করোনা হয়েছে এমন মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। নিছক মজা করার জন্যই সে সরকারের বিভিন্ন পরিসেবা নম্বরে ফোন করে।
এ বিষয়ে নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত বলেন, আটক ছেলেটির মোবাইল সিডিআর পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৬ এপ্রিল হতে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সে সরকারি টোলফ্রি ৩৩৩ নম্বরে ৩১৬ বার, ১৬২৬৩ নম্বরে ৬৩ বার, ১০৬৫৫ নম্বরে ৪০ বার, ১০৯ নম্বরে ৩১ বার এবং ৯৯৯ নম্বরে ২৩ বার কল করে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রদান করেছে। এমন কাজের ফলে সরকারি সম্পদ ও সময় যেমন অপচয় হয়েছে, তেমনি ভূক্তভোগী জনগণ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ সেবা হতে বঞ্চিত হয়েছেন। পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য প্রদান করায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ প্রশাসনসহ দায়িত্বরত অন্যন্য সংস্থা হয়রানির শিকার হয়েছে।
এ বিষয়ে আটক সুমনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিভাবকদের অনুরোধ করা হয়েছে, আপনাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখুন। তারা যেন মোবাইলের অপব্যবহার করে এমন বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রদান না করে।
এনএস/
আরও পড়ুন