অভুক্ত পাখিদের আর্তনাদ শুনলেন পুলিশ কর্মকর্তা
প্রকাশিত : ১৫:৪৬, ৩০ এপ্রিল ২০২০
চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বর এলাকা। এক ঝাঁক অভুক্ত পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে যেন প্রকাশ পাচ্ছে ক্ষুধার আর্তনাদ। অনেক পথচারীকে ঘিরে রেখেছে খাবারের প্রত্যাশায়।
পাখিদের সেই আর্তনাদ অনেকের কানে পৌঁছলে কেউ এগিয়ে আসেননি। তবে, সৃষ্টি জীবের প্রতি পরম ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। কিছু শুকনা খাবার নিয়ে এগিয়ে আসেন তিনি। তারপর থেকে যখনই শহীদ হাসান চত্বর এলাকায় যান তখনই পাখিগুলো তাকে ঘেরাও করে খাবারের প্রত্যাশায়।
ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির দল মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসকে ঘিরে রেখেছে আর তিনি খাবার ছিটিয়ে পাখিদের খাওয়াচ্ছেন। এমন একটি ভিডিও বাংলাদেশ পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। এরপর থেকেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পরে বিভিন্ন স্থানে। অনেকে সেখানে ইতিবাচক ও ধন্যবাদমূলক মন্তব্য প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, ‘গাড়ী থামাতেই ঘিরে ধরলো হাজারো পাখি। মনে হলো যেন বলছে আমাদের খাবারের প্রধান উৎস হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ বেকারিগুলো তোমরাই বন্ধ করেছো। সুতরাং এখন তোমাকেই খেতে দিতে হবে। ক্ষনিকের জন্য হারিয়ে গেলো মন। শুধুই ভাবছি সৃষ্টিকর্তার কথা। কি তার লীলা খেলা। করোনার ছোবলে যখন থমকে গেছে গোটা বিশ্ব, বন্ধ রয়েছে সমস্ত খাবারের হোটেল ঠিক তখন যেন লকডাউন ভেঙ্গে খাবারের জন্য আর্তনাদ করছে পাখিরা। তাঁর সৃষ্ট জীবকে সেবা করলে প্রকারান্তরে তাঁকেই সেবা করা হয়। তাই আসুন মানুষসহ সকল প্রাণিকুলের পাশে দাঁড়াই।’
সেখান থেকেই চিন্তা করে অভুক্ত পাখিদের জন্য কিছু শুকনা খাবারের ব্যবস্থা রাখছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবে পাখিদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিতে চান তিনি।
আগেও পাখিদের খাবার দেওয়া হতো জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, ‘শহরের হাসান চত্বর এলাকায় একটি পুলিশ বক্স আছে। লকডাউনে যানবাহন ও মানুষের চাপ কম। তাই কাক-পক্ষিদের আনাগোনা বেড়েছে শহরে। সেইসঙ্গে বেড়েছে তাদের খাবার সংকটও। জেলা পুলিশ বিষয়টিকে কখনও ছোট করে দেখে না। তাই প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি অভুক্ত এই পাখিদের বিষয়টিও নজরে আছে।’
পশু পাখিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন কেয়ার ফর আনক্লেইম্ড বিস্ট (কাব) এর সভাপতি বখতিয়ার হামিদ বিপুল জানান, ‘বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। এখান থেকে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবেন। এভাবে সবাই যার যার স্থান থেকে এগিয়ে এলে পশু-পাখিরা আর ক্ষুধার্ত থাকবে না।’
অন্তত এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ওইসব পশু-পাখিদের দিকে নজর দেওয়ার অনুরোধও জানান তিনি।
এআই/
আরও পড়ুন