বাউফলে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে ফল চাষে
প্রকাশিত : ১৭:৪২, ৩০ এপ্রিল ২০২০
মধু মাস জ্যৈষ্ঠ আসন্ন। আর কয়েক দিন পর পাকা ফল উঠতে শুরু করবে গ্রামীন হাট-বাজারে। আম, জাম, লিচু, কাঁঠালসহ এসব দেশি ফলের স্বাদ আস্বাদন করবে ভোজন রসিক বাঙালী। এরই মধ্যে রঙ আসতে শুরু করেছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা লিচুতে। কোথাও আবার সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দিচ্ছে জামরুল। স্বাদ আর উৎপাদন আধিক্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস কিংবা কমলালেবুর মতো ফলের সঙ্গে অঞ্চল ভিত্তিক বিভিন্ন সুনাম-সুখ্যাতি প্রচলিত থাকলেও এখন উপকুলীয় বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় চোখে পড়ে উন্নত জাতের এসব ফলের চাষ। দিন দিন আগ্রহ সৃষ্টির ফলে দেশি-বিদেশি এসব ফলের বানিজ্যিক চাষবাসে এগিয়ে এসে লাভবান হচ্ছেন কেউ কেউ।
রাজশাহী, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট কিংবা চট্রগ্রামের মতো উপকুলীয় অঞ্চলে উন্নত জাতের আম, লিচু, আনারস, মাল্টা কিংবা কমলালেবুর মতো ফলের ভাল ফলন পাওয়া যাবে না এমন ধারণা বদ্ধমুল ছিল এখানকার অধিকাংশ মানুষের। কিন্তু সেই ধারণা অমূলক প্রমান করেছে উপজেলার ধুলিয়ার মিজান গার্ডেন, শৌলার নুরজাহান গার্ডেন, কর্পূরকাঠীর স্বপ্নচূড়া থিম পার্ক, ভরিপাশার বৌ-শাশুড়ীর বাগান, দাসপাড়ার রীপনের খামারসহ ধানদী গ্রাামের বশির মাষ্টারের বাগান বাড়ি, হারুন মৃধা, শাহনুর বেগম, রহিম মৃধা, মন্নান মাস্টার, রামনগর গ্রামের আউয়াল মাস্টার, জাকির মৃধা, বড়ডালিমা গ্রামের কামরুজ্জামান শিমুল, আবুল হোসন মীর, কালাইয়া বন্দরের এএসএম ফিরোজ (জাপানী ফিরোজ), হেনরি, মাইনুল ইসলাম, যৌতা গ্রামের বাবুল উকিল, নওমালা গ্রামের আবু তাহের মিয়া, শহিদুর রহমান তালুকদার, মদনপুরা গ্রামের নজরুল মাস্টার বাড়ির মসজিদ সংলগ্ন বাগান, বিলবিলাস গ্রামের আবুল কালাম (ইমাম), কাগুজিরপুলের উত্তম গাঙ্গুলী, পৌর সদরের সাংবাদিক এমরান হাসান সোহেল, ভরিপাশা গ্রামের জাহানারা, তানিয়া বেগম, ফিরোজ হাওলাদার, রহমান হাওলাদার, হেলাল হাওলাদার, নাজিরপুরের আলমগীর মিয়া, দাশপাড়ার রিপন, মেহেন্দিপুর গ্রামের কামরুল ইসলাম মাস্টার, আব্দুল গনি সিকদার বাড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আম, লিচু, মাল্টা ও কমলালেবুসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি ফলের চাষ। এসব বাগান বাড়িসহ ঘরের আঙিনায় কারো বা শখের বসে লাগানো গাছে এখন হাত বাড়ালেই মিলবে নানান সব রসালো ফল-ফলাদি। এর ফলে কারো কারো ফল গাছের বানিজ্যিক আবাদে হাত বাড়ানোর মতো আগ্রহ তৈরী হচ্ছে।
এরই মধ্যে ধুলিয়ার মিজান গার্ডেন, শৌলা গ্রামের নুরজাহান গার্ডেন ও কর্পূরকাঠি গ্রামের স্বপ্নচূড়া থিম পার্কের সারি সারি গাছে ঝুলছে কিউজাই, কিংঅব চাকাপাত, ব্যানানা, মিস স্পেশাল, সূর্যডিম, ম্যাট্যাস, হাঁড়িভাঙা নামে উন্নত জাতের আমসহ দেশি বিদেশি আম, কাাঁঠাল, লিচু, নাগপুরী, বারি কমলা-১, চায়না কমলা, এলাচি কমলা, বেড়াকাটা কমলালেবু, মাল্টা, ড্রাগন, প্যাশন, জাম্বুরা, পেঁপে, পেয়ারার মতো নানা সব রসালো ফল।
অবসর সময়ের ফল বাগানী কমলাপুর এনএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল ইসলাম জানান, ক্রমাগত আবহাওয়ার পরিবর্তণ এবং রাসয়নিক সার ও বিষমুক্ত ফলের আশায় এখন অনেকেই ঘরের আঙিনায়, পরিত্যক্ত ভিটে-বাড়িসহ বানিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরণের ফলদ গাছের চাষে ঝুঁকছেন। করোনার মতো মহামারি চোখাঙ্গুলী করে সবাইকে ফল চাষের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে। পৌর সদরের বাসাবাড়িতে অনেকে টবে ড্রাগন, মাল্টা, কমলাসহ বিভিন্ন ফল গাছ লাগিয়েছেন। গড়ে তুলছেন ছাদ বাগান। তিনি বলেন, ‘কেঁচো কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট, খৈর, গোবর, জৈবসার আর প্রাকৃতিকভাবে পরিচর্যায় বেড়ে ওঠা বাগানের ফলজ গাছে ঝুলছে এখন মাল্টা, কমলালেবু, কাঁঠাল, জামরুল, দেশি-বিদেশি নানা জাতের আম, জাম্বুরা আর লিচুর মতো বিভিন্ন ফল।’ মৌসুমি ফলের ভারে নুয়ে আছে তার পুরো বাগানের বেশিরভাগ ফলদ গাছগুলো।
স্থানীয় পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন ‘সেভ দ্যা বার্ড অ্যান্ড বি’র পরিচালক মন্ডলীর একজন শামসুন নাহার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতে বাজারে এক হালি কাগুজি লেবুর দাম এখন ৬০-৭০ টাকা হয়েছে। তা দেখেই আমাদের টনকনড়া উচিৎ। গাছপালা-বনজঙ্গল কেটে বিনস্ট না করে এখনই সবাইকে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন ফল গাছসহ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।’
কালিশুরী ডিগ্রি কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা বেগম বলেন, ‘রাজশাহী, দিনাজপুর, সিলেট, চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম, পঞ্চগড় জেলার মতো উপকুলীয় বাউফলের মাটিতে এখন বিভিন্ন জাতের আম, কমলালেবু, মাল্টা, লিচুর মতো ফলের ভাল ফলনে চাষের ধারণা পাল্টে দিচ্ছে। দেশি প্রজাতির পুষ্টিমান সম্পন্ন পরিবেশ বান্ধব ফল গাছের পরিকল্পিত বনায়ন করা জরুরি তা করোনার মতো মহামারিতে ফলের চাহিদা থেকেই শিক্ষা নেয়া যায়।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এখানে এখন উন্নত জাতের আম, মাল্টা, কমলা, লিচু, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। পুষ্টির চাহিদা পূরণে অন্য পেশার পাশাপাশি শিক্ষিত লোকজনের এ ধরণের ফল চাষে এগিয়ে আসা উচিত।’
আরকে//
আরও পড়ুন