মোংলায় বিদেশি এলপিজি জাহাজ থেকে তেল পাচারের অভিযোগ
প্রকাশিত : ২১:৫২, ২ মে ২০২০ | আপডেট: ২১:৫২, ২ মে ২০২০
মোংলা বন্দরে আগত বিদেশি এলপিজি জাহাজের বিভিন্ন ধরণের জ্বালানি তেলসহ মূল্যবান মালামাল কালোবাজারে পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে সরকার মোটা অংকের শুল্ক আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দরে আসা বিদেশি এলপিজি জাহাজে কাস্টমসের পিও (প্রিভেন্টিভ অফিসার) থাকা সত্বেও কিভাবে তেল পাচার হয় তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে মোংলা কাস্টম হাউসের যুগ্ন কমিশনার মোঃ সেলিম শেখের বক্তব্য নিতে তার ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
প্রতিমিাসে ২৫ থেকে ৩০টি এলপিজি জাহাজ এ বন্দরে নোঙর করে। গত এপ্রিল মাসে ২৪ টি জাহাজ এ বন্দরে ভিড়েছে। এসব জাহাজ থেকেই মূলত তেল পাচার করে থাকে পাচারকরীরা।
কতিপয় স্থানীয় শিপিং এজেন্টের যোগ-সাজসে মোংলার রিজেকশন গলির প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি এসব পাচার কারবার করছেন। এক শ্রেণীর অসাধু শিপিং এজেন্ট অতি মুনাফার আশায় অবৈধ এ কারবারে সরাসরি সহযোগীতা করছেন জাহাজের নাবিকসহ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী চক্রকে। এ ব্যপারে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে একের পর এক অভিযোগ করেও কোন সূরাহ হয়নি। যে কারণে আর্ন্তজাতিকভাবে এ বন্দরের সুনাম ক্ষুন্নের আশংকা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাশোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘বন্দর আইনে নিয়মই আছে জাহাজে ওয়াচম্যান বুকিং দিতে হবে, যদি কোন শিপিং এজেন্ট এ আইন অমান্য করে-লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে বন্দর কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব’।
এদিকে মোংলা বন্দর ষ্টিভিডরিং ওয়াচম্যান ওয়েলফেয়ার সংঘের সভাপতি গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, গত এক মাসে অন্তত সাতটি এলপিজি জাহাজ এ বন্দরে আসলেও সেসব জাহাজে ওয়াচম্যান বুকিং দেওয়া হয়নি। আর ওই সুযোগেই স্থানীয় গ্লোবাল শিপিং, টি এ এশিয়া শিপিংসহ বেশ কয়েকটি শিপিং এজেন্টের যোগসাজসে মোংলার রিজেকশন গলির মাফিয়া প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা ওই সাতটি জাহাজ থেকে তেল, মবিলসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ পাচার করে কালোবাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, শনিবারও (২ মে) মোংলা বন্দরে দুইটি গ্যাসের জাহাজ রয়েছে যাতেও ওয়াচম্যান নেয়া হয়নি। একটি পশুর চ্যানেলের হারবার জেটিতে আর একটি সুন্দরতলায় রয়েছে। এ জাহাজ দুইটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টি,এশিয়ার। রোববার (৩ মে) এলপিজি নিয়ে যে জাহাজটি বন্দরে আসার কথা রয়েছে সেটিরও স্থানীয় শিপিং এজেন্ট গ্লোবাল শিপিং। বিশেষ করে এই দুই শিপিং এজেন্টের বিরুদ্ধে মুলত ওয়াচম্যান না নেয়া ও জোগসাজগে চোরাকারবারীদের সহায়তার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে জাহাজে ওয়াচম্যান বুকিং (নিয়োগ) করা থাকলে এসব পাচার কোনভাবেই সম্ভব হত না বলে জানান গোলাম মোস্তফা। কিন্তু বন্দরের আইনে নিয়ম থাকলেও স্বার্থান্বেষী কতিপয় কিছু শিপিং এজেন্ট মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তারা জাহাজে ওয়াচম্যান বুকিং (নিয়োগ) দিচ্ছেন না।
তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কোষ্টগার্ড পশ্চিমজোনে (মোংলা সদর দপ্তর) একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে কোষ্টগার্ড পশ্চিমজোনের (মোংলা সদর) অপারেশন কর্মকর্তা লেঃ ইমতিয়াজ আলম মোংলা বন্দরে তেল চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অভিযোগ পেয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টারও। হারবার মাষ্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন বলেন, যেসব শিপিং এজেন্ট জাহাজে ওয়াচম্যান বুকিং (নিয়োগ) দেননি, ‘তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বন্দরে আগত বিদেশী জাহাজ থেকে তেল পাচার ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হবে বলে জানান বন্দরের পদস্থ এই কর্মকর্তা’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলার রিজেকশন গলির কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, বন্দরে আগত বিদেশি এলপিজি জাহাজে বাজার সরবরাহের নামে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী প্রতিদিনই এসব জাহাজ থেকে তেল পাচার করে কালো বাজারে বিক্রি করছেন। একইসাথে তারা জাহাজের মূল্যবান মালামালও চুরি করে নিয়ে আসে। এসব করে তারা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
মোংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য ও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দল খালেক বলেন, যেসব চোরাকারবারি জাহাজে ব্যবসার নামে এই বন্দরকে আর্ন্তজাতিকভাবে হেয় করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হবে।
কেআই/
আরও পড়ুন