১ টাকার দোকান!
প্রকাশিত : ১৯:৫১, ৮ মে ২০২০ | আপডেট: ২০:৩০, ৮ মে ২০২০

এক টাকার দোকানে ক্রেতাদের ভিড়- ছবি একুশে টিভি।
দিনাজপুরের হিলিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণরোধে লকডাউনের কারণে ঘর থেকে বের হতে ও কাজে যেতে না পারায় কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া গরীব অসহায় দুঃস্থ মানুষজন। এমন অবস্থায় তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত হাকিমপুর ফাউন্ডেশন। তারা চালু করেছেন মাত্র ১ টাকার দোকান, যেখান থেকে গরীব অসহায় দুঃস্থরা এক টাকা দিয়ে একবেলার খাবারের প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। এক টাকায় একবেলার আহারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এসব গরীব অসহায় দুঃস্থরা।
হিলি সীমান্তের ক্যাম্পপট্টির সামনের বালুরচর বস্তি, চুড়িপট্টি ও আদিবাসীপাড়াসহ নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় যেখানে গরীব অসহায় দুঃস্থ মানুষজনের বসবাস, সেসব এলাকায় এই এক টাকার ভ্রাম্যমান দোকান নিয়ে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা তাদের মাঝে এসব পণ্য বিক্রি করছেন। এক টাকার বিনিময়ে প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে- ১ কেজি করে চাল, আড়াইশো গ্রাম পেঁয়াজ, আড়াইশো গ্রাম আলু, পুইশাক ও মিষ্টি কুমড়া। বেশ কিছুদিন ধরেই হাকিমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে খাবার ও ইফতার সামগ্রী বিতরণসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী পালন করে আসছে।
হিলি সীমান্তের বালুরচর বস্তির গোলজার হোসেন ও নাজমা বেগম বলেন, আমরা বন্দরে ও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে কাজ করে জিবীকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আজ বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ি থেকেই বের হতে পারছিনা। যে কারণে কাজেও যেতে পারছিনা। এতে আয় রোজগার না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছি। ছেলে মেয়েদের নিয়ে খাদ্য কষ্টে ভুগছি। পৌরসভা থেকে খাবার দেওয়া হলেও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এমন অবস্থায় এক টাকায় একবেলার আহার- এমন দোকান আমাদের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছে। আমরা প্রতিদিন এই দোকান থেকে এক টাকার বিনিময়ে খাবার কিনছি। যা দিয়ে খাবার রান্না করে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতিদিন আমাদের এই বস্তিতে তারা ভ্যানে করে এসব পণ্য নিয়ে আসছেন আর আমরা টাকা দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে সেই দোকান থেকে পণ্য কিনছি। তাদের এই দোকান দেওয়ায় আমাদের মতো খেটে খাওয়া গরীব অসহায় মানুষদের জন্য খুব ভালো হয়েছে।
হাকিমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেহেদি হাসান সোহাগ বলেন, হিলিসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত ৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে হাকিমপুর ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রথমদিকে নিজেদের সদস্যদের অর্থায়নে গত ২৬ মার্চ থেকেই এ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের মাঝে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। পরে পৌর মেয়রসহ বিভিন্ন জনের সহযোগীতায় সেই কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে করে আসছি। সম্প্রতি রমজান শুরু হওয়ায় বিভিন্ন মানুষের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। সেই সাথে চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন চলায় সবকিছু বন্ধ থাকায় ও মানুষজনকে বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করছেন প্রশাসন। এমন অবস্থায় কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিন্ম আয়ের গরীব অসহায় মানুষজন। তারা খাদ্যকষ্টের মধ্যে রয়েছেন। সেই সব মানুষের কথা চিন্তা করে এক টাকার বিনিময়ে কিছু মানুষকে একবেলার খাবারের প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার উদ্দেশ্যেই আমাদের হাকিমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই এক টাকার দোকানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হিলির বিভিন্ন বস্তিসহ যেসব এলাকায় গরীব অসহায় দুঃস্থ মানুষজন রয়েছে। আমরা ওইসব বস্তি ও গ্রামে ভ্যানে করে পণ্য নিয়ে গিয়ে তাদের মাঝে ১ টাকার বিনিময়ে এসব পণ্য বিক্রি করছি। যতদিন পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হবে ততোদিন পর্যন্ত আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, হাকিমপুর ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে নিঃসন্দেহে এটি খুব ভালো একটি উদ্যোগ। এতে করে গরীব অসহায় দুঃস্থ যেসব মানুষ রয়েছেন তারা যেন মনে কোনরকম সংকোচ না করে এবং একটাকা দিয়ে হলেও তারা পণ্য কিনে নিচ্ছেন। অপরদিকে তাদেরও যে উদ্দেশ্য, এসব মানুষকে সহযোগীতা করা, এটি অনেক ভালো একটি উদ্যোগ। তাদের মতো সমাজের আর যারা বিত্তবান রয়েছেন তারাও যদি এদের দেখে গরীব অসহায় দুঃস্থ মানুষদের সাহাযার্থে এগিয়ে আসেন আমার পক্ষ থেকে এই আহ্বান।
এনএস/
আরও পড়ুন