ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে দুই কাউন্সিলরের বিরামহীন ছুটে চলা

সৌরভ ইমাম

প্রকাশিত : ১৮:০৫, ১৬ মে ২০২০

করোনার ভয়ে যখন ঘরবন্দী, তখন রাত-দিন মানুষের পাশে থেকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের দুই কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও আরিফুল হক হাসান।

১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার। কখনো করোনা আক্রান্ত মৃতদেহ দাফন করতে এগিয়ে এসে কিংবা কখনো অসহায় মানুষের বাড়ীতে খাবার পৌঁছে দিতে ছুটে চলা। গত প্রায় তিন মাস এমন বিরামহীন ছুটে চলছেন কাউন্সিলর মাকুসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।

গত মাসে দুইটি ঘটনায় পুরো শহরে সাড়া পড়ে। ডা. কৈলাস বণিক (৬০) গত ১৯ এপ্রিল করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর শেষকৃত্যের জন্য যখন কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন ফোন পাওয়া মাত্রই এগিয়ে যান কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার।

একই দিনে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিপিবি’র নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সদস্য ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড সেক্রেটারি বিকাশ সাহা। সন্ধ্যায় মরদেহ মাসদাইর শ্মশানে আসলে দাহ করতে সহযোগিতা করেন কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম।

এর আগে শহরের আমলাপাড়া এলাকায় একই পরিবারের তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিন জনের মরদেহই দাফন করেন কাউন্সিলর খোরশেদ। নিহতদের স্বজনরা কেউ এগিয়ে না আসলে খবর পান এ জনপ্রিয় কাউন্সিলর । খবর পেয়ে দেরী না করে ছুটে যান নিহতদের বাড়ীতে। নিজে উপস্থিত থেকে দাফনের শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জে করোনা হানা দেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত করোনা আক্রান্ত এবং উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া মানুষের দাফন-কিংবা সৎকারের ব্যাবস্থা করেন মাকসুদুল আম খন্দকার।

বর্তমানে ১০ জন ডাক্তার নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরইমধ্যে ৬ হাজার লোককে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে বলে জানান মাকসুদ আলম খন্দকার। এ সেবা চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।

 এছাড়া, গর্ভবতী মায়েদের জন্য চিকিৎসা দেয়া, বিনামূল্যে সবজী বিতরনসহ নানামুখী সামাজিক কাজ করে জেলায় ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছেন এ জনপ্রতিনিধি।

এ ব্যাপারে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে কাউন্সিলর খোরশেদ জানানদ, ‘ঝুঁকি আছে। আর সেটা সব থেকে বেশি আমার পরিবারের। তাই দুই মাস ধরে আলাদা আছি। ওরা তিন তলায় থাকে আর আমি দ্বিতীয় তলার একটি রুমে থাকি।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও দায়িত্ববোধ থেকেই এসব কাজ করছেন বলেও জানান খোরশেদ। যতদিন সম্ভব নিজের কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি। কোন মানুষকে খুশি করতে আমি কাজ করি না, আল্লাহ খুশি করলে আমাকে আরো বড় উপহার দিতে পারেন বলেও মন্তব্য তাঁর।

এদিকে, নাসিক ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসানও করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষের জন্য কাজ করছেন দেশে করোনা সনাক্তের পর থেকে। লকডাউনের পর থেকে তিনি তাঁর ওয়ার্ডের অসহায় মানুষদের ত্রান দিয়ে আসছেন রাতের আঁধারে।

এলাকাবাসী জানায়, ইতিপূর্বে শীত এবং অন্যান্য দূর্যোগের সময় দরিদ্র ও সমস্যাপীড়িত এলাকাবাসীর সাহায্যে এগিয়ে আসা আরিফুল হক হাসান করোনা দুর্যোগের সময় রাতের আধারে এভাবেই সাহায্য করে আসছেন অসহায় এলাকবাসীর। অসহায় ওয়ার্ডবাসীকে লজ্জায় না ফেলতে এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতেই এমন কৌশলে ওয়ার্ডবাসীকে সাহায্য করে আসছেন তিনি। করোনার শুরুতে করোনা থেকে দেশ ও দেশের মানুষ পরিত্রান পেতে মসজিদে কোরআন খতম ও এলাকাবাসীকে সচেতন করতে লিফলেট বিতরণ করেছিলেন তিনি।  

এ বিষয়ে কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান জানান, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা থেকে দেশবাসীকে মুক্ত রাখতে সরকার গত ২৬শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এতে আমার ৪ নং ওয়ার্ডে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। তার উপর লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন অসহায় মানুষগুলোর ঘরে ক্রমান্বয়ে খাবার সংকট দেখা দেয়ার খবর জানতে পারি। সেই প্রেক্ষিতে গোপনে সেই সব মানুষের তালিকা করি। পরবর্তীতে তালিকা অনুয়াযী আমার লোকজনকে সাথে নিয়ে রাতে তাদের বাসার দরজার সামনে খাদ্য সামগ্রীর ব্যাগ রেখে আসি। আসার সময় বন্ধ দরজায় কয়েকটি টোকা দিয়ে আসি, যাতে লোকগুলো বুঝতে পারে। খাদ্য সামগ্রী গ্রহণের সময় কাউকে যাতে সংকোচে বা লজ্জায় পড়তে না হয় তার জন্যই এ কৌশল বলে জানান তিনি। এছাড়া সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্যেও এভাবে তিনি ত্রান সামগ্রী বিতরণ করে আসছেন বলে উল্লেখ করেন।

শুরু থেকে ব্যক্তিগত অর্থায়নে এক হাজার নয়শত পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন উল্লেখ করে আরিফুল হক হাছান জানান, আমার পরিচিত একটি মাধ্যম থেকে পাওয়া ৪০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী ইতোমধ্যে আমি বিতরণ করেছি। তাছাড়া জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ২০০ প্যাকেট, ১৯০ ওএমএস কার্ড, ১ হাজার ২৬৪ কিউআর কার্ড বিতরণ ও সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আরও ১ হাজার ৩৯৩ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। একই পদ্ধতিতে এসকল খাদ্য সামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি ইনশআল্লাহ আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগও অসহায়দের সাহায্য অব্যাহত থাকবে।

এমবি//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি