প্রধানমন্ত্রীর উপহার চুরি, অসুস্থ মুক্তার দায়িত্ব নিল পুলিশ
প্রকাশিত : ১১:৫৭, ১৮ মে ২০২০
নড়াইলে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার চুরির ঘটনা ঘটেছে। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন সদরের বরাশুলা এলাকার আঞ্জু বেগমের আড়াই হাজার টাকা চুরি হয়েছে। চুরির এই ঘটনা ঘটেছে সদর হাসপাতালের সংক্রমক ওয়ার্ড থেকে।
এতে করে হতদরিদ্র আঞ্জু বেগমের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার মুক্তার চিকিৎসা সম্ভব হয়নি। টাকার অভাবে ঠিকমত ওষুধ কিনতে পারেননি। হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।
ক্ষতিগ্রস্ত আঞ্জু বেগম জানান, গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়ে ওইদিনই অসুস্থ ছোট মেয়ে মুক্তাকে নিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে যান তিনি। মুক্তার প্রচন্ড পেটে ব্যথাসহ জ্বর, বমি ও ঘন ঘন পায়খানা হওয়ায় তাকে সংক্রমক ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
অসুস্থ ছোট মেয়ের সঙ্গে তার বড় মেয়েও হাসপাতালে ছিলেন। পরের দিন ১৫ মে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অসুস্থ বোনকে নিয়ে বড় বোন হাসপাতালের বাথরুমে গেলে ছোট্ট একটি ব্যাগে রাখা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই ঈদ উপহার কে বা কারা চুরি করে নিয়ে যায়। বাথরুম থেকে এসে টাকাগুলো আর পায়নি তারা। ওই টাকাস বাড়ির আরো কিছু টাকা মিলিয়ে প্রায় ৪ হাজার টাকা ছিল ব্যাগটিতে। এরপর হাসপাতাল থেকে চলে আসেন তারা।
এই টাকা চুরির ঘটনায় দিশেহারা আঞ্জু বেগমের পরিবার। কর্মহীন আঞ্জু বেগমের স্বামী প্রায় ছয় মাস আগে থেকে অসুস্থ হয়ে সব কার্যক্ষমতা হারিয়েছেন। সেই থেকে সংসারে পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ তার আয়ের ওপরই চলছে।
বসতভিটার পাঁচ শতক জমি ছাড়া তাদের আর কিছু নেই। তাও এই জমির সব টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। আঞ্জু বেগম পরের বাড়িতে কাজসহ রান্নাবান্না করলেও করোনার কারণে এসব কাজ এখন বন্ধ রয়েছে। তাই দুশ্চিন্তার শেষ নেই তাদের। এ পরিস্থিতিতে টাকা চুরির ঘটনা ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়েছে।
আঞ্জু বেগম আরও জানান, ‘তার ছোট মেয়ে মুক্তা প্রায় দুই মাস ধরে পেটের ব্যাথায় ভুগছে। টাকার অভাবে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। গত ১৪ মে বেশি ব্যথা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ধারণা করছেন, তার মেয়ের অ্যাপেন্ডিসাইটিস ব্যথা হয়েছে। তবে টাকার অভাবে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করানো সম্ভব হয়নি।’
এদিকে, সাংবাদিকদের মাধ্যমে টাকা চুরির ঘটনা শুনে মুক্তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন নড়াইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। ঘটনাটি জানার পর গতকাল (১৭ মে) বিকেল ৪টার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত আঞ্জু বেগমকে ফোন দিয়ে তাৎক্ষণিক খোঁজখবর নেন। অসুস্থ মাদরাসা শিক্ষার্থী মুক্তাকে আজ সোমবার হাসপাতালে ভর্তি করানোসহ তার চিকিৎসার ব্যয়ভার গ্রহণ করেছেন জেলা পুলিশ সুপার।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিকদের মাধ্যমে খবর পেয়ে অসহায় আঞ্জু বেগমের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। তার মেয়ের চিকিৎসাসহ হাসপাতাল থেকে টাকা চুরির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
এআই//
আরও পড়ুন