পাটের উৎপাদন বেড়েছে ২৫ লাখ মন
প্রকাশিত : ১৯:০৬, ৫ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৪, ৬ মার্চ ২০১৮
দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনে ভাটায় থাকা পাটে ফিরেছে সুদিন। এখন প্রতি বছরই বাড়ছে এর উৎপাদন। বর্ধিত উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় গত ২০১৫-‘১৬ ফসল কর্তন বছরে দেশব্যাপী ৭৫ দশমিক ৬০০ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। যা পরবর্তী ২০১৬-’১৭ বছর বেড়ে হয় ৮২ দশমিক ৪৬৭ লাখ বেল। মাত্র এক বছরে পাটের উৎপাদন বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৬৭ লাখ বেল (প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ মন)। বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মাঠ পর্যায়ে ফসলের আবাদী জমির পরিমাণ ও উৎপাদন বিষয়ে তথ্য সংগ্রকারী এ প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২০১৫-১৬ ফসল কর্তন বছরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে পাটের চাষ হয় ৭ দশমিক ২৫৭ লাখ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে উৎপাদন হয় ৭৫ দশমিক ৬০০ লাখ বেল পাট। এর পরবর্তী ২০১৬-১৭ ফসল কর্তন বছর ৭ দশমিক ২১০ লাখ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭৭ দশমিক ৯৫০ লাখ বেল। বছরটিতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ দশমিক ৩৭৮ হেক্টর জমিতে ৮২ দশমিক ৪৬৭ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়।
উৎপাদন বাড়ার এ ধারাবাহিকতায় পরের ২০১৭-১৮ বছরে ৮ দশমিক ১৮২ হেক্টর জমিতে পাটের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৮৮ দশমিক ০৬০ লাখ বেল (এক বেলে প্রায় সাড়ে তিন মন)। কিন্তু ফসল কর্তন এ বছরটিতে বাংলার সোনালী আঁশ পাটের ওপর নেমে আসে ভয়ঙ্কর বন্যা। বন্যার কবলে অনেকগুলো দেশের জেলায় পাটের আবাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বছরটিতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয় না। তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারলেও বছরটিতে আগের বছরের তুলনায় পাটের উৎপাদন খুব বেশি কমেনি।
বন্যার মধ্যেও বছরটিতে ৭ দশমিক ৮৯৮ হেক্টর জমিতে ৮০ দশমিক ১১৮ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়। উৎপাদনের বর্ধিত হার ধরে রাখতে চলতি ২০১৮-১৯ ফসল কর্তন বছরে ৮ দশমিক ০৫ হেক্টর জমিতে ৮৮ দশমিক ৪০ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা জেলার সহকারি পরিচালক কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, পাটের ইতিহাস এ দেশের শিকড়ের ইতিহাস। কিন্তু বাংলাদেশে পাট প্রায় হারিযে গিয়েছিল। তবে হাজারো প্রতিবন্ধকতার মধ্যে এ খাত এখনও টিকে আছে। বর্তমান সরকারের সুনজর পড়ার কারণে এর দূরবস্থা কিছুটা কমেছে। উৎপাদনও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। গত ২০১৪-‘১৫ বছর থেকে এর উৎপাদন বাড়তে থাকে। বিদায়ী বছরে বন্যার কারণে একটু কম উৎপাদন হয়েছে।বন্যার মতো কোন দূর্যোগ না থাকলে আগামী বছর আরো বাড়বে।তিনি বলেন, পাটের দূরবস্থায় কৃষকরা অনেকটা অন্য ফসলে ঝুঁকে পড়েছিল। এখন আবার কৃষকরা ফিরছে এ ফসলের চাষে। তবে তাদের বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থ্যা করা গেলে উৎপাদন আরো বাড়বে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানায়, একসময় বাংলাদেশে অন্যতম ফসল ছিল পাট।যার কারণে এটার আলাদা একটা মন্ত্রণালয়ও আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পাটের সঙ্গে আরো কয়েকটি মন্ত্রণালয় জড়িত আছে। যাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। সরকার উদ্যোগ নিলেও সব মন্ত্রণালয় সমানভাবে এ পাটকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যেমন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে পাট কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ কোন প্রকল্প নেই। পাট গবেষনা ইনস্টিটিউট যে উন্নতমানের পাটজাত উৎপাদন করছে তা কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেই। কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে উন্নত জাতের পাট কৃষক পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য একটি প্রস্তাব কৃষি মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সচিব তা অপ্রয়োজন মনে করে বাদ দিয়েছে। কৃষিমন্ত্রণালয় মনে করে পাটের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় আছে এগুলো তারা করবে। আবার পাট মন্ত্রণালয় কৃষক সংশ্লিষ্ট এ বিষয়টি নিয়ে কাজও করে না। ফলে দেখা যায় মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে সরকারের ইচ্ছা থাকলে আশানুরূপভাবে খাতটি আগাচ্ছে না।
তবে পাট উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে মিল পাওয়া যায়নি বাংলাদেশ পাট গবেষনা ইনস্টিটিটের (বিজেআরআই) পরিসংখ্যানে। যদিও বিজেআরআই’র পরিসংখানে সর্বশেষ ২০১৬-১৭ বছরে পাটের উৎপাদন আরো বেশি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেআরআই’র পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২০১৩-১৪ বছরছে ৬ দশমিক ৬৬ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৭৪ দশমিক ৩৬ লাখ বেল। ২০১৪-১৫ বছরে ৬ দশমিক ৭৩ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে ৭৫ দশমিক শণ্য ১ লাখ বেল। পরবর্তী ২০১৫-১৬ বছরে ৭ দশমিক ২৫ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদন হয় ৭৫ দশমিক ৫৮ হেক্টর। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ বছর ৮ দশমিক ১৭ হেক্টর জমিতে ৯১ দশমিক ৭২ লাখ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে।
আরকে// এআর
আরও পড়ুন