ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৭ নভেম্বর ২০২৪

পাট নিয়ে চলছে বহুমুখী গবেষণা : মনজুরুল আলম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৬, ৫ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৯:০৩, ৬ মার্চ ২০১৮

মনজুরুল আলম

মনজুরুল আলম

৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস। দিবসটি সামনে রেখে একুশে টেলিভিশন অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিজেআরআই) মহাপরিচালক মো. মনজুরুল আলম। পাটের বহুমুখী গবেষণার পাশাপাশি এ খাতের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে তার কথায়। মনজুরুল আলম জানান, লোনা পানিতে পাট চাষে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত সূচিত হয়েছে। চাষাবাদে সফলতাও ইতোমধ্যে এসেছে। লোনা পানিতে পাটের উৎপাদন অন্য জমির চেয়ে বেশি। তাই এ নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি চাষীদের আরও বেশি পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তার সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো। স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন-এসএম আলমগীর

একুশে টিভি অনলাইন : পাট গবেষণায় পাট গবেষণা ইন্সটিটিউটের বর্তমান উদ্যোগগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন?
মনজুরুল আলম : এই ভূখন্ডে কৃষি নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছিল ১৯০৪ সাল থেকে। খামারবাড়িতে ঢাকা ল্যাবরেটরি ছিল, শুরুতে সেখানেই চলতো গবেষণার কাজ। এই গবেষণার ধারাবাহিকতায় ১৯৫১ সালে গড়ে তোলা হয় আজকের বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিজেআরআই)। এখান থেকেই শুরু হয় পাট গবেষণার কাজ। এখন দেখতে হবে পাট গবেষণার উদ্দেশ্যটা কি? একটা সময় ছিল দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান খাত ছিল পাট। এখন না হয় জায়গা দখল করেছে তৈরি পোশাক শিল্প। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্প পুরোপুরি দেশীয় পণ্য দিয়ে তৈরি না। এর কাঁচামাল বিদেশ থেকে এনে আমরা সেলাই করে বিদেশে পাঠাই। অপরদিকে পাট হচ্ছে সম্পূর্ণ দেশী পণ্য। সুতরাং এই দেশী পণ্য পাট থেকে নতুন নতুন কি ধরণের পাটপণ্য তৈরি করা যায়, পাট চাষে কিভাবে উন্নতি ঘটানো যায়-এসব নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে বিজেআরআই।
বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইন্সটিটিউট পাটের দুটি ধারায় গবেষণা করে। একটি হলো পাটের কৃষিতাত্বিক গবেষণা, অর্থাৎ পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি। আরও পরিস্কার করে বলবো, কম জমিতে কিভাবে আরও উন্নতমানের বেশি পাট উৎপাদন করা যায় সে লক্ষে গবেষণা করা হচ্ছে। আরেকটি দিক হচ্ছে-প্রযুক্তিগত গবেষণা। অর্থাৎ পাটের বহুমুখী ব্যবহার কিভাবে বাড়ানো যায় আমরা সে দিকটি নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া সম্প্রতি আমরা বিজেআরআইতে গবেষণার জন্য আরেকটি শাখা খুলেছি কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশে। সেটা হলো পাটকে বাঁচাতে হলে বস্ত্রখাতে এর ব্যবহার বাড়াতে হবে। ছোট-খাট দু’চারটি ব্যাগ বা বস্তা করে পাটকে খুব বেশি দূর নেওয়া যাবে না। আমরা প্রতি বছর ৬৫ থেকে ৭০ লাখ বেল তুলা আমদানি করি। আমাদের দেশে মাত্র ১ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়। এভাবে তুলা আমদানি করে সুতা উৎপাদনে আমরা প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করি। অথচ তুলা আমদানি কমিয়ে সেখানে যদি আমরা পাটের সুতা ব্যবহার করি তাহলে দেশের পাট শিল্প এগিয়ে যাবে।

দেশের সর্ববৃহত খাত তৈরি পোশাক শিল্পে আমরা পাটের সুতা ব্যবহার বাড়াতে পারি। প্রাথমিকভাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পাটের সুতা ব্যবহার করে পোশাক বানানো যেতে পারে। এজন্য আমরা জুট টেক্সটাইল নামে আরেকটি গবেষণা শাখা খুলেছি।
আমরা যদি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি’র লক্ষ অর্জন কারতে চায় তাহলে বর্তমানে পাটের যে উৎপাদনশীলতা রয়েছে তা দ্বিগুন করতে হবে। যদি এখন প্রতি হেক্টওে ২ টন পাট উৎপান হয় তাহলে সেটা ৪ টনে নিতে হবে। এই লক্ষে আমরা কিভাবে পৌছাবে তার জন্যও আমরা গবেষণা করছি।
এর পরের বিষয় হলো-এই পাটের উৎপাদন আমরা দ্বিগুন করবো, তাহলে বাড়তি পাট আমরা কোথায় ব্যবহার করবো। কোন কোন খাতে পাটের ব্যবহার বাড়ানো যায় সে লক্ষ্যেও আমরা গবেষণা করছি। যেমন আমরা জুটজিও টেক্সটাইল নিয়ে কাজ করছি। রাস্তা-ঘাট নির্মাণে, বাঁধ নির্মাণে জুটজিও টেক্সটাইল ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা বিদেশ থেকে সিনথেটিক টেক্সটাইল আমদানি করছি। যা পরিবেশের জন্য খুবই খারাপ। পাটের ব্যবহার বাড়ানো গেলে এগুলো আর আমদানি করা লাগবে না। তাছাড়া পাট থেকে আমরা কম্পোজিট তৈরির কাজ করছি। এভাবে আমরা পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছি।
একুশে টিভি অনলাইন: উপকূলীয় লোনা পানিতে পাট চাষ করার বিষয়ে গবেষণা করছে বিজেআরআই। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি?
মনজুরুল আলম : সাধারণত লবণাক্ত পানিতে পাট চাষ হয় না। কিন্তু বিজেআরআই ‘দেশি পাট-৮’ নামে নতুন একটি পাটের জাত উদ্ভাবন করেছে-যা লোনা পানিতে চাষের উপযোগী। এ পাট মধ্যম লবনাক্ত মাটিতে চাষ করা যাবে। তবে তীব্র লবনাক্ত পানিতে চাষ করা যাবে না। লবনাক্তের পরিমাণ ৯ ডিএস পার মিটারের নিচে থাকলে সেখানে পাট চাষ করা যাবে। গত তিন বছর ধরে দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার জেলায় বিজেআরআই পরীক্ষামূলকভাবে পাট চাষ শুরু হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটসহ ১০টি উপকূলীয় জেলায় এই পাট চাষ চলছে। ওইসব এলাকার জমি এক ফসলি। কেবল আমন ধান চাষ হয়। এখন আমন ধানের পাশাপাশি পাটও চাষ হবে ওই এলাকায়। ইতোমধ্যেই আমরা উপকূলীয় ওইসব এলাকায় পাট চাষে সফল হয়েছি এবং পাটের উৎপানও সাধারণ জমির মতোই হচ্ছে। আরও লবণাক্ত জমিতে অর্থাৎ ১৩-১৪ ডিএস পার মিটার লবনাক্ততা পর্যন্ত জমিতেও কিভাবে পাট চাষ করা যায় আমরা তারও গবেষণা করছি।
একুশে টিভি অনলাইন : উপকূলীয় এলাকার জমিতে চাষ করা পাটে উৎপাদন কেমন এবং পাটের আঁশের মান কেমন ?
মনজুরুল আলম : মজার বিষয় হচ্ছে সাধারণ জমির তুলনায় উপকূলীয় এলাকার লোনা পানিতে চাষ করা পাটের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। এর কারণ ওই এলাকার জমি কিন্তু ভার্জিন। অর্থাৎ ওই জমিতে বেশি চাষ হয় না-এ কারণে মাটিতে উর্বরশীলতা বেশি। আর এজন্য পাটের উৎপাদনও বেশি। পাটের আঁশও অন্য সাধারণ জমিতে উৎপাদিত পাটের মতোই উৎকৃষ্ট। তাই উপকূলীয় এলাকায় আরও বেশি করে কিভাবে পাট চাষ করা যায় সেজন্য কাজ করছি এবং ওই এলাকার কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। যাতে তারা সব কিছু শিখে নিজেরাই লোনা জমিতে পাট চাষ করতে পারে।
একুশে টিভি অনলাইন : দেশের পাট ও পাট শিল্পের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন আপনি ?
মনজুরুল আলম : আসলে পাট খাতকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য নব বিপ্লবের সূচনা হয়েছে। এজন্য বন্ধ পাটকলগুলো চালু হচ্ছে, পাটের উৎপাদন বাড়ছে, পাটের ব্যবহার বাড়ছে-এভাবে সারাদেশে এখন পাটের জয় জয়কার। তারই অংশ হিসাবে গত দুই বছর থেকে সরকার দেশে জাতীয় পাট দিবস পালন করছে। আমি মনে করি দেশের পাট তথা সোনালী আঁশের সোনালী দিন আবার ফিরে আসছে। এভাবে যদি এগিয়ে যায় তাহলে সেদিন আর বেশি দূরে নেই, আবার পাট ও পাটপণ্যই হবে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান উৎস। 
একুশে টিভি অনলাইন : আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মনজুরুল আলম : আপনাকেও ধন্যবাদ। একুশে পরিবারের প্রতি শুভ কামনা।

/এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি