কাপ্তাই হ্রদে মাছের খনি
প্রকাশিত : ১৬:০৪, ১৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৬:৩৭, ১৭ মে ২০১৯
এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। ষাটের দশকে প্রমত্তা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গিয়ে যে সুবিশাল জলাশয় তৈরি হয়েছে, কালের পরিক্রমায় সেটিই এখন কাপ্তাই হ্রদ।
দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটিকে সাপের মতো ঘিরে রাখা এ হ্রদের তীরবর্তী জীবন, পাহাড় আর প্রকৃতি পার্বত্য শহর রাঙামাটিকে অরণ্যসুন্দরী নামেই বিখ্যাত করেছে সর্বত্র। শুধু তাই নয়, এ হ্রদ এখন পার্বত্য জনপদের মানুষের জীবন আর জীবিকার অংশই বটে!
পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর আয়তনের এ লেকটি মূলত তৈরি হলেও মৎস্য উৎপাদন, কৃষিজ উৎপাদন, পানিপথে যাতায়াত, ফলজ ও বনজ দ্রব্য দুর্গম পথে পরিবহন, জেলে, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে মৎস্য সেক্টরে কাপ্তাই লেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
লেকটিতে দেশীয় মৎস্য প্রজাতির এক বৈচিত্র্যময় ও সমৃদ্ধশীল পানিভাণ্ডার। গবেষণার সর্বশেষ তথ্য মোতাবেক এ লেকে ২ প্রজাতির চিংড়ি, ১ প্রজাতির ডলফিন, ২ প্রজাতির কচ্ছপ ও ৭৮ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৬৮ প্রজাতির মাছ হচ্ছে দেশীয়, আর বাকি ১০টি বিদেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট এ লেকের উৎপাদনশীলতা, মৎস্য প্রজাতি বিন্যাস, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং লেকে মৎস্য চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৮০’র দশকের শেষার্ধ্ব থেকে গবেষণা পরিচালনা করে আসছে।
ফলে হ্রদটিতে মাছের উৎপানের সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রজনন শক্তি। তাই ২০১৮-১৯ সালের অর্থবছরে রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের রাজস্ব আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যা অন্যান্য বছরগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ।
এমন উৎপাদন অব্যাহত রাখতে প্রতিবছরের মতো এবারো হ্রদে সব ধরণের মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য আসছে পহেলা মে থেকে তিন মাস মাছ ধরা, বাজারজাতকরণ ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ হ্রদে মাছ ধরা জেলেদের ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞার সময়ে মোবাইল কোর্টের পাশাপাশি নৌ-পুলিশ মনিটরিং করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫-৬৬ অর্থ বছরে মাত্র ১২০৬.৬৩ মে. টন মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদে বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য উৎপাদন শুরু হয়। কালের পরিবর্তন ও ড্রেজিংয়ের অভাবে হ্রদ থেকে বেশকিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেলেও কমেনি উৎপাদন।
বর্তমানে ৪২টি প্রজাতির মাছ এ লেক থেকে বাণিজ্যিকভাবে আহরিত হচ্ছে । এদের মধ্যে চাপিলা, তেলাপিয়া, কেচকি, মলা, কাটা মইল্যা, বাটা, ফলি, আইড়, গজার, শোল ইত্যাদি অন্যতম। অবশিষ্টি প্রজাতিগুলোর বাণিজ্যিক গুরুত্ব না থাকলেও জীবতাত্ত্বিক গুণাগুণ ও অন্যান্য দিক বিবেচনায় লেকে সামগ্রিক মৎস্যকুলের অবস্থানে এদেরও ভূমিকা রয়েছে।
কিন্তু সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, কাপ্তাই হ্রদে চাপিলা ও কাচকি জাতীয় ছোট মাছ কার্প জাতীয় মাছের ধ্বংসের কারণ। এই কারণে দিন দিন কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্ত কার্প জাতীয় মাছের আবারও ফিরিয়ে আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তবে যাইহোক, পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪-১৫ সালে ৮৬৪৪ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ সালে ৯৫৮৯ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এছাড়া ২০১৬-১৭ সালে ৯৯৭৪ মে. টন মাছ আহরণের বিপরীতে রাজস্ব আয় হয়েছে ১২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল ১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মৎস্য আহরণ হয় রেকর্ড ১০ হাজার ৫৮৭ মে. টন। বর্তমনে এ আয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায়। যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় কাপ্তাই হ্রদে সর্বোচ্চ আয়।
মৎস্য উৎপাদন আরও বৃদ্ধির নিমিত্ত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন সম্পর্কীয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। লেকের মৎস্যকুলের প্রজাতি বিন্যাস বিগত চার দশকের ব্যবধানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।
আরও পড়ুন