ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

যে শহরে আলো পেতে পাহাড়ের উপর আয়না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২২, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

এমনিতেই প্রাকৃতিক অবস্থানের জন্য গোটা দেশেই সূর্যের আলো কম ঢোকে। উপত্যকা-শহর জুকনের আবার চার দিক পাহাড়ে ঘেরা। ফলে শীতকালে যে টুকু আলো বরাদ্দ ছিল, বিশাল বিশাল পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে তা আটকে যেত পাহাড়ের শীর্ষেই।

শীতকালে আলোর সন্ধান পেতে কেব্‌ল কারে করে পর্বতে চড়তে হত বাসিন্দাদের। আর ভাবনাটা সেখানেই।

মার্টিন অ্যান্ডারসন নামে এক ব্যক্তি বছর দশেক আগে বললেন এক পুরনো ভাবনার কথা। আলো মাখতে পাহাড়ে না চড়ে যদি আলোকেই নিজেদের দিকে ঘোরানো যায়? যদি কোনওভাবে সূর্যের আলোকেই প্রতিফলিত করা যায় জুকনের দিকে?

নিজের হাতে স্যাম তৈরি করেন গোটা শহর। জলপ্রপাতের শক্তি থেকে বিদ্যুৎ তৈরি করে সার উৎপাদন করে বাইরের দুনিয়ায় পৌঁছে দিতেন এই ব্যবসায়ী। জনমানবহীন উপত্যকা দুনিয়ার কাছে জুকন পরিচিতি পায় সেই সময়েই। তবে আলো-আঁধারি থেকে মুক্তির বন্দোবস্ত অবশ্য করে যেতে পারেননি তিনি। তা করলেন মার্টিন।

মার্টিনের ভাবনাতেই উঁচু পাহাড়ের বাধা টপকে শীতকালেও জুকন পেল সূর্যের আলো। তবে সরাসরি নয়, প্রতিফলিত হয়ে। সে জন্য প্রায় ১৫ মিটার বা ৫০ ফুট দীর্ঘ তিনটি আয়না তৈরি করা হল। হেলিকপ্টারে করে সেগুলোকে বসানো হল জুকন-সংলগ্ন পর্বতের গায়ে। ২০১৩ সালের অক্টোবরের শেষেই চালু হয় এই প্রক্রিয়া।

‘উদ্ভট’ এই ভাবনার সঙ্গী জোটেনি প্রথম দিকে। প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রতি পদে। হাল ছাড়েননি মার্টিন অ্যান্ডারসন। ৪০০ মিটার উঁচু পাহাড় চুড়ায় স্বপ্নের আয়না বসিয়েই ছেড়েছেন। সূর্য যে দিকে ঢলবে, ১০ সেকেন্ড অন্তর শার্সিগুলোও বেঁকে যাচ্ছে সেই অনুযায়ী। আর পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করছে কম্পিউটার।

মার্টিনের উদ্দেশ্য ছিল একটাই। ওই উচ্চতায় শীতকালে অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত যত টুকু সূর্যের আলো আসে, তা যেন আয়নাগুলোতে প্রতিফলিত হয়ে জুকনে এসে পৌঁছয়। শীতকালেও যেন সূর্যের উষ্ণতায় ঝকঝক করে ওঠে জুকন।

আর এই জায়ান্ট মিরর বসানোর পরে এই শহরের নেমেছে পর্যটকদের ঢল। শুধু একটু রোদ্দুরের জন্য এ রকম উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষ থেকে পর্যটকদের মধ্যেও।

মনোবিদদের দাবি, গা-হাত-পা আলোয় সেঁকাই কেবল নয়, মনের জন্যও দরকার হয় উষ্ণতার ছোঁয়া। নিকষ কালো অন্ধকারের সঙ্গে মন খারাপের সম্পর্ক মেনে নেন মনস্তত্ত্ববিদেরাও। তাই আয়না বসিয়ে আলো আসায় এই শহরের মানুষদের মনমেজাজও এখন আগের থেকে নাকি অনেক বেশি ভাল।

আয়না বসিয়ে প্রায় এই শহরে যে রোদ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে তার জন্য খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা৷

আমেরিকার অ্যারিজোনাতে প্রতিফলক কাচ ব্যবহার করে সূর্যের আলোর সাহায্যে ঘাস গজানোর পদ্ধতির কথা জেনেই নাকি আরও বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন মার্টিন।

সূত্র: জিনিউজ

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি