ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২১ নভেম্বর ২০২৪

একজন সফল ‘দইওয়ালা’ নাজির উদ্দিন

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

প্রকাশিত : ২০:০৮, ১২ ডিসেম্বর ২০২০ | আপডেট: ২০:১০, ১২ ডিসেম্বর ২০২০

‘দইওয়ালা’ নাজির উদ্দিন পারভেজ

‘দইওয়ালা’ নাজির উদ্দিন পারভেজ

'বিশুদ্ধতাই লক্ষ্য, তুষ্টিই তৃপ্তি' -এই শ্লোগানেই চলছে ‘দইওয়ালা’ নাজির উদ্দিন পারভেজের অনলাইন ব্যবসা। বিশ্বজুড়ে মহামারী করোনাকালীন সময়ে মাত্র ৮ হাজার টাকায় দই নিয়ে ‘দইওয়ালা’ নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে অনলাইন ব্যবসা শুরু করে গত ৯ মাসে তার বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখেরও অধিক টাকা।

নাজির উদ্দিন পারভেজ, জন্ম ও বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলায় সন্তোষপুর গ্রামে। ২০০২ সালে সন্তোষপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। চট্টগ্রাম মিরসরাই ডিগ্রি কলেজ ও সরকারি কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি শেষ করে ঢাকায় চলে আসেন। বর্তমানে পরিবার নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকেন। পরিবারে দুই সন্তান ও স্ত্রী রয়েছে। বাবা মা ও ছোট ভাই পরিবারসহ গ্রামে থাকেন।

২০০৯ সালে কর্মজীবন শুরু করেন নাজির উদ্দিন। সেই সঙ্গে চাকুরীরত অবস্থায় সরকারি বাংলা কলেজ, ঢাকা থেকে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করেন। চাকুরী জীবনে অধিকাংশ সময় নিউটেক্স ডায়িং এন্ড প্রিন্টিং লিমিটেড-এ কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিথি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডে চাকুরী করেন তিনি। দুই প্রতিষ্ঠানে ১০ বছর চাকুরী করেন কমার্সিয়াল ম্যানেজার পদে।

বেসরকারি চাকুরীতে স্বাধীনতার অভাব এবং কাজের মূল্যায়ন না পাওয়া থেকেই দীর্ঘ দশ বছরের চাকুরি জীবন ছেড়ে নিজের মতো করে কাজ করার চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন নাজির। সেই ভাবনা থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে “দইওয়ালা” নামে ডোমেইন কিনে এবং ই-কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন।

নাজির উদ্দিন বলেন, 'বেসরকারি চাকুরির সঠিক কাজের মূল্যায়ন সবসময় থাকে না। একটানা গতাণুগতিক কাজ করে হাপিয়ে উঠেছিলাম। জিদ করে চাকুরি ছেড়ে দিয়ে সিদ্ধান্ত নিই বিদেশ চলে যাবার। তখন ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। ইংরেজি শেখার উদ্দেশ্য নিয়ে ই-ক্যাব (ই- কমার্স এসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ)-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান “সার্চ ইংলিশ” গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার-এর সার্চ ইংলিশ অনলাইন ওয়ার্কশপে যোগদান করি। সেখান থেকেই মূলত ই-কমার্স নিয়ে জানার আগ্রহ তৈরি হয়।  

রাজিব আহমেদ স্যারের মাধ্যমে “ফেসবুক গ্রুপ উই (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স) এ যোগদান করি এবং পোস্ট, কমেন্ট, অফলাইন ইভেন্ট এবং অনলাইন ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরিচিত করে তুলি নিজেকে। ব্যবসা নিয়ে জানতে যোগদান করি ডিএসবি (ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ) ফেসবুক গ্রুপের অনলাইন কর্মশালায়। 

মাছ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ থাকলেও রাজিব আহমেদ স্যার-এর পরামর্শে কাজ শুরু করি দেশের বিভিন্ন জেলার দই নিয়ে। ৪ জানুয়ারি ২০২০-এর দিকে উই গ্রুপের অফলাইন মিট আপে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রবিন ভাই-এর সংবর্ধনায় ৮০ জনকে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী স্পেশাল মিষ্টি দই-এর কাপ দই খাওয়ানোর সুযোগ হয়। তখন থেকে নিজের নামের সঙ্গে দইওয়ালা ব্র্যান্ড যুক্ত হয় এবং সবাই দইওয়ালা ভাই নামে ডাকে। ফেসবুকে দই বা Doi লিখে সার্চ দিলে প্রথম যে পেইজটা আসে সেটা দইওয়ালা পেইজ।"

তিনি আরও বলেন, আমার পেজের সিগনেচার পণ্য ডায়বেটিস রোগিদের জন্য এবং যারা কম মিষ্টি পছন্দ করেন তাদের জন্য আর্দশ দই। এছাড়াও রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলার দই ও মিষ্টান্ন। দইওয়ালা পেজের সোর্সিংকৃত কারখানা পণ্যগুলো বিএসটিআই অনুমোদিত ও কারখানা আইএসও সার্টিফিকেট প্রাপ্ত। বর্তমানে দইওয়ালা পেইজে সবচেয়ে জনপ্রিয় দই মেজবান দই বা মাঝারি মিষ্টি দই এবং মিক্স সন্দেশ বা কম্বো সন্দেশ। দইওয়ালা পেইজে বর্তমানে ক্রেতা ১২শ-র উপরে। পুন:রায় কিনেছেন এরকম ক্রেতা রয়েছে আড়াইশর উপরে। মোট দই বিক্রি ৪ হাজার সরা (মাটির তৈরি পাত্র), মিষ্টি বিক্রি প্রায় ১০০ কেজি এবং মিক্স সন্দেশ বিক্রি হয়েছে ৯০ কেজির উপরে। 

‘দইওয়ালা’নাজির উদ্দিন পারভেজের সঙ্গে লেখক

‘আমি মনে করি যতটুকু পরিশ্রম করব দিন শেষে ততটুকুই আমার ঝুড়িতে আসবে। আগে কাজ করতাম কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে, এখন আমার কোম্পানির প্রতিনিধি আমি নিজেই। নিজ উদ্যোগে কাজ করে দিন শেষে আমি আত্মতৃপ্তি পাই। আর এখান থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বাদ পেয়েছি যা আমার চাকুরি জীবনে আমি কোনওদিন পাইনি। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে নাজির উদ্দিন বলেন, বর্তমানে আমার কোম্পানির ডোমেইন, লোগো, ব্যাগ, মানি রিসিট, ভিজিটিং কার্ড, বিকাশ মার্চেন্ট নাম্বার ও ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। আমি আমার পণ্য দেশের প্রতিটি বিভাগে পৌঁছে দিতে চাই। ভবিষ্যতে আমার নিজেস্ব ফ্যাক্টরিতে দই উৎপন্ন হবে। সফল স্টার্ট-আপ কোম্পানি হিসেবে নিজের প্রতিষ্টানকে দাঁড় করাবো সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি’। 

'দইওয়ালা' পেজের ক্রেতা মনিকা আহমেদ বলেন, ‘আমি নাজির ভাইকে চিনি ফেসবুক গ্রুপ উইতে (উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম) জয়েন করার কিছুদিন পর থেকেই। নাজির একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। উই থেকে আয়োজিত চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইভেন্টগুলোতে তিনি কাজের ফাঁকে আসতেন এবং আমাদের সাথে গল্প করতেন। এভাবে আস্তে আস্তে তিনি সকলের পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। 

তিনি আরও বলেন, অনেক মানুষ যখন নাজির ভাইকে চিনতে শুরু করলেন তখন তিনি একটা সময় চাকরি ছেড়ে দিয়ে উদ্যেক্তা হতে চাইলেন এবং হয়ে উঠলেন আমাদের দইওয়ালা ভাই। এক্ষেত্রে আমি বলবো- তিনি কিন্তু হুট করেই তাঁর উদ্যোগ শুরু করেননি। প্রথমে তিনি নিজেকে সকলের কাছে পরিচিত করেছেন। নিজের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং-এর ভিত্তি শক্ত করেছেন ও পরে তিনি একটি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এতে করে কিন্তু তিনি অন্য দশজন মানুষ থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন। আমরা তাঁকে চিনি এবং জানি বলে দইয়ের প্রয়োজন হলে প্রথমেই নাজির ভাইয়ের কথা মাথায় আসে। আমি নিজেও তার দইয়ের রিপিট কাস্টমার।

মনিকা আহমেদ আরও বলেন, নাজির ভাইয়ের দইয়ের কথা বলতে গেলে বলবো- এক কথায় অসাধারণ। একমাত্র বগুড়া গেলে এতো মজার দই আমরা খেতে পারি। কিন্তু এখন যখন তখন বগুড়ার মজাদার বিখ্যাত দই খেতে ইচ্ছে করলেই নির্দিধায় নাজির ভাইয়ের কাছে অর্ডার করি। অন্য কোনও অপশন খুঁজি না। আমি সবসময় নাজির ভাইয়ের সফলতা কামনা করি।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি