ঢাকা, সোমবার   ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

চ্যালেঞ্জের মুখে নারী উদ্যোক্তারা

ফারুক আহমেদ চৌধুরী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ 

প্রকাশিত : ১৬:৩০, ১১ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ২১:৫৫, ১৪ জুলাই ২০২১

বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধের সীমাবদ্ধতায় বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো স্বনির্ভরতার পথে চলা নারী উদ্যোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে থমকে গেছে নারী উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্যের বেচাকেনা। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে যেসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসা করতেন তারা এখন চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছেন। আর্থিক সংকট তাদের এগিয়ে চলার গতিকে টেনে ধরছে।

উদ্যোক্তা জানিয়েছেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাবটা সবচেয়ে বেশি পড়েছে নারী উদ্যোক্তাদের উপর। যারা হস্তশিল্পের মাধ্যমে সৌখিন পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি নিজেদের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে ধরে নিয়ে কাজ করতেন তাদের অবস্থা আরও খারাপ। একই সঙ্গে এসব হস্তশিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত কর্মচারীদের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সংকটময় এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার ব্যাপারেও রীতিমতো সন্দিহান নারী উদ্যোক্তারা। করোনার প্রভাবে স্বনির্ভরতার পথে চলা নারী উদ্যোক্তাদের চোখে অমাবস্যার অন্ধকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গছে, করোনার প্রভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারী উদ্যোক্তার গভীর সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। সরকারি নির্দশনায় বন্ধ শো-রুম। মজুরি দিতে না পারায় নকশি কাঁথার উৎপাদনও বন্ধ। আবার কেউ কেউ সীমিত পরিসরে উৎপাদন করলেও তা বাজারজাত করা নিয়ে পড়ছেন বিপাকে। ফলে এ জেলার নারী উদ্যোক্তারা আর্থিক সংকটে পড়েছেন। অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করে দু-একজন টিকে থাকার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এ লড়াইয়ে কতটা সফল হবেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে হতাশ হয়ে পড়বেন ক্ষুদ্র নারী উদ্যেক্তারা এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একাধিক নারী উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সফল নারী উদ্যোক্তা তাহারিমা বেগম। নকশীকাঁথা তৈরি করে নিজেকে ও দেশকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখেন এই ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তা। তিনি সপ্তম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা ২০১৯-এ নারী ক্যাটেগরিতে বর্ষসেরা মাইক্রো উদ্যোক্তা মনোনীত হন। দেশসেরা এ নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘নূর নকশী’। পরিবারের সহযোগিতায় ৩৫ বছর ধরে তিনি এ পথ চলছেন। নকশিকাঁথা, হোম ডেকর, হ্যান্ডিক্রাফট ও নকশি ব্যাগ, নকশি চাদর, কুশন কভারসহ বিভিন্ন আধুনিক পণ্য নিয়ে ‘নূর নকশী’ পৌঁছে গেছে আন্তর্জাতিক বাজারেও।

করোনাকালীন সময়ে সার্বিক বিষয়ে জানতে নারী উদ্যোক্তা তাহরিমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারি ঘোষণায় তালাবদ্ধ শো-রুম। প্রতিষ্ঠানটিতে উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১২ শতাধিক নারীর ভবিষ্যত। নকশীকাঁথার উৎপাদন বন্ধ থাকায় গভীর সংকটে রয়েছেন নারী শ্রমিকরাও।

তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে স্থায়ী ১০ শ্রমিকের ৭ জনকে ছাঁটাই করতে হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। তবে সেটা খুবই সামান্য। পরিস্থিতির কারণে মোটা অঙ্কের আর্থিক হচ্ছে। করোনা সংকট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত কতদূর যেতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলছিলেন তাহরিমা বেগম।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আরেক সফল নারী উদ্যোক্তার নাম রেজিনা আনোয়ার। ‘আদিবা বুটিক্স এন্ড টেইলার্স’ নামে প্রতিষ্ঠান খুলে ব্যবসা করেছেন তিনি। ব্যাংক ঋণ নিয়ে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন এ ব্যবসায়। করোনা মহামারির কারণে সরকারি ঘোষণায় বন্ধ রাখতে হয়েছে শো-রুম। বিক্রি না থাকায় উৎপাদনও বন্ধ করতে হয়েছে। ফলে তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা ৩ শতাধিক নারী অর্থ সংকটে রয়েছে। স্থায়ী ৪ শ্রমিকের মধ্যে ৩ জনকেই ছাঁটাই করেছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ভাড়া দোকানে শো-রুম। এখন দোকান ছেড়ে দিলে আবার নতুন করে দোকান পাওয়া কঠিন হবে। তাই বাধ্য হয়েই গুনতে হচ্ছে লোকসান। আর ঘর থেকে সেই লোকসান সামলাতে হচ্ছে। করোনা পরবর্তী সময়ে স্বল্প সুদে লোন অথবা সরকারি সহায়তা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সহজ হবেনা বলে জানান রেজিনা আনোয়ার।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি