‘তুলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হবে দেশ’
প্রকাশিত : ১২:৩০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু তুলা চাষের জন্য উপযোগী। সমভূমিসহ বিভিন্ন এলাকায় তুলা চাষ ও উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সম্প্রতি হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের তুলাচাষ প্রবর্তনের ফলে ফলন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে তুলা গবেষণা, এর সম্প্রসারণ, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, প্রশিক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও জিনিং এবং ঋণ বিতরণ প্রভৃতি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার। এর সঙ্গে সবেসরকারি সংস্থাসহ সবার সস্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে একসময় তুলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হবে বাংলাদেশ। এমন প্রত্যাশার কথাই জানালেন বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসোসিয়েশনের সভাপতি মেহ্দী আলী।
তুলা উৎপাদন ও ব্যবহার এবং সদ্য শেষ হওয়া আন্তর্জাতিক কটন সামিট নিয়ে সোমবার তিনি একুশে টিভি অনলাইনের মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন একুশে টিভি অনলাইন প্রতিবেদক তবিবুর রহমান।
একুশে টিভি অনলাইন : বিশ্বের এক নম্বর তুলা আমদানিককরন দেশ বাংলাদেশ। গার্মেন্টস কারখানাগুলো চাহিদা মেটাতে ৭৯ শতাংশ তুলা বিদেশ দেশ থেকে আনতে হচ্ছে। এর কারণ কি?
মেহ্দী আলী: তুলা উৎপদনের জন্য প্রচুর পরিমাণ জমির প্রয়োজন। সে তুলনায় দেশে তুলা চাষের উপযোগী জমির সংকট রয়েছে। আমাদের মাত্র ৫৬ থেকে ৬০ হাজার বর্গমাইল জমি আছে আবাদ উপযোগী। তুলা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ তুলা উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করছে। আমাদের বর্তমান তুলা উৎোদন চাহিদার মাত্র তিন শতাংশ। সরকার যদি আন্তরিক হয় এটা এখনই ১০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব। এমনকি একসময় তুলা উৎপাদনে সয়ংসম্পন্ন হবে দেশ।
একুশে টিভি অনলাইন: তুলা উৎপাদন বাড়াতে সরকারী পদক্ষেপ আছে কি না ?
মেহ্দী আলী: গত তিন বছর আগে তুলা উৎপদন বাড়তে এ খাতে কোনো ধরনের বরাদ্দ ছিল না। এখন সরকার ১শ’ ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
যে জমিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না সেগুলোতে তুলা চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের মাঝখানে ফাঁকা জায়গাতেও তুলা চাষ করা যেতে পারে। এতে একদিকে রাস্তার পাশে প্রাকৃতির শ্রী বৃদ্ধি পাবে। সবুজ পরিবেশ থেকে দম নেওয়ার সুযোগ পাবেন যাতায়াতকারী। অন্যদিকে তুলা উৎপাদনও বাড়বে। তুলা উৎপাদনে পাহাড়কেও আমরা ব্যবহার করতে পারি। ইতোমধ্যে রাজশাহী আমের বাগানের মধ্যেই তুলা চাষ হচ্ছে। এভাবে জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে তুলা উৎপাদনের আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। তুলা উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন হবে দেশ।
একুশে টিভি অনলাইন: তুলা উৎপাদনে আমাদের কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছে না কেন?
মেহ্দী আলী: আমি আপনার এই প্রশ্নের সঙ্গে একমত নই । কারণ যারা ইতোমধ্যে তুলা চাষ করছে তারা আরও বেশি তুলা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেক এলাকার কৃষকরা মিলে এলাকার সবজমিতে তুলা উৎপদন করছে। এছাড়া অনেক কৃষক জানে না তুলা উৎপদন অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ সম্মত। তুলা চাষাবাদে কৃষকের উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও নাটিকা দেখানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া তুলা চাষের আগ্রহী করার জন্য বিভিন্ন সময় সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নিয়ে পারে সরকার।
একুশে টিভি অনলাইন: কোন কোন এলাকায় তুলা চাষ ভাল হয় ?
মেহ্দী আলী: আমাদের দেশের প্রায় সব জায়গায় তুলা চাষের উপযোগী। আমাদের দেশের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি। দেশের সব স্থানের তুলা চাষা করা সম্ভব। শুধু লক্ষ রাখতে হবে যেন সেচের ব্যবস্থা থাকে।
একুশে টিভি অনলাইন: তুলা আমদানিতে প্রতিবন্ধকতা দূর ও উৎপাদক দেশের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে সরকারের কোনো প্রদক্ষেপ আছে বলে মনে করেন কি না?
মেহ্দী আলী: তুলা আমদানি করতে আমাদের দেশের অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই প্রতিকন্ধকতা দূর করতে কাজ করছে সরকার। এছাড়া আমাদের দেশের প্রতিটি বায়ারকে সচেতন হওয়া উচিত। তুলা আমাদানির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে আমাদের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগছে। আমার মনে হয় কিছু সমন্বয়ের অভাব আছে। এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমাদের বায়ারসহ এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কন্ট্রোলারকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে স্টেক হোল্ডারদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ যাদের দ্বারা তুলা আমদানি করা হয় তারা শিক্ষিত করা হলে অনেক প্রতিবন্ধকতা এমনিতেই কমে যাবে। তুলাকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতায় আনতে হবে ।
টিআর / এআর /
আরও পড়ুন