উন্নয়নশীল দেশের তকমায় লাভ কী বাংলাদেশের?
প্রকাশিত : ২৩:৩৯, ১৭ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১২:২৬, ১৮ মার্চ ২০১৮
স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা তেমনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রফতানি আয়, বৈদেশিক ঋণ ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
রফতানি আয়: দেশের রফতানি আয়ে তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে বড় ধরণের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা কমে যাওয়ার প্রভাব সবচেয়ে বেশী পড়বে পোশাক শিল্পের ওপর। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশ থেকে পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাজার হওয়ায় ঐ অঞ্চলের সাথে বাণিজ্যের শর্তাবলী পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের গবেষক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সুবিধা কমে যাওয়াটাই হবে বাংলাদেশের সামনে প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গ্রার্মেন্টস ছাড়াও আরো অনেক রফতানি পণ্য তৈরি করতে হবে। শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে।
উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রফতানিতে শুল্ক সংযোজনের পাশাপাশি দেশের শিল্প কারখানায় শ্রমিক অধিকার ও মানবাধিকারের মত বিষয়গুলোতে আরো স্বচ্ছতা দাবী করবে আমাদানিকারকরা। সেক্ষেত্রে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস মালিক সমিতি বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এসব প্রতিবন্ধকতা সহজেই পার করতে পারবে বাংলাদেশ। ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, বন্দরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি, সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুষ্ঠ ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি খাতের নিশ্চয়তা পেলে অন্য উন্নয়নশীল দেশের মত বাংলাদেশও প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে পারবে।
বৈদেশিক ঋণ: উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে আগের মত সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য পাবে না বাংলাদেশ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হলে বাংলাদেশ আগের মত রেয়াতি সুদে ঋণ পাবে না। বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে একটি মিশ্র অর্থায়নে যেতে হবে যেখানে উচ্চ সুদে বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। তবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভাবমূর্তি উন্নয়নের ফলে বৈদেশিক ঋণ পাওয়া সুবিধাজনক হতে পারে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ মসৃণ ও টেকসই করতে দেশের অভ্যন্তরীন সুশাসন ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ: উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরো উৎসাহী হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, যেসব দেশ এখন পর্যন্ত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধির হার, বৈদেশিক সাহায্য ও বৈদেশিক আয় কমেছে। তবে প্রায় প্রত্যেক দেশের ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে।
একটি দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ার সুযোগ তৈরী হয়। তবে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় সঞ্চয়ের চেয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ আয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) সৃষ্টি হয়। যার ফলে বৈদেশিক আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তিনি বলেন, প্রত্যক্ষ্য বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভাবনা কতটা আছে তা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে শুধু উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতিই যথেষ্ট হবে না।
একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, পরিবেশ ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার বাস্তবায়ন,আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোতে অংশগ্রহণের মাত্রা ও দীর্ঘমেয়াদে সুশাসন টিকে থাকার সম্ভাবনার ওপর প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ নির্ভর করে।
মাথাপিছু জাতীয় আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈথিক ভঙ্গুরতা- এই তিনটি সূচকে বিচার করা হয় একটি দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল ধাপে উত্তরণ করবে কি না। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে হলে অন্তত দু`টি সূচক পূরণ করতে হয় একটি দেশকে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশই প্রথম দেশ হিসেবে তিনটি সূচকের সবকটি পূরণ করে পরবর্তী ধাপে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে একদফা পর্যবেক্ষণের পর ২০২৪ এ জাতিসংঘের সাধারণ সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ। সূত্র: বিবিসি
আর
আরও পড়ুন