প্রতিবন্ধকতার পরও উন্নতি হচ্ছে বিমান ও পর্যটন খাতে
প্রকাশিত : ২৩:০৪, ১৯ মার্চ ২০১৮
প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এখনও পিছিয়ে আছে দেশের বিমান ও পর্যটন খাত। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে ধীর গতিতে হলেও দেশের বিমান ও পর্যটন খাত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গত পাঁচ বছরের তথ্য থেকে এমনটাই দাবি খাত সংশ্লিষ্টদের।
ভ্রমণ বিষয়ক পাক্ষিক দি বাংলাদেশ মনিটরের এক হিসেব মতে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে বিমানযোগে প্রায় ৫২ লাখেরও বেশি মানুষ যাতায়াত করেন। ২০১৭ সালে এই সংখ্যা হয় প্রায় ৬৪ লাখ। অর্থাৎ এই ৫ বছরে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে নতুন যাত্রী যুক্ত হয় প্রায় সাড়ে ১১ লাখ জন (প্রায় ২২ দশমিক ১০ শতাংশ)।
আর ডমেস্টিক ফ্লাইটে (আভ্যন্তরীণ) ২০১৩ সালের যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৪ লাখের কিছু বেশি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৭ সালে তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ আভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের উন্নতি শতকরা ৬৪ শতাংশেরও বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের পর্যটন খাতের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি আর বিগত প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছরে দেশের পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের নতুন করে ভাবনা চিন্তার ফলেই এমন উন্নতি সম্ভব হয়েছে।
গত বছর জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের ২৯তম সম্মেলনে চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয় বাংলাদেশ। এরপর চলতি বছরের গত মাসে মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসি ভুক্ত দেশগুলোর পর্যটন মন্ত্রীদের নিয়ে এক সম্মেলনও সফলতার সাথে ঢাকায় আয়োজিত হয়।
তবে এতকিছুর পরেও দেশের পর্যটন খাত এখনও সেভাবে ‘ট্যুরিজম ফ্রেন্ডলি’ বা পর্যটন বান্ধব নয় বলেও মনে করছেন অনেকে। দেশের অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও পর্যটনের জন্য সহায়ক নয় বলে স্বীকার করেন দেশের পর্যটন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. নাসির উদ্দীন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘১৫তম ঢাকা আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলা’ সম্পর্কে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হলে এমন কথা বলেন ট্যুরিজম বোর্ডের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। ইটিভি অনলাইনকে তিনি বলেন, “বিশ্বের জরিপে সবথেকে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকা প্রথম আর যানজটের নগরী হিসেবে তৃতীয়। একটি দেশের রাজধানীর অবস্থাই যখন এমন তখন সেই দেশটির পর্যটন খাত উন্নয়নে আপনি যে প্রচার প্রচারণা চালাবেন তা কতটুকু সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়’।
এছাড়াও দেশের সড়ক এবং অন্যান্য অবকাঠামো এখনও পর্যটন সহায়ক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আজকে আপনি তামাবিল বা জাফলং যেতে চাইলে দেখবেন রাস্তা অনেক খারাপ। কক্সবাজার যাবেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অনেক জ্যাম। একজন পর্যটক যাবেন কীভাবে?”
“আর তাছাড়া আমাদের একটি সমস্যা হচ্ছে আমরা একটি নির্দিষ্ট ডেস্টিনেশনকে (একটি নির্দিষ্ট ট্যুরিস্ট স্পট) মাথায় নিয়ে পর্যটন খাতের পরিকল্পনা করি। একটি বা দুইটি এলাকা নিয়ে কীভাবে আপনি সমগ্র দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়ন করবেন? কক্সবাজারে কতজন পর্যটককে কয়বার নেওয়া যাবে? বর্ষাকালে যখন সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করে না তখন কী দেশের পর্যটন খাত ফেলে রাখবেন?
তাহলে এর সমাধান কী এমন প্রশ্নের জবাবে ড. নাসির বলেন, “আমাদের উচিত সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি পরিকল্পনা করা। এর জন্য আলাদা করে টাকার দরকার নেই। যোগাযোগ মন্ত্রনালয় যখন দেশের সড়ক বানায় তখন একটু মাথায় এমন ভাবনা রাখতেই পারেন যে কোন সড়কটি নির্মাণ করলে অথবা মেরামত করলে তা আমাদের দেশের পর্যটন খাতের উপকারে আসবে। সড়ক তো তারা নির্মাণ করবেই। তো সেই অর্থ দিয়ে যদি গুরুত্ব বুঝে পর্যটন এলাকাগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয় তাহলে এর ব্যাপক সুফল পাওয়া যাবে”।
দেশের পর্যটন খাতে পর্যটন বোর্ডের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের সূত্র ধরে তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই প্রতিটি জেলায় পর্যটকদের জন্য এমন ব্যবস্থা থাকবে যেন তারা একটি অঞ্চলে অন্তত দুই দিন সময় কাটানোর মত উপাদান খুঁজে পাবে। এরজন আমরা জেলা প্রশাসকদের এমন উদ্যোগ নিতে বলেছি”।
তিনি বলেন, “চীনের হান নদীতে সন্ধ্যার পর একটি ফোয়ারা চালু হয়। এটি দেখতেই প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে ভিড় করেন। এখন যেমন আমাদের হাতিরঝিল। এমন উদ্যোগ আরও আগে থেকে নেয়া হলে হয়তো এতদিনে আমাদের আরও কয়েকটি হাতিরঝিল থাকত”।
এদিকে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইন্সের বিপনণ এবং বিক্রয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান চিশতী ইটিভি অনলাইনকে বলেন, “আগামী আগস্ট মাসে একটি এবং নভেম্বর মাসে আরেকটি বোয়িং-৭৮৭ বিমান যুক্ত হতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশের বহরে। আমাদের বিশ্বাস এর ফলে বাংলাদেশ ভ্রমণে আসা বিদেশী পর্যটকেরা আরও বেশি আকৃষ্ট হবেন”।
দীর্ঘদিন দেশের পর্যটন এবং বিমান খাত নিয়ে কাজ করা পাক্ষিক পত্রিকা দ্য মনিটর বাংলাদেশের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, “সঠিক হিসেব না থাকলেও দেশে প্রতি বছর ১ লাখের বেশি দেশীয় পর্যটক দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনায় ভ্রমণ করেন। অন্যদিকে সাত লাখেরও বেশি বিদেশী নাগরিক আমাদের দেশে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভ্রমণে আসেন। এদের মধ্যে অন্তত তিন লক্ষ পর্যটক শুধুমাত্র পর্যটন স্থাপনাগুলো ভ্রমণে আসেন”।
পর্যটন খাতের উন্নয়নে গণমাধ্যমের ভূমিকার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন এই বিশেষজ্ঞগণ। ড. মো. নাসির উদ্দীন বলেন যে, “ট্যুরিজম বোর্ডের বয়স মাত্র ৭ বছর। আর সব কাজ ট্যুরিস্ট বোর্ড একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। আর এর জন্য গণমাধ্যম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এতদিনও করে আসছে, আগামীতেও এর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের ট্যুরিজম খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব সবার”।
এর আগে দেশের ট্যুরিজম অর্থনীতির গুরুত্ব অনুধাবন করে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতায় ২০০৯ সালে চালু হয় বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বিভাগ ট্যুরিস্ট পুলিশ অথবা পর্যটক পুলিশ। দুই একটি ঘটনা ছাড়া দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় ট্যুরিস্ট পুলিশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বিশেষায়িত সেবার মাধ্যমে এ খাতের আরও উন্নয়ন সম্ভব।
আরও পড়ুন