মনীষা দিয়ে শুরু এখন সফল ব্যবসায়ী
প্রকাশিত : ১৭:৫০, ৮ জুন ২০১৮ | আপডেট: ১৪:০২, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
সৈয়দ নুরুল ইসলাম
সেশনজটে পড়ে ১৯৮৩-এর ব্যাচ ১৯৮৬ পর্যন্ত পড়ালো। ওই বছর মাস্টার্স করে বাড়ি ফিরলাম। বড় ভাইয়ের ব্যবসার কারণে পরিবারে সচ্ছালতা ফিরেছে। ছোটো বোনটারও বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট ভাইগুলোও বড় হয়ে গেছে। কেউ স্কুলে কেউ বা কলেজে পড়ছে।
আমাকে নিয়ে মা-বাবার অনেক উচ্চাশা। বড় চাকরি করব। বড় ভাইয়ের পাশে থেকে পরিবারের দায়িত্ব নেবো। এদিকে আমার মাথায় তখন কেবল ব্যবসা আর বিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে।
একদিন খাবার টেবিলে বড় ভাই জানতে চাইলেন আমার ভবিষ্যৎ প্লান কী? চাকরির চেষ্টা-তদ্বির করছি কি না। নাকি রাজনীতি আর সবুজ হোটেলের আড্ডায় দিন কাটাচ্ছি। ভাবলাম বলেই দিবো আমাকে দিয়ে চাকরি-বাকরি হবে না। আমি ব্যবসা নিয়ে ভাবছি। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করতে চাই। সাহস করে বিয়ের কথাটা বলতে পারলাম না। ব্যবসার চিন্তা করছি শুনে একটু চিন্তিত মনে হলো বড় ভাইকে।
খাবার প্লেট চোখে রেখে বললেন, ব্যবসা করবি ক্যাপিটাল কোথায় পাবি? আমার তো বাড়তি টাকা নেই।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। খাবার শেষ না করেই উঠে গেলাম। পরদিন সকালে বড় ভাইয়ের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে এলাম তার অফিসে। বড় ভাই ফোন করে তার বন্ধু মামুন সাহেবকে বললেন, নুরু ব্যবসা করতে চায়। আপনার ক্লিয়ারিং ব্যবসা শেখান ওকে সঙ্গে রেখে।
সময় সুযোগ হলে লাইসেন্স একটা করে দেব। এই প্রান্ত থেকে মামুন সাহেব কি বললেন বুঝলাম না। ফোন রেখে বড় ভাই বললেন, মানুন সাহেবের অফিসে যাও ঠিকানা লিখে দিলেন : রহমান করপোরেশন, ৫৯৯ রামজয় মহাজন লেন, খাতুনগঞ্জ। আমার ব্যবসায়িক জীবনের প্রথম ঠিকনা।
রিকশা নিয়ে চলে গেলাম রমজয় মহাজন লেন। অন্ধকার চিপা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে দেখি বড় বড় অক্ষরে লেখা সইনবোর্ড: রহমান করপোরেশন। টুকেই পেলাম মামুন সাহেবকে। বললেন, ওয়েলকাম আসো বসো। একজনকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিলে বললেন কাশেম সাহেব, আমাদের ম্যানেজার পরদিন ৯টার মধ্যে চলে এলাম অফিস। কাশেম সাহেবের সঙ্গে বেটিট্যাক্সি চেপে গেলাম কাস্টামস হাউজ। তারপর পোর্ট। ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। ব্যবসায়িক জীবনে শুরু হলো যেভাবে।
সপ্তাহ-দশ দিন কাস্টমস-পোর্টে ঘুরে সিদ্ধান্ত নিলাম ক্লিয়ারিং ব্যবসা আমাকে দিয়ে হবে না। রাতের খাবার টেবিলে কথাটা পাড়তেই বড় ভাই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন।
জানতে চাইলেন তাহলে কি করবি? বললাম ইন্ডেন্টিং ব্যবসা করবো। সাহাব উদ্দিন ভাইয়ের সূত্রে পরিচিত হারুন ভাই ঢাকায় ইন্ডেন্টিং ব্যবসা খুব ভাল করছেন। আমাকে হেপ্ল করবেন। টাকা-পয়সা তেমন লাগবে না। ছেটো একটা অফিস রুম। একটা ভালো টাইপারইটার, কিছু স্টেশনারিজ আর পোস্টল খরচের জন্য কিছু টাকা দিলেই হবে। আপনি তো আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়াকালে মাসে ৮০০ টাকা দিতেন। ওই ৮০০ টাকা আরও ৬ মাস দেন। আমি ভালো করব। এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে বড় ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে মনে খুশিতে উনার চোখ দুটো ছলছল করছে…
পরদিন সকালে মোটলসাইকেলের পেছনে বসে বড় ভাইয়ের অফিস ঘুরে খাতুনগঞ্জে। মামুন সাহেবকে বললাম, আমি কাস্টমসে যাব না আর। ক্লিয়ারিং ব্যবসা আমাকে দিয়ে হবে না। আমি ইন্ডেন্টিং নিয়ে ভাবছি। বড় ভাইও রাজি। তিনি বললেন খুব ভালো আইডিয়া। আমার পুরনো একটা ইন্ডন্টিং লাইসেন্স আছে। ওটার কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে শুরু করে দাও। জিগ্যেস করলাম নাম কি?
মনীষা ইন্টারন্যাশনাল। নামটা আমার বেশ পছন্দ হলো। বললাম, আমি আজ থেকেই শুরু করতে চাই। সেই মনীষা। আমার প্রথম কোম্পানি। যার উপরে দাড়িয়ে আমি দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ ওয়েল গ্রুপ একদূর এসেছে। আজ আমি সফল একজন ব্যবসায়ী।
চলবে…
লেখক: সৈয়দ নুরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী (ওয়েল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ)
টিআর/এসএইচ/
আরও পড়ুন