ব্যাংকের ঋণ-আমানত অনুপাত সমন্বয়ে সময় বাড়ল ৬ মাস
প্রকাশিত : ১৬:০২, ৮ মার্চ ২০১৯
ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সমন্বয়ের সময়সীমা আবার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আগের সময়সীমা অনুযায়ী ৩০ মার্চের মধ্যে এডিআর সমন্বয়ের কথা ছিল।
গত বছরের ৩০ জানুয়ারি এডিআর কমানোর নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে তা সমন্বয়ের জন্য এ নিয়ে চার দফা সময় বাড়ানো হলো।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক।
সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শুধু বেসিক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রয়েছে এ তালিকায়। আর ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত ৭টি ব্যাংকের এডিআর বেশি রয়েছে।
ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপক বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এডিআর কমিয়ে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৯ শতাংশ করা হয়।
আগে যা ৮৫ ও ৯০ শতাংশ ছিল। ব্যাংকগুলোর এডিআর নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনতে প্রথমে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এরপর আরেকটি সার্কুলারের মাধ্যমে সময় বাড়িয়ে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর করা হয়। তবে তারল্য সংকটের কথা বলে বিভিন্ন দাবিতে সরব হয় বিএবি। পরবর্তীতে সময় আরও বাড়িয়ে ৩০ মার্চ নির্ধারণ করা হয়। এখন আরেক দফা সময় বাড়ল।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে সমকালকে বলেন, বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে এডিআর সমন্বয়ে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঢিলেঢালা ভাব দেখা দেবে।
এসব ব্যাংক মনে করবে, আগামী সেপ্টেম্বরে ঋণ সমন্বয় করতে না পারলেও কোনো সমস্যা নেই। যে কোনো উপায়ে তখন আবার সময় বাড়ানো যাবে। তিনি মনে করেন, বারবার সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়মের মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলো চাপে পড়বে। এ ছাড়া তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, শুরুতে যেসব ব্যাংকের এডিআর বেশি ছিল এখনও তারাই সীমার
সার্কুলারে বলা হয়েছে, ঋণ-আমানত অনুপাত নির্ধারিত সীমায় নামিয়ে আনার কার্যক্রম আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। এখনও যেসব ব্যাংকের এডিআর নির্ধারিত সীমার ওপরে রয়েছে, তারা নির্দেশিত মাত্রায় নামিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে মাসিক অগ্রগতি প্রতিবেদন পরবর্তী মাসের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বেসরকারি পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ হালিম চৌধুরী সমকালকে বলেন, এডিআর সমন্বয় নিয়ে ব্যাংকগুলো চাপের মুখে ছিল। সময় বাড়ানোর ফলে এখন কিছুটা স্বস্তি ফিরবে। শেয়ারবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
ব্যাংকগুলোর এডিআর কমানোর জন্য শেয়ারবাজারে তাদের বিনিয়োগ কমাচ্ছে বলে গুঞ্জন ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারে দরপতনের অন্যতন কারণ এই ঋণ সমন্বয় বলে বাজার-সংশ্নিষ্টদের অনেকে মনে করেন।
বাজারের এই নিম্নমুখী ধারার কারণে অন্য প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছিলেন না বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা আরও ৬ মাস বাড়িয়ে সার্কুলার দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এডিআর বাড়ানোর পর আমানত সংগ্রহে বাড়তি চাপ তৈরি হয়। এতে সুদহার বাড়তে শুরু করে।
আরও পড়ুন