ঢাকা, শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪

এক লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াচ্ছে সংশোধিত এডিপি 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:১০, ৩ মার্চ ২০২০

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার চলতি অর্থবছরে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় দাঁড়াচ্ছে। এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনকে অর্থ মন্ত্রণালয় সরকারি তহবিলের ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ফলে সরকারি অংশের কোনো অর্থ কাটছাঁট হচ্ছে না মূল এডিপির বরাদ্দ থেকে।

এদিকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ছিল। এর আগে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পরিকল্পনা কমিশনকে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এ জন্য সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ থাকছে ৬২ হাজার হাজার কোটি টাকা। 

এ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা (স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বাদে)। গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সেই তুলনায় চলতি অর্থবছর সার্বিকভাবে আরএডিপির আকার বাড়ছে।

সংশোধিত এডিপি তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো.খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার। সরকারি তহবিলের যে টাকা ধরা হয়েছে, সেটি যদি পুরোপুরি ব্যয় করা যায় তাহলেও উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বৈদেশিক সহায়তা অংশে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা কমিয়ে ফেলায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই অংশের অর্থ ব্যয়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমকে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়ার পর আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক বরাদ্দ নির্ধারণ করে পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছি। তিনি প্রাথমিক অনুমোদন দিলে শিগগিরই বর্ধিত সভা করা হবে। তারপরই এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি তহবিলের অর্থ প্রাপ্তি সহজ করা হয়েছে। এখন প্রথম থেকে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করতে পরিকল্পনা কমিশনের অনুমতি লাগে না। কেবল চতুর্থ কিস্তির অর্থের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।’

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থব্যয়ে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাড়তি বরাদ্দও চেয়েছে। কিন্তু বৈদেশিক অংশের বরাদ্দ ব্যয়ের ক্ষেত্রে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। ফলে মূল এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া ৭১ হাজর ৮০০ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ কত হবে, সেটি এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

এছাড়া বৈদেশিক সহায়তা অংশে খাতভিত্তিক বরাদ্দের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাটছাঁট করা হয়েছে পরিবহন খাতে। এ খাতে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৯১৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। সেখান থেকে ৩ হাজার ৮০২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা কমিয়ে আরএডিপিতে রাখা হচ্ছে ১৭ হাজার ১১২ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বৈদেশিক ঋণের টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা এবং উভয় পক্ষের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। ফলে এই অর্থ ব্যয়ে অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর আগ্রহ কম থাকে। বিপরীত দিকে নিজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে অতটা কড়াকড়ি নেই। ফলে সরকারি অর্থ ব্যয়ে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা যায়।’

বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আরএমইডি) সূত্র জানায়, জানুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ০৭ শতাংশ। এ সময়ে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৬৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

ওই সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছিল ৬২ হাজার ২৮২ কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাসে সরকারি তহবিলের অর্থ ব্যয় বেশি হলেও বৈদেশিক অর্থ কম ব্যয় হয়েছে।

এ সময়ে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ৪৭ হাজার ৮৩ কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩২ দশমিক ৪১ শতাংশের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৯৬ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩৭ দশমিক ৫৪ শতাংশের কম।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও ১০ শতাংশের এডিপি বাস্তবায়ন রয়েছে সাতটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। এগুলো হল- বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আট দশমিক ৬৫ শতাংশ। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। পরিকল্পনা বিভাগ (উন্নয়ন বরাদ্দসহ) আট দশমিক ৩৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক দশমিক ৩৪ শতাংশ। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পাঁচ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পাঁচ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি