পোষাক শ্রমিকদের জন্য গাজীপুরে সর্বাধুনিক করোনা ল্যাব স্থাপন
প্রকাশিত : ২০:৪৯, ৪ জুন ২০২০ | আপডেট: ২০:৫২, ৪ জুন ২০২০
গাজীপুরের চন্দ্রায় স্থাপিত সর্বাধুনিক মানের ১ম ল্যাব।
দেশে চিকিৎসকদের সংস্থা বাডাস (ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ)-এর সহযোগিতায় গাজীপুরের চন্দ্রা, টঙ্গি ও নারায়ণগঞ্জে কিছু অত্যাধুনিক পিসিআর (Polymerase Chain Reaction) ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। সঠিকভাবে উচ্চহারে করোনা ভাইরাস শনাক্তে সক্ষম অত্যাধুনিক এই ল্যাবগুলোর মধ্যে সর্বাধুনিক মানের ১ম ল্যাবটিই স্থাপিত হলো চন্দ্রায়।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) সকাল ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ল্যাবটি উদ্বোধন করা হয়। এই ল্যাবে প্রতিদিন ১৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা যাবে এবং পরবর্তীতে তা আরও বৃদ্ধি করা হবে।
চন্দ্রার কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাব উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জনাব জাহিদ মালেক এমপি, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি কে এম আব্দুস সালাম, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সাবেক সভাপতি জনাব মতিন চৌধুরী, বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী এমপি, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (বাডাস)-এর সভাপতি প্রফেসর ডক্টর এ কে আজাদ খান ও বিজিএমইএ- এর বর্তমান সভাপতি ডক্টর রুবানা হক।
ডক্টর রুবানা হক সকলকে অভিবাদন জানিয়ে প্রেস কনফারেন্সটি শুরু করেন। কনফারেন্সে ল্যাবটির একটি অডিও ভিজ্যুয়াল দেখানোর মাধ্যমে ল্যাবটির উদ্বোধন করা হয়।
কনফারেন্সের শুরুতে বিজিএমইএ-এর কোভিড ল্যাব স্থাপন প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “কোভিড মহামারীর কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে, তাই এই মহামারী মোকাবেলা করেই কারখানা সচল রাখার সব রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। সময় মত পরীক্ষার ফলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে শ্রমিকদের পুনরায় কাজে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করি।”
কনফারেন্সে কোভিড-১৯ ল্যাব প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখার সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, “বিজিএমইএ গার্মেন্টস সেক্টরকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এই কাজের সাথে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক জড়িত তাই তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করাটাও আমাদের দায়িত্ব। তাই যারা এই এই ল্যাব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ। যতো বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হবে ততো বেশি সনাক্ত হবে এবং ততো দ্রুত চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হবে।”
ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব আতিকুল ইসলাম বলেন, “করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে রোগী শনাক্তকরণ, রোগীর সংস্পর্শ নিরুপণ এবং শনাক্তকৃত রোগীকে যথাযথভাবে সেবা দেওয়া প্রয়োজন। আশা করি বিজিএমইএ-এর ল্যাব পোশাক শ্রমিক ও তাদের পরিবার এবং দেশবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমি মনে করি সামাজিক দূরত্বের চাইত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখাটাই গুরুত্বপূর্ন। কারখানায় যারা শনাক্ত হচ্ছেন নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর নিতে হবে কারখানার মালিকদের।”
সালাম মুর্শেদী এমপি বলেন, “যেহেতু কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগে পর্যন্ত এর সাথেই চলতে হবে এবং লাইফস্টাইল এর সাথে মানিয়ে চলে সুস্থ থাকতে হবে এবং ইন্ডাস্ট্রি চালনা করতে হবে।”
এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ- এর সাবেক সভাপতি জনাব সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন (এমপি) বলেন, “শ্রমিকরা আমাদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে যারা প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের নজরদারিতে রাখছে।”
কনফারেন্সে আরও উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সমাজের বিত্তবানদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনাদের যাদের বড় জায়গা তারা আইসোলেশন ইউনিট তৈরী করে এই কাজে সহযোগিতা করতে পারেন।”
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি কে এম আব্দুস সালাম বলেন, “আমি এই ল্যাবটির জন্য বিজিএমইএকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সকলের উদ্যোগে স্থাপিত এই ল্যাবটি একটি সময়োপযোগী ও মানবিক উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত কল কারখানায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা পরিদর্শন করা হচ্ছে।”
ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (বাডাস) এর সভাপতি প্রফেসর ডক্টর এ কে আজাদ খান বলেন, “ল্যাবটি প্রতিষ্ঠার ফলে পোশাক শ্রমিকরা উপকৃত হবেন। এটি উন্নত বিশ্বের ল্যাবের মতোই উন্নত একটি ল্যাব। চন্দ্রা, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামের ল্যাবটি প্রস্তত হলে বিজিএমইএ সকল পোশাক শ্রমিকদেরকে সেবা দিতে সক্ষম হবে। এ কাজে ডাক্তার ও গবেষকরা তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে নিয়মিত সুচারুভাবে রিপোর্ট প্রদান সম্পন্ন করবেন বলে আমরা আশাবাদী।”
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর সাবেক সভাপতি জনাব মতিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা সবাই মিলে ১০ টি ভালো কাজ করার পর ১টি কাজ ভুল হওয়ার পর ভুলটাকেই বার বার সকলের সামনে তুলে ধরলে যারা প্রতিনিয়ত এই সেক্টরে কাজ করে তাদের কাজের স্পৃহা নষ্ট করে দেয়, তাই সকলের কাছে অনুরোধ আপনারা ভালো কাজের ব্যাপারে উৎসাহিত করবেন।”
শেষে বিজিএমইএ-এর বর্তমান সভাপতি ডক্টর রুবানা হক তার বক্তব্যে বলেন, “তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। আমরা এমন একটি সংগঠন লালন করি, যা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, সংহতি ও উন্নয়নের বিশেষ ভূমিকা পালন করে থেকে।”
সেই সাথে তিনি ল্যাবটির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিক নির্দেশনায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে আমরাও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। এ দুর্যোগে বিজিএমইএ-এর মহৎ উদ্যোগটি করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। শ্রমিকরাই আমাদের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমরা শ্রমিকদের মধ্যে কোভিড-১৯ নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করছি। তাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যেমন - বিজিএমইএ শ্রমিকদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও তাদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। আইসোলেশনের প্রয়োজনে বেড রাখার জন্য রাজধানীর বারডেম ও বেশ কিছু প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে চুক্তি করেছি।”
রুবানা হক আরও বলেন, “কারখানায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা পর্যবেক্ষণ করতে বিজিএমইএ ৬টি পর্যবেক্ষণ দল গঠন করে ইতিমধ্যে ৫০২টি কারখানা পরিদর্শনের কাজ শেষ করেছে। শ্রমিকদের জন্য একটি হটলাইন নম্বর চালু হয়েছে যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হটলাইনে সংযোগে সাহায্য করবে। তাছাড়া বিনামূল্যে শ্রমিকদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য মায়া ও ওয়ার্ল্ড হেলথ ফর টেলিমেডিসিনের সাথে যুক্ত হয়েছে।”
এনএস/
আরও পড়ুন