ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সংকটকালে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২১, ১১ জুন ২০২০ | আপডেট: ২১:৪৭, ১১ জুন ২০২০

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

করোনাকালের বিশ্বে অর্থনীতিতে নানামুখী প্রতিকূলতার মধ্যেও ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ের এবারের বাজেট দেশের ৪৯তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২০তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাজেট।

আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সংসদের বৈঠক শুরু হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় স্পিকার অর্থমন্ত্রীকে চাইলে বসেও বাজেট পেশ করতে পারবেন বলে অনুমতি দেন। এর আগে মন্ত্রিসভায় বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্বাক্ষর করেন। আগামী বাজেটে চলতি বাজেটের ন্যায় জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট চলতি অর্থ বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। 

প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়ন ব্যয় বা পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের মধ্যে- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আয় করবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, রাজস্ব বহির্ভূত খাত থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা, আর কর বহির্ভূত খাত থেকে আসবে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। 

প্রস্তাবিত বাজাটে করোনাকালে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে ব্যক্তিশ্রেণি আয়করে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বর্তমান বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে উন্নীত করে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এদের করহারও কমানো হয়েছে। প্রতিটি স্তরে ৫ শতাংশ করে করহার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে করপোরেট কর (নন‌লিস্টেড) কোম্পানির ক্ষেত্রে করহার ৩৫ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে কর অবকাশ বা ট্যাক্স হলিডে সুবিধার আওতায় নতুন করে আরও ছয়টি খাতকে যুক্ত করা হয়েছে। সারচার্জের ক্ষেত্রে যাদের ২০ কোটি টাকার ওপরে সম্পদ আছে তাদের করহার বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। করোনাকালীন যারা সময়মতো করের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের দণ্ড সুদ মাফ করা হয়েছে। যারা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন তাদের নির্ধারিত অঙ্কের কর রেয়াত দেওয়া হয়েছে। যাদের ব্যক্তিগত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস আছে, তাদের করহার গাড়ির সিসি ভেদে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন করারোপ না করে, আওতা না বাড়িয়ে আইনকানুন সহজ ও সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন বাজটে।

মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে আগাম কর শিল্পের কাঁচামালের জন্য ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগের মতো ৫ শতাংশই বহাল থাকছে। বর্তমানে নতুন বা পুরোনো রিম সংযোজনে নির্ধারিত ২০০ টাকা কর নেওয়া হয়, যা মোবাইল অপারেটর দিয়ে থাকে। নতুন বাজেটে এই কর বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে যারা সার্জিক্যাল মাস্ক ও পিপিই তৈরি করবে তাদের ভ্যাট মওকুফ করা হচ্ছে। মধ্যম ও নিম্ন স্তরের সিগারেটের মূল্য স্তর গড়ে ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ছে। ব্যাংকে যাদের পাঁচ কোটি টাকার বেশি আমানত আছে তাদের ওপর আবগারি শুল্ক বর্তমানের চেয়ে ১৫ শতাংশ বাড়ছে। সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে ভ্যাটের আওতা তেমন বাড়ছে না। তবে উৎসে কর রেয়াতসহ অন্যান্য খাতে যেসব অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করে সংস্কারে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে মোবাইল সেটের শুল্ক বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে। তবে করোনা প্রতিরোধে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জাম আমদানি সহজলভ্য করতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। 

করোনায় কর্মহীন জনগণের সামাজিক সুরক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য দশ টাকা দামে চাল বিতরণ, বিনামূল্যে চাল সরবরাহ ভিজিডি, ভিজিএফ ও ওএমএস কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া বয়স্ক, বিধবা ও মাতৃত্বকালীনসহ অন্যান্য ভাতাভোগীর সংখ্যা বর্তমানের চেয়ে প্রায় ১২ লাখ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের দারিদ্র্যপীড়িত একশ' উপজেলায় শতভাগ যোগ্য সুবিধাভোগীদের এসব ভাতার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখা হচ্ছে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে সর্বমোট ৭৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। করোনায় এ খাতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানের চেয়ে বাড়িয়ে আগামী বাজেটে ৯৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ শতাংশের কাছাকাছি।

করোনার কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও ভর্তুকি ব্যয় আরও বাড়ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারে ভর্তুকি ব্যয় বাড়বে। সে জন্য আগামী বাজেটে এ খাতে ৫৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব থাকছে, যা এখন আছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

একে//এনএস


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি