ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৬ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ফাহিমের বড় হওয়ার গল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:২০, ১৫ জুলাই ২০২০

ফাহিম সালেহ

ফাহিম সালেহ

Ekushey Television Ltd.

ফাহিম সালেহ। দেশের শীর্ষস্থানীয় রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ভিত্তিক গবেষণায় বেশ পটু ছিলেন। ফলে মাত্র ১৬ বছর বয়সেই তৈরি করেছিলেন Teenhangout.com (টিনহ্যাংআউটডটকম) নামের একটি ওয়েবসাইট। যেখানে ডাউনলোড করা যেত যে কোন ধরনের ছবি। যা গুগল অ্যাডের মাধ্যমে প্রচারও পায়। 

চট্টগ্রামের এই তরুণ অত্যান্ত মেধাবী হওয়ায় পড়াশোনার সুযোগ পান আমেরিকার বেন্টলি ইউনিভার্সিটিতে। ইনফরমেশন টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করা ফাহিমের সঙ্গে ওই সময় নিউইয়র্কের আরেক তরুণের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। যার সাথে একে একে ২০টি ওয়েবসাইট তৈরি করেন তিনি। এর সবগুলোই ছিল কিশোরদের জন্য। যা দিয়ে বছরে তিন লাখ ইউএস ডলার আয় হতো তাদের। 

২০০৯ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চাকরি খুঁজছিলেন ফাহিম। নিউইয়র্ক আর বোস্টন শহরের বিভন্ন দপ্তরে আবেদনও করেছিলেন। অফারও পান। কিন্তু নিউইয়র্ক শহর ছাড়তে রাজি ছিলেন না তিনি। তাই, চাকরিতে জয়েনের আগে দু’সপ্তাহ সময় চেয়ে নেন। এ সময়েই তৈরি করেন PrankDial.com নামের আরেকটি ওয়েবসাইট। 

যা অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায়। পাশাপাশি অ্যাডও তৈরি করেছিলেন। মানুষ প্রাংক কল কেনার জন্য শত শত ডলারও খরচ করতে রাজি ছিল। ফলে, চাকরিতে জয়েন না করে সে কাজেই লেগে পড়েন তিনি। ফলে দ্রুত বড় হতে থাকে তার কোম্পানিটি। 

২০১৪ সালে দেশে ফেরেন ফাহিম। এ সময়েই যুক্ত হন রাইড শেয়ারিং কোম্পানি পাঠাওয়ের সঙ্গে। সে সময় পাঠাওয়ের সিইও হুসেইন মো. ইলিয়াসের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। উদ্যোগ নেন আইটি বিজনেসের। পর্যালোচনা করেন বিভিন্ন প্রকল্পের সম্ভাবনা নিয়ে। এর মধ্যে পাঠাওয়ের এর সম্ভাবনা দেখতে পান। 

তবে প্রথমদিকে পাঠাও দিয়ে ডিজিটাল ডেলিভারির কথা ভেবেছিলেন তারা। কারণ, সে সময় তাদের কাছে রেজিস্টার্ড ডোমেইন থাকার পাশাপাশি এবং সেটি ডেলিভারি বিজসেনেসের জন্য অত্যন্ত কার্যকরি ছিল। কিন্তু, দেশে চাহিদা সরবরাহের বাজার বেশি বড় না হওয়ার চিন্তা করে সরে আসেন সেখান থেকে। পাঠাওকে এবার রাইড শেয়ারিং কোম্পানি করার চিন্তা করলেন তারা। আর এ থেকে হতে থাকলো রাইড শেয়ারিং অ্যাপ।

বাংলাদেশ ছাড়াও, নেপাল, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়া ও আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়ায় আরও দুটি রাইড শেয়ারিং কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি। এর মধ্যে নাইজেরিয়ায় চালু করা ওকাডা এখন দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ। 

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফাহিম পাঠাওয়ের পর্যবেক্ষক উপদেষ্টা পদে ছিলেন। তার আশা ছিল ইন্দোনেশিয়ায় ওজেকের মতো পাঠাও একদিন দারুণ সুপার অ্যাপ হয়ে উঠবে। পেমেন্ট, ই-কর্মাসও করা যাবে পাঠাওয়ের মাধ্যমে। কিন্তু তা আর হলো না। 

বাংলাদেশি এই তরুণ সফল উদ্যোক্তা গত বছর প্রায় ২২ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে ম্যানহাটনে অত্যাধুনিক একটি এপার্টমেন্ট কিনেছিলেন। সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) ওই এপার্টমেন্টেই খুন হন তিনি। 

নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ওই অ্যাপার্টমেন্টের ৯১১ নম্বরের এক টেলিফোন কলের মাধ্যমে তারা হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারেন। 

পুলিশ জানায়, ‘সেখানে ঢুকেই তারা ড্রয়িং রুমের মেঝেতে একটি মস্তকবিহীন দেহ পড়ে থাকেত দেখেন। এমনকি হাত এবং পাগুলোও শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন। মৃতদেহের পাশেই পড়েছিল একটি ইলেক্ট্রিক করাত। এছাড়া কয়েকটি প্লাস্টিক ব্যাগে ফাহিমের খণ্ড-বিখণ্ড দেহের কয়েকটি অংশ পাওয়া যায়।’ তবে কী কারণে তাকে এভাবে হত্যার শিকার হতে হয়, তা এখনও অজানা। 

ফাহিমের পুরো পরিবারই আমেরিকা প্রবাসী। ১৯৮৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা সালেহ উদ্দিন বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে আর মা নোয়াখালীতে। 

এআই//এমবি


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি