ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

করোনাকালেও নিয়মিত বেতন-ভাতা দিচ্ছে পিএইচপি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৫৪, ২৫ জুলাই ২০২০

পিএইচপি গ্রুপ

পিএইচপি গ্রুপ

চলমান করোনা মহামারীতে বিশ্বব্যাপী ব্যবসায়ে মন্দা চলছে। দেশে বিদেশে বহু পুরাতন ও সফল প্রতিষ্ঠান যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ জন্য ব্যবসার প্রসারতা না বাড়িয়ে তা অনেকটা গুটিয়ে অনছে প্রতিষ্ঠান সমূহ। এতে করে কোটি কোটি মানুষ চাকরী হারাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান কাউকে আবার অবৈতনিক ছুটি দিয়েছে, কেটে নিচ্ছে বেতন-বোনাস। করোনা  স্বাস্থ্যে যতটা না বিপর্যয় এনেছে তার চেয়ে অর্থনৈতিক অবস্থার ক্ষতি হয়েছে বেশি। এ সময় দিশেহারা হচ্ছেন মানুষ। 

দেশ ও বিশ্বের এ ক্রান্তিকালে সবার থেকে আলাদা দেশের পিএইচপি গ্রুপ। ১০ হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতা সঠিক সময়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রফিট শেয়ারিংয়ের ভিত্তিতে তারা এ বিষয়টি সম্পন্ন করছে। নিয়মিত বেতন ও ভাতা প্রাপ্ত হচ্ছেন গ্রুপের ৩০টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার কর্মী। এসবের মধ্যে স্টিল, ফ্লোট গ্লাস, পেট্রো রিফাইনারি, অটোমোবাইল, অ্যালুমিনিয়াম, গ্রিন শিপ ইয়ার্ড, বিমাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেতন-ভাতা বাবদ মাসে প্রায় ১১ কোটি টাকা কাকর্দের দিচ্ছে গ্রুপটি। এ শিল্প গ্রুপের বছরে টার্ন ওভার প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। 

আঠার শতাব্দীর শেষে (১৯৯৯) প্রতিষ্ঠিত এ গ্রুপটি এখন ২১ বছরে পর্দাপন করেছে। দিন আসবে, আসতে পারে এমন একটি দশর্ণ নিয়ে চলছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলে ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন জানান। 

তিনি বলেন, ‘সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- ঘাম শুকানোর আগে শ্রমিকদের পাওনা মিটিয়ে দাও। এমন বিষয় আমরা মানার চেষ্ঠা করে থাকি।’ গেল বছর গ্রুপের কর্মীদেরকে ১২টি বোনাস দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত ৬টি বোনাস দেওয়া হয়েছে। করোনা না থাকলে এ বছর ১৪টি বোনাস দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বলে জানান মহসিন। 

গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, কোনও কর্মচারীকে ইচ্ছকৃতভাবে ছাঁটাই করা হয়নি। মাহামারীর এ সময়ে বাসায় থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। মিটিং হচ্ছে অনলাইনে। জ্বালানি থেকে শুরু করে অপ্রয়োজনীয় খরচ-অপচয় বন্ধ করা হচ্ছে। সরকারের দেওয়া সব স্বাস্থ্যবিধি ও নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। কর্মীদের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে গ্রুপের সূত্রে জানা যায়। মহামারীর শুরুতে অনেকেই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছেন। এতে করে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম ছিল। যারা কাজ করতে রাজি ছিলো তাদের পিপিই, স্যানিটাইজার, থাকা-খাওয়া সব কারখানার ভেতরেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কর্মীরা খুশি মনে কাজ করেছেন। লকডাউনকালে তারা বের হয়নি, বাহির থেকে কেউ কারখানায় ঢোকেওনি।  

কোভিড-১৯ সংক্রমণের ফলে আমদানিতে বড় ধাক্কা এসেছে। সব প্রতিষ্ঠানই তাদের লক্ষ্যমাত্রার আয় করতে পারছে না। এসময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মতো পিএইচপি গ্রুপও দেশি কাঁচামাল ব্যবহার করছে। পিএইচপি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর শিল্পকারখানা গড়ে তুলতে। এ জন্যই গ্লাস ফ্যাক্টরিতে আসা, ৯৫ শতাংশ কাঁচামাল দেশে পাওয়া যায়। অল্প কিছু কেমিক্যাল আমদানি করতে হয়।’ 

জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ৬০০ একর জায়গার ওপর বেসিক স্টিল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলবে পিএইচপি। ঐ বেসিকে আকরিক লোহা গলিয়ে ঢেউটিন, রড, পেরেক, স্ট্যাপলার পিন সব কিছু তৈরি হবে। এ জন্য সরকারকে শত কোটি টাকাও জমা দিয়েছে গ্রুপ।  প্রতিষ্ঠার ২০ বছরের মাথায় গ্রুপটি এগিয়ে যাচ্ছে। এতে কর্মীরাও সমান অংশীদার বলে মনে করছেন গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদ।     

উল্লেখ্য, পিএইচপি ফ্যামিলি (পূর্বে পিএইচপি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ) চট্টগ্রামভিত্তিক একটি বাংলাদেশী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৬৯ সালে সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই এখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬৯ সাল থেকে মিজানুর রহমান ছোট ব্যবসায় যুক্ত হন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি পুরোপুরি ব্যবসা শুরু করেন। [প্রথমে পণ্য আমদানি করে দেশীয় বাজারে বিক্রির মাধ্যমে কাজ শুরু করলেও পরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে শিপইয়ার্ড প্রতিষ্ঠা করেন যেখানে পুরোনো জাহাজের আসবাবপত্র বিক্রি করা হতো।  সালে রি-রোলিং মিল এবং ১৯৮৪ সালে ‘মংলা ইঞ্জিনিয়ার্স ওয়ার্কস’ নামে দেশের প্রথম বিলেট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে ঢাকাতে ‘পিএইচপি রানী মার্কা ঢেউটিন’ নামে একটি ঢেউটিন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আরও বিভিন্ন খাতে বিনোয়োগ করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সকল প্রতিষ্ঠান পিএইচপি গ্রুপের অধীনে নিয়ে আসেন। বর্তমানে গ্রুপটির অধীনে ৩০টির বেশি কোম্পানি রয়েছে।

এমএস/এমবি


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি