বন্যা কবলিত জেলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
প্রকাশিত : ২২:৩৩, ২৩ আগস্ট ২০২০
বন্যা কবলিত উত্তারাঞ্চলের সবকয়টি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। পাশাপাশি, বন্যা কবলিত জেলার ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ (প্রতি প্যাকেজে ৭ কেজি ৫০০ গ্রাম চাল, ডাল ১ কেজি, তেল ১ লিটার, চিনি ১ কেজি, লবন ১ কেজি ও সুজি আধা কেজি) বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
বন্যা কবলিত ৫টি জেলায় (সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম. জামালপুর ও সুনামগঞ্জ) গ্রামীনফোনের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪০,০০০ হাজার পরিবারকে ফুড প্যাকেজ প্রদান করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ১২,০০০ হাজার ফুড প্যাকেজ বিতরণ শেষ হয়েছে। আগামী ২৬ আগস্ট ২০২০ থেকে বাকি ২৮ হাজার পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ বিতরণ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরের সহযোগিতায় জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সরাসরি তত্বাবধানে এই কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া টিউবয়েল মেরামত ও জীবাণুমুক্ত করণ এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানে রেড ক্রিসেন্টের মেডিকেল টিম কাজ করছে।
গত ৩ দিনে (১৮,২১ ও ২২ আগস্ট ২০২০) সিরাজগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের উদ্যোগে ও গ্রামীনফোনের সহযোগিতায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫০০ অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ও আইএফআরসি গভার্নিং বোর্ডের সদস্য প্রফেসর ডা: মো: হাবিবে মিল্লাত, এমপি। সিরাজগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট জানায়, সোসাইটি’র জাতীয় সদর দপ্তরের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৫০০ পরিবারের মাঝে ফুড প্যাকেজ বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সর্বমোট ৮ হাজার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে এই ফুড প্যাকেজ বিতরণ করা হবে।
সোসাইটির ডিজাস্টার রেসপন্স বিভাগের পরিচালক মো: মিজানুর রহমান জানান, বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি জেলায় (কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা,বগুড়া,সিরাজগঞ্জ,টাঙ্গাইল ও জামালপুর) নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ৬০০টি টিউবয়েল মেরামত ও জীবাণুমুক্তকরণের কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। স্থানীয় মেকানিকের সহযোগিতায় সোসাইটির প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকরা এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে। এই পদক্ষেপ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার জনগণের নিরাপদ পানির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে বলে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি মনে করে। এছাড়াও এসব ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থার সুবিধার্থে নতুন করে ১৮০টি ল্যাট্রিন স্থাপনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। পরবর্তীতে এসব কার্যক্রম আরোও বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে দুর্গত মানুষদের নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত ৬টি জেলায় (কুড়িগ্রাম,গাইবান্ধা,বগুড়া,সিরাজগঞ্জ,টাঙ্গাইল,জামামালপুর)“মোবাইল ওয়াটার পিউরিফিকেশন কিট ( ম্যান প্যাক) এর মাধ্যমে নদী/জলাশয়ের পানিকে বিশুদ্ধ করে বন্যার্তদের মাঝে ১,৩১,০৩৪ লিটার নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হয়। জেরিক্যান ভর্তি এসব নিরাপদ পানি বন্যার ফলে বাড়িতে আটকে পড়াদের কাছে পৌছে দিয়েছে সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকরা।
সোসাইটির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বন্যা কবলিত এলাকার জনগণের বন্যা পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে। ৫টি (পাঁচটি) মেডিকেল টিম গত ১৪ আগস্ট থেকে বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্ত লালমনিরহাট, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলায় রোগীর চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিটি টিমে একজন চিকিৎসক,প্যারামেডিক ও ২ জন করে রেড ক্রিসেন্টের প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। প্রতিটি মেডিকেল টিমের মাধ্যমে, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২০০ জন রোগীকে ব্যবস্থাপত্র ও বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মেডিকেল টিমের সংখ্যা আরোও বাড়তে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায় ।
সোসাইটির মহাসচিব মো: ফিরোজ সালাহ্ উদ্দিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তাসহ চিকিৎসা ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। তিনি বলেন, বন্যা ছাড়াও বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় জনগণের জন্যও মানবিক সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।
আরকে//
আরও পড়ুন