উৎপাদন ও সেবা খাত জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে
প্রকাশিত : ১৯:৫৭, ২০ অক্টোবর ২০২০ | আপডেট: ২১:৪২, ৬ জানুয়ারি ২০২২
অর্থনীতিবিদ ও আর্থিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, উৎপাদন, সেবা ও অবকাঠামো খাত চলতি বছর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বড় ধরনের অবদান রেখেছে। কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতির গতি মন্থর হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রতিবেশি ভারতের চেয়ে বেশি অর্জিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএম) চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক’ এ জানায়, বাংলাদেশ অনেক সূচকে ভারতের চেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ মাথাপিছু গড় অভ্যন্তরীন উৎপাদনের (জিডিপি) দিক থেকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে।
কয়েকজন ভারতীয় বিশ্লেষক বলেছেন, করোনা মহামারির অভিঘাত বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের অর্থনীতির উপর বেশি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। করোনা দেশটির অথনীতির গতি মন্থর করে দিয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদরা দেশের উন্নয়নকে বিগত কয়েক বছরের স্থিতিশীলতা ও যথোপযুক্ত রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের ফল হিসেবে দেখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ মহামারির অভিঘাত থেকে দেশের অর্থনীতিকে অনেকাংশেই রক্ষা করেছে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কৃতিত্বের দাবিদার।
তিনি আরো বলেন, সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত থেকে দ্রুত ঘরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশে মহামারির প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় ‘জীবন ও জীবিকা একই সঙ্গে (হাতে হাত রেখে) চালিয়ে যেতে হবে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক সাফল্য।’ তিনি এ প্রসঙ্গে বিশেষ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করতে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও দিকনির্দেশনা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে জিডিপি’র ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ‘অনেক ভাল’। তিনি আরো বলেন, ‘তবে, এই প্রবৃদ্ধি ধরে রেখে আমাদেরকে আরো এগিয়ে যেতে হবে।’
ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ এই প্রবৃদ্ধির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ প্রদানে অধিকতর গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ এর অভিঘাত মোকাবেলায় ৩১টি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং ২১টির বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। এই প্যাকেজের পরিমাণ ১১২,৬৬৩ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপি’র ৪.৩ শতাংশ। ব্যবসায়ী মহল এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা জিডিপি অর্জন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ও ভারতের সাফল্যের তুলনা করেন। তারা উল্লেখ করেন যে, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এই অথনৈতিক অগ্রসরতার ক্ষেত্রে একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশ গ্রহণ ৩২ শতাংশ আর ভারতে ২০ শতাংশ।
তাদের পর্যবেক্ষণে আরো দেখা গেছে, বাংলাদেশ এখন কৃষি খাতের তুলনায় শিল্প ও সেবা খাতের উপর বেশি নির্ভরশীল। অন্যদিকে, প্রতিবেশী দেশ ভারত এখনো শিল্প খাত চাঙ্গা করার জন্য কঠোর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ, দেশটির জিডিপি’র জন্য অনেকাংশেই কৃষির উপর নির্ভর করতে হয়।
ব্যবসায়ী বিশ্লেষকরা করোনা মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে তৈরি পোশাক খাতে ৯০ শতাংশের বেশী ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে যাওয়ায় রপ্তানি বাণিজ্যে একটি বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাত ক্রয়াদেশ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, অভ্যন্তরীণ বাজারে পুনরায় ক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদরা এই জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যোগাযোগ অবকাঠামো, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার মতো কয়েকটি অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথাও উল্লেখ করেন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, ২০০৮ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভিন্ন কঠিন সংকট কাটিয়ে ওঠেছে। ইন্টান্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ুন রশীদ বলেন, মহামারির দুর্বিপাক উপেক্ষা করে ‘অর্থনীতির চাকা’ সচল রয়েছে।
এসি
আরও পড়ুন