বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় একটি ক্ষত রেখে গেলো ২০২০ (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৫:৩৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০
২০২০, বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় একটি ক্ষত রেখে গেলো। ১৯৩০-এর মহামন্দার চেয়ে করোনাকালে বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি ভয়াবহ। জীবন-জীবিকা বিনাশী করোনা ভাইরাসের প্রভাবে উন্নত, উদীয়মান, উন্নয়নশীল সব অর্থনীতিই মার খেয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি বাধার মুখে পড়লেও সময়োপযোগী নীতিসহায়তা ও ব্যবসায়ীদের সাহসী পদক্ষেপে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়েছে। অর্থনীতি সচল রাখার যুদ্ধে বড় ভূমিকা রেখেছে কৃষিখাত ও প্রবাসী আয়।
৭.২৮, ৭.৮৬, ৮.১৫ শতাংশ- জিডিপি প্রবৃদ্ধির এই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সাল শুরু করেছিল দেশের অর্থনীতি। প্রথম প্রান্তিক যেতে না যেতেই করোনার ধাক্কায় থমকে যায় উৎপাদন কর্মকাণ্ড। মহামারিতে স্থবির আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। জীবন রক্ষায় করা হয় সাধারণ ছুটি ঘোষণা।
মানুষকে ঘরে রেখে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও চাপ বাড়তে থাকে অর্থনীতির ওপর। সরকারের খাদ্যবান্ধব নানা কর্মসূচি ও নগদ সহায়তা সত্ত্বেও আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। তৈরি পোশাক শিল্পে ক্রয়াদেশ বাতিলের হিড়িক পড়ে। এ অবস্থায় অর্থনীতিকে সক্রিয় করতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই মাসেরও বেশি সময় পর তুলে নেয়া হয় সাধারণ ছুটি। স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে খোলে সরকারি-সরকারি অফিস ও শিল্প-কারখানা। আর্থিক প্রণোদনায় যোগ হতে থাকে নতুন নতুন প্যাকেজ। ২১টি প্যাকেজের আওতায় প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা চলতি মূলধন সরবরাহ করে সরকার। ঘুড়ে দাঁড়াতে শুরু করে অর্থনীতি।
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক- জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রপ্তানি আয় আসে ৮.৮২ বিলিয়ন ডলার। করোনার আঘাতের পর এপ্রিল থেকে জুনে রপ্তানি আয় কমে দাঁড়ায় ৪.৭৩ বিলিয়ন ডলার। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে গতি ফেরে রপ্তানি বাণিজ্যে। এসময়ে রপ্তানি আয় ৯.৭৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর পেছনে ব্যবসায়ীদের সাহসী উদ্যোগ আর সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ইতিবাচক প্রভাব দেখছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ২০২০ সালের যে অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা সেটি একটি চ্যালেঞ্জিং অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার সংগ্রাম। সেটা মোকাবিলার ক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি দুই ধরনের উদ্যোগই কাজ করেছে। বিশেষ করে সরকার খুব দ্রুততার সাথে কিছু প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। যে প্রণোদনাগুলো মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে স্বস্তি দিতে সহায়ক হয়েছে।
বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের অর্থছাড়ে এখনো ধীর গতি। তবে সর্বাধিক কর্মসংস্থান তৈরির খাতটি ঘুরে দাঁড়ানো চেষ্টা করছে।
বিদায়ী বছরের মার্চ-এপ্রিলে কিছুটা ধাক্কা খেলেও জুন থেকে বাড়তে থাকে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর, এই দশ মাসে প্রবাসীরা সাড়ে ১৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠান। ২০২০ সালেই প্রথমবারের মতো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।
এদিকে, মহামারির মধ্যেও সময়মত ফসল উঠেছে। তাই বিশ্বজুড়ে যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক, সেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষ জীবিকায় ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে তারা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন বা যেভাবে ফেরত গেছেন সেটাও কিন্তু অর্থনীতির চাকা ঘোড়াতে সাহায্য করেছে। আমাদের রফতানি খাত একটা বড় রকমের সমস্যায় পড়েছিল। এখন সেখান থেকে ২০২০-এর শেষের দিকে এসে উঠে এসেছে।
বিদায়ী বছরে করোনা শুধু বড় আঘাতই করেনি। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় নতুন অভিজ্ঞতাও সঞ্চয়ের অর্জনও আছে। এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিই নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন অর্থনীতিবিদরা।
ভিডিও :
এএইচ/এসএ/
আরও পড়ুন