জলবায়ু স্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থ্যতার ওপর প্রভাব ফেলছে: বিশ্বব্যাংক
প্রকাশিত : ২১:২৮, ৭ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ২১:৫৯, ৬ জানুয়ারি ২০২২
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের মধ্যে রোগ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানসিক সুস্থ্যতার ওপর প্রভাব পড়ছে। বিশ্বব্যাংকের নতুন এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।
দি ক্লাইমেট অ্যাফ্লিকশনস রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শ্বাসতন্ত্রের ব্যাধি, পানি ও মশাবাহিত রোগ বৃদ্ধি ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জলবায়ুর আরো পরিবর্তন ঘটলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক রোগ আরো বেড়ে যেতে পারে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধদের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় নগরীর বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে খাপ খাওয়ানোর পদ্ধতি গড়ে তুলেছে এবং কৃষি পণ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশে উদ্ভাবিত সমাধান প্রবর্তন করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের অধিকতর প্রভাব দেখা দেয়ায়, বাংলাদেশের জলবায়ু-জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য পদ্ধতি গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে অভিযোজন প্রক্রিয়ায় সফলতা অর্জন করা জরুরি।’
বিগত ৪৪ বছর বাংলাদেশে তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বেড়েছে। দেশে গ্রীষ্মকাল অধিকতর উষ্ণ ও দীর্ঘ হচ্ছে। শীতকালও অপেক্ষাকৃত উষ্ণ থাকছে এবং বর্ষাকালের স্থায়ীত্ব ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাকছে।
এই প্যাটার্নে বাংলাদেশের মৌসুমগুলোর মধ্যে ভিন্নতা হ্রাস পাচ্ছে। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের তাপমাত্রা বেড়ে ১.৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই ধরণের আবহাওয়া পরিস্থিতি ২০১৯ সালে ঢাকা নগরীতে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবে মূল ভূমিকা রেখেছে এবং দেশে ডেঙ্গুর কারণে ৭৭ শতাংশ মৃত্যু হয়।
ওই বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে উচ্চ তাপমাত্রা ও আদ্রতার পর ফেব্রুয়রি মাসে ঢাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে তিনগুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
বর্ষা মৌসুমের তুলনায় শুষ্ক মৌসুমে সংক্রমণ রোগ প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পায়। এদিকে, তাপমাত্রা ও আদ্রতার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আবহাওয়ার প্যাটার্ন মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতি করে। শীতকালে অধিক সংখ্যক লোক বিষন্নতায় ভুগে। তাপমাত্রা ও আদ্রতার কারণে উদ্বিগ্নতার মাত্রাও বেড়ে যায়। নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি বিষন্নতায় ভুগে। পুরুষরা উদ্বিগ্নতায় বেশি ভুগে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস কর্মকর্তা ও এই প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, ‘উপাত্ত সংগ্রহের মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু জনিত রোগের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা পেতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষত, স্থানীয় পর্যায়ে সঠিক আবহাওয়ার উপাত্ত রেকর্ড করে এবং স্বাস্থ্য তথ্যের সাথে এর সম্পর্ক নির্ণয় করে, সম্ভাব্য রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে আগাম ধারণা পাওয়া ও জলবায়ু-ভিত্তিক আগাম ডেঙ্গু সতর্কতা পদ্ধতি গড়ে তোলা সম্ভব।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেকে-সহায়তা করার গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলা ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বুদ্ধকরণের প্রয়াস চালিয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুটি আরো ভালভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব।
এসি
আরও পড়ুন