গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
প্রকাশিত : ১২:২৮, ১৩ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১৩:০৩, ১৩ অক্টোবর ২০২১
চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি, নেই হিমাগার। তাই খেতের আলু নীরবে পচে যাচ্ছে গুদামে। তবে বাণিজ্যিকভাবে রফতানি করা গেলে আলুতে ভাগ্য ফিরতো কৃষকের।
গুরুত্ব এবং উৎপাদন বিবেচনায় ধান ও গমের পরেই আলুর স্থান। এক যুগের বেশি সময় ধরে বছরে ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে আলুর উৎপাদন বর্তমানে এক কোটি টন ছাড়িয়েছে। মাথাপিছু ১০ গুণ বেড়েছে আলু খাওয়ার প্রবণতা।
চলতি অর্থ বছরে দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ টন। বার্ষিক অভ্যন্তরীণ চাহিদা আছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টন। আলু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত কেজি প্রতি খরচ পড়েছে ১৮ টাকা। কিন্তু বর্তমানে হিমাগারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৯-১০ টাকায়। ফলে লোকসানের মুখে কৃষক আর ব্যবসায়ীরা।
কৃষকরা জানান, স্টোর চার্জসহ আলু উৎপাদনে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ১৯ টাকা। কিন্তু এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ৯ টাকায়।
আলু ব্যবসায়ী বলেন, গতবছর যে টাকাটা লাভ করেছি, সে টাকাটা এবার চলে যাবে।
হিমাগার মালিক বলেন, কৃষক যদি আলু না নেয় সে আলুটা আমরা কি করবো? সেক্ষেত্রে আলুটা ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
দেশের ৪০০টি হিমাগারে এখনও মজুদ আছে প্রায় ৪০ লাখ টন আলু। এরমধ্যে বীজ আলু রয়েছে ৮ লাখ টন। প্রতিমাসে চাহিদা ৬ লাখ টন করে। সে হিসেবে আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব আলু বিক্রি না হলে অবিক্রিত থেকে যাবে প্রায় ২০ লাখ টন।
বর্তমান সংকট সমাধানে সরকারের সহযোগিতা আশা করছে কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশন। কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান কমাতে উদ্বৃত্ত আলুতে ভর্তুকী প্রদান, আলু রপ্তানিতে নগদ প্রণোদনাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ এসোসিয়েশনের পরিচালক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে হিমাগার মালিকরা কৃষকের লোন দিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের লোন দিয়েছেন এবং আলু ক্রয় করেছেন। এই টাকা তো ফেরত আসছে এতে হিমাগার মালিকরা ঋণখেলাপীতে পরিণত হবেন এবং তারা দেউলিয়া হবেন।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে আলু উদ্বৃত্ত থাকলেও এ থেকে কৃষক ও দেশের অর্থনীতি কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। কারণ বাণিজ্যিকভাবে দেশে আলুর বহুমুখী ব্যবহার নেই, অন্যদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রে যে ধরনের আলুর চাহিদা রয়েছে সেটি তা উৎপাদন এখনও নিশ্চিত করা যায়নি।
এ খাতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ ধরে রাখতে সরকারের ত্রাণকার্যে, কাবিখা, ভিজিএফ-ভিজিডি কার্ডে এবং ওএমএসের মাধ্যমে আলু বিতরণের প্রস্তাব দিয়েছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রফতানি বাড়ানোর জন্য আমাদেরকে প্রচেষ্টা নিতে হবে। এটা যেমন সরকারিভাবে নেয়া দরকার, এটার ব্যবসায়ী ভিত্তিতে বেসরকারিভাবে যারা আছেন তাদেরও দায়িত্ব আছে।
এছাড়া, চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খাওয়ার পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদেরা।
ভিডিও-
এএইচ/
আরও পড়ুন