ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

মুজিববর্ষেই জুবিলী ব্যাংক বন্ধের প্রত্যাশা হাইকোর্টের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:১২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

বঙ্গবন্ধুর তিন খুনির মালিকানায় থাকা জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড অবসায়নের নির্দেশ দিয়ে রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক জুবিলী ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধে সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে পুরানো এই আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৯১৩ সালের ১৫ এপ্রিল কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার জানিপুরে ‘খোকসা জানিপুর জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৯৮৪ সালের ২৬ জুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ব্যাংকটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসা পরিচালনার সীমাবদ্ধতা রেখে মাত্র একটি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স পায়।

পরবর্তী সময়ে স্বর্ণ বন্ধকের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কুটির শিল্প ও চাষিদের সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয় ব্যাংকটিকে। এই ব্যাংকটি ১৯৮৭ সালের ২৬ জানুয়ারি নাম পরিবর্তন করে হয় ‘জুবিলী ব্যাংক লিমিটেড’। এটি দেশের অতফসিলি পাঁচটি ব্যাংকের একটি।

দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকটির এজিএম তথা বার্ষিক সাধারণ সভা না হওয়াসহ ব্যাংকটির অন্যতম শেয়ার এমবিআই মুন্সী নিজেকে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান দাবি করায় ২০১২ সালে হাইকোর্টে মামলা গড়ায়। ওই মামলায় ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। 

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলায় লড়েছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. মুনিরুজ্জামান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টের ওই রায়ে ব্যাংকটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে ও ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ও পরিচালক নিয়োগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আদেশ দেওয়া হয়। 

ওই আদেশের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসাবে ব্যাংকটির দায়িত্ব দেন। কিন্তু আদালতের দেওয়া ছয় মাস সময়ের মধ্যে আদেশটি বাস্তবায়ন না করতে পারায় আদালতের কাছে পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন জানানো হয়। এরপর হাইকোর্ট ব্যাংকটির শেয়ার মালিকদের তথ্য চেয়ে সরকারের যৌথ মূলধনী কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) কাছে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুসারে আরজেএসসি হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। 

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ ব্যাংকিং আইন দ্বারা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ধরে বঙ্গবন্ধুর তিন খুনি জুবিলী ব্যাংকের মালিকানায় ছিলেন। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল (অব.) ফারুক, কর্নেল (অব.) রশীদ ও মেজর (অব.) বজলুল হুদা। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের তথ্য লুকানোরও অভিযোগ ওঠে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট শেয়ার মালিক এমবিআই মুন্সীর আবেদন খারিজ করে ব্যাংকটি অবসায়নের পক্ষে রায় দেন। এরপর নতুন করে ব্যাংকটির কার্যক্রম চলমান রাখতে মামলা করেন মো. শহীদ উল্লাহ নামের আরেক শেয়ার মালিক। মামলায় শহীদ উল্লাহ নিজেকে ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ারের মালিক দাবি করেন। ওই মামলার শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রায় দেন হাইকোর্ট।

জুবিলী ব্যাংকটি অবসায়নের নির্দেশ দিয়ে পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেছেন। রায়ে আদালত কেন এতদিনেও ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে  প্রতিবেদন চেয়েছেন। 

এছাড়া ১৯৮৪ সালের ২৫ জুনের পর থেকে এ পর্যন্ত জুবিলী ব্যাংকের কার্যক্রম মনিটরিং করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, পরিচালক, ম্যানেজারসহ দায়িত্বরতদের শোকজ করেছেন। পাশাপাশি আদালত আরজেএসসির তালিকা থেকে জুবিলী ব্যাংকের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্ট এ আদেশের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীকে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।

এরআগে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ধীরে ধীরে ব্যাংকটি বন্ধ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সার্কুলারের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের জানানো হয়, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলম-কে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এতদপ্রেক্ষিতে জুবিলী ব্যাংক লিমিটেডের সামগ্রিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্তে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি বাতিল করা হলো।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকটির মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় তিন কোটি টাকা। কর্মকর্তার সংখ্যা সাত থেকে আটজন। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন শাখা ম্যানেজার নিজেই। তার বেতন ১৮ হাজার ও চেয়ারম্যানের বেতন ২৫ হাজার টাকা। সারা বাংলাদেশে ব্যাংকটির শাখা মাত্র একটি।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি