আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে ব্যবসা সহায়ক : অর্থমন্ত্রী
প্রকাশিত : ২০:৩৮, ২২ মার্চ ২০২২
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে যাতে সরকার দেশ পরিচালনা ও উন্নয়নের স্বার্থে প্রয়োজনীয় রাজস্ব সংগ্রহ করতে পারবে এবং একইসাথে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনরকম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন না। বাজেট হবে ব্যবসা সহায়ক। কর ব্যবস্থায় তারা যেন না ঠকেন সে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩ বিষয়ে আয়োজিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪২তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এ সভার আয়োজন করে।
সভায় এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সভাপতিত্ব করেন। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
ব্যবসায়ীদের কর সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সুবিবেচনা করা হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী বাজেটের জন্য ব্যবসায়ীরা যেসব মতামত দিয়েছেন, বিশেষ করে কর সংক্রান্ত মতামতগুলো অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে দেখা হবে। তবে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, উইন-উইন অবস্থ। আপনারা ব্যবসায়ীরা হারবেন না। এমন কর ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে আপনারাও জিতবেন, সরকারও জিতবে।’’
ব্যবসায়ীদের কর প্রদানের আহবান জানিয়ে মুস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘‘আপনাদেরকে কর দিতে হবে, আপনারা যদি কর না দেন, তাহলে পদ্মা সেতু বা বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। আপনাদেরকে দেশ ও নিজের স্বার্থে কর দিতে হবে।’’
অর্থমন্ত্রী জানান, গত ১৩ বছরে দেশে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৮ গুণ। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এনবিআরে রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকা। আর এক যুগের ব্যবধানে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আয় বাড়লেও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বিবেচনা করলে দেখা যাবে- সেই তুলনায় রাজস্ব আহরণে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব। এর জন্য আপনাদের সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি মনে করি-বাংলাদেশের রাজস্ব নীতি সারাবিশ্বে সমাদৃত হবে। আমরা সরাসরি করের প্রতি গুরুত্ব বাড়িয়েছি। যারা বেশি আয় করবেন, তারা তত বেশি কর দেবেন। এই নীতি আমরা অনুসরণ করি। এতে আমরা সফলতা পাচ্ছি।’’
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব এসেছে, সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করব। এর মধ্যে যেগুলো বিবেচনা করা যায়, সেগুলো অব্যশই বিবেচনা করব। তিনি আরও বলেন, আমরা এখন কেবল রাজস্ব সংগ্রহ করি না। দেশের শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করছি। এর জন্য রাজস্ব ব্যবস্থায় অটোমেশন জোরদার ও কর কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কাজ চলছে।’’
এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘‘করদাতাদের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝির জায়গাটা দূর করে বোঝাপড়াটা আরও বাড়াতে চাই। বন্ধুত্বের জায়গাটা তৈরি হওয়া উচিত। এর জন্য উভয় পক্ষের সহযোগিতা দরকার বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার আহবান জানান।’’
অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আগামী বাজেটে আয়কর, মূসক ও ভ্যাটসহ সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ক প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি ব্যক্তি শ্রেণীর করদাতার ন্যূনতম কর তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ টাকা করার প্রস্তাব করেন। কোম্পানি কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর ছাড়ের প্রস্তাব করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এতে সাধারণ ভোক্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থায় অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানিতে মোট প্রাক্কলিত আমদানি শুল্কের বিপরীতে আনুপাতিক হারে আমদানি শুল্ক রেয়াত দেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।
জসিম উদ্দিন আমদানিকৃত কাঁচামাল, মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ যাবতীয় শিল্প উপকরণের উপর আরোপিত অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। এছাড়া আয়কর ও মূসকের আওতা বাড়ানো, সব রপ্তানি খাতকে সমান সুবিধা দেওয়া, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি জোরদার করা, টার্নওভার কর ফিরিয়ে আনা, বিদ্যমান ভ্যাট আইন সংশোধন করার প্রস্তাব দেন তিনি।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের পক্ষে ঋণের কিস্তি সময়মত পরিশোধ করা সম্ভব নয়। তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ঋণ খেলাপি না করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।
এমএম/
আরও পড়ুন