গমের পর চিনি রপ্তানি সীমিত করেছে ভারত, বিশ্ব বাজারে হৈ চৈ
প্রকাশিত : ১১:১১, ২৫ মে ২০২২
বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চিনি রপ্তানিকারক দেশ ভারত। তারা এবার অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে গত ছয় বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চিনি রপ্তানি সীমিত করার পরিকল্পনা করছে। আর সেই সিদ্ধান্তে বৈশ্বিক খাদ্য সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এর আগে নিজেদের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গম রপ্তানি বন্ধ করে দেশটি। তবে সাময়িকভাবে দেশটি ওই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।
এদিকে ভারতীয় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বিশ্ব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি বছর তারা চিনি রপ্তানির সীমা এক কোটি টন নির্ধারণের পরিকল্পনা করেছে।
প্রাথমিকভাবে ভারত চিনি রপ্তানির সীমা ৮০ লাখ টন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। কিন্তু পরে স্থানীয় কারখানাগুলোকে বিশ্ববাজারে আরও কিছু চিনি বিক্রির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের উৎপাদন পূর্বাভাস সংশোধন করেছে ইন্ডিয়ান সুগার মিলস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির আগের পূর্বাভাসে চিনি উৎপাদন ৩ কোটি ১০ লাখ টন বলা হয়েছিল। কিন্তু নতুন পূর্বাভাসে সম্ভাব্য উৎপাদন ৩ কোটি ৫৫ লাখ টন বলা হয়েছে।
সরকারি ভর্তুকি ছাড়া ভারতীয় কারখানাগুলো চলতি ২০২১-২২ বিপণনবর্ষে এ পর্যন্ত ৮৫ লাখ টন চিনি রপ্তানির চুক্তি করেছে। এরই মধ্যে প্রায় ৭১ লাখ টন চিনি বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুম্বাইভিত্তিক এক ডিলার জানিয়েছে, এক কোটি টনের সীমা যথেষ্ট বড়। এতে কারখানা ও সরকার উভয়ই খুশি থাকবে।
তিনি আরও জানান, এক কোটি টন রপ্তানির পর আগামী ১ অক্টোবর ২০২২-২৩ মৌসুম শুরুর সময় ভারতে চিনির মজুদ দাঁড়াতে পারে মোট ৬০ লাখ টন, যা উৎসব মৌসুমের চাহিদা পূরণ করতে যথেষ্ট।
আর এই সিদ্ধান্তের পরেই হৈ চৈ পড়েছে বিশ্ব বাজারে। কারণ রপ্তানিতে শীর্ষে থাকা ব্রাজিলেও এবার উৎপাদন কম হয়েছে বলে জানা যায়।
অন্যদিকে, ভারত বিশ্বের অন্তত ১২১টি দেশে চিনি রপ্তানি করলেও তাদের প্রধান ক্রেতা ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এমন পরিস্থিতে প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের বাজারেও বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। যদিও সরকার তেমনটি মনে করছেন না।
এই বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় চিনি রপ্তানি সীমিত হলে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম বেড়ে যেতে পারে। পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো অন্যান্য আমদানিকারক দেশগুলো বিকল্প উৎসের ওপর চাহিদা বাড়াবে। তাতে ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য ও চীনের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলোর বাজারেও সরবরাহের টান পড়তে পারে। যা নিশ্চিতভাবেই দুশ্চিন্তার কারণ।
বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানি করে ব্রাজিল থেকে। এরপর চীন এবং ভারত। এছাড়াও যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া থেকেও আসে অপরিশোধিত চিনি। যার ফলে বিশ্ববাজারে ভারত রপ্তানি সীমিত করলেও বাংলাদেশে এর প্রভাব খুব একটা পড়বে না বলে মনে করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
ওদিকে, বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ২৯ শতাংশই সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্যের বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে। হু হু করে দাম বেড়েছে গমেরও।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের রপ্তানি বন্ধ আর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী ভারতীয় গমের চাহিদা বেড়েছে। ভারতের গম রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের বিকল্প হিসেবে অনেক ক্রেতাই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
এ অবস্থায় বৈশ্বিক চাহিদা ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় এ বছর রেকর্ড পরিমাণ গম রপ্তানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল ভারত। গত অর্থবছরে দেশটি রেকর্ড ৬৫ লাখ টন গম রপ্তানি করেছিল। চলতি অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই সেই সীমা পার হয়ে গেছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে গমের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকায় শেষপর্যন্ত রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছে ভারত সরকার।
আরএমএ/ এসএ/
আরও পড়ুন