ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

রিজার্ভ নিয়ে শঙ্কা, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪৪, ১৮ জুলাই ২০২২ | আপডেট: ১৪:৪৬, ১৮ জুলাই ২০২২

রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই। এক বছর আগে এই সময়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ। তবে এখন ভাটা পড়েছে সেই অবস্থায়। আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা তৈরি হলেও এখন কমে তা চার মাসে নেমে এসেছে। মূলত আমদানি ব্যয় মেটাতেই শেষ হচ্ছে রিজার্ভ। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, সতর্ক না হলে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। অন্যদিকে, রিজার্ভ বাড়াতে নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কাগজে-কলমে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ আছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে। বলা হচ্ছে, প্রকৃত রিজার্ভের অঙ্কটা ৩২ বিলিয়ন ডলার। এর পেছনে যুক্তি হচ্ছে, ৭ বিলিয়ন ডলারের রফতানি উন্নয়ন তহবিল বা ইডিএফ ফান্ড এবং সবুজ রূপান্তর তহবিল বা জিটিএফ ও শ্রীলঙ্কার ঋণ বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলার। প্রশ্ন হচ্ছে এই অর্থ দিয়ে কয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব?

এ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত বছর এই সময়ের আমাদের রিজার্ভ ছিল আট মাসের। কিন্তু এখন আর কিছুদিনের মধ্যেই আমরা জটিল পরিস্থিতির দিকে চলে যাব, যেটাকে ধরা হয় তিন মাস।

রিজার্ভের অর্থ ব্যবহার কমিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কিন্তু আসলেই কি তার সুফল মিলছে? বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে আরও কঠোর হওয়ার সুযোগ আছে। 

ড. আহসান বলেন, যারা পেনসন নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন তাদের যেতে দিন, এক্সটেনশন দিবেন না। বাংলাদেশে অনেক মন্ত্রণালয় আছে, যেগুলো না থাকলেও চলে। দেশে পাট মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এমন কোনো পাট রফতারি করি না, যার জন্য আমাদের একটি মন্ত্রণালয় খুলে রাখতে হবে। তাছাড়া বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।

রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রধান উৎস রেমিটেন্স। অর্থাৎ বিদেশ থেকে পাঠানো অর্থ প্রবাহ বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ে। অন্যদিকে রফতানি আয়েও ভূমিকা রাখে। তাই রেমিটেন্স আনার দিকটি আরও কর্মী সহায়ক হওয়া দরকার বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এরই মধ্যে ব্যয় সংকোচনের পথে হাঁটছে সরকার। বলা হচ্ছে, কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ায় সঙ্কটের সৃষ্টি হবে না। 

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, নতুন নতুন শ্রমিক আমরা বাইরে পাঠাচ্ছি। তাছাড়া রফতানিও খুব ভালো হয়েছে। তাই দ্রুত আমরা কোনো সঙ্কটে পড়বো বলে আমি মনে করি না।

এদিকে, বিশ্ব বাজারে পণ্যের উচ্চমূল্যের কারণে হু হু করে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। রিজার্ভ ধরে রাখতে মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় নানামুখী সংস্কার এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের সরবরাহ বাড়াতে আরো একটি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রার আমানত (এনএফসিডি) হিসেবে নিজেদের মতো করে সুদ দিতে পারবে। এতদিন ‘ইউরো কারেন্সি ডিপোজিট রেটের’ বেশি সুদ দেওয়া যেত না। অর্থাৎ প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রার আমানতের সুদহারের সীমা প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রোববার (১৭ জুলাই) কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদ্যমান ব্যবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলো প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির নামে এনএফসিডি হিসেব খুলতে পারে। এই হিসাবে ইউরোকারেন্সি আমানত হিসেবের বেশি সুদ দিতে পারে না। এখন থেকে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। এই শিথিলতা প্রবাসী বাংলাদেশি ছাড়াও বিদেশি নাগরিক, বিদেশে নিবন্ধিত কোম্পানি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী এবং বিশেষায়িত অঞ্চল তথা ইপিজেড, ইজেড বা হাইটেক পার্কে অবস্থিত শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

এর আগে, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে বিদেশ ভ্রমণে কড়াকড়ি, সরকারি প্রকল্প কাটছাঁটসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কমানো হয়েছে ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখার সুযোগ, ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ধারনের ক্ষমতা কমানো এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ডলারে দেওয়া ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় স্থানান্তরেরও সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি