ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ‘বিনিময়’ যেভাবে কাজ করবে
প্রকাশিত : ২০:৪৬, ১৩ নভেম্বর ২০২২
বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর থেকে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে অন্য মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস যারা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে লেনদেন সম্ভব না হওয়ার কারণে ভোক্তাদের একের অধিক মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে হতো।
আপনার হয়ত বিকাশ, রকেট অথবা এমক্যাশে অ্যাকাউন্ট আছে। আপনি চাইলেই একটি থেকে আর একটিতে টাকা লেনদেন করতে পারেন না।
শুধু বিকাশ নম্বর থেকে বিকাশ নম্বর অথবা রকেট থেকে রকেটেই টাকা লেনদেন করতে পারতেন।
বাংলাদেশে চালু হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিকাশ, রকেটের মতো মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের ই-ওয়ালেটের মধ্যে আন্ত:লেনদেনের একটি প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগের নাম দেয়া হয়েছে ‘বিনিময়’। এতদিন দু-একটি ব্যাংকের সাথে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস থেকে টাকা লেনদেন করা যেত।
এখন এমন ব্যাংকের সংখ্যাও আরও বাড়ছে। সোমবার ১৪ই নভেম্বর হতে কার্যকর হবে বিনিময়।
যেভাবে কাজ করবে ‘বিনিময়’
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বা ব্যাংকগুলো থেকে এই আন্ত:লেনদেন প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করতে হলে কিছু তথ্য দিয়ে একটি বিনিময় অ্যাকাউন্ট রেজিস্টার করতে হবে।
একবার বিনিময়ে রেজিস্টার করা হয়ে গেলে বিনিময় অপশনটি দেখা যাবে বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, পেমেন্ট সার্ভিস এবং ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে।
টাকা লেনদেনের সময় এই অপশনটি ব্যাবহার করে একটি থেকে আর একটিতে টাকা লেনদেন করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে কোন এজেন্ট পয়েন্টে গিয়ে ক্যাশ উত্তোলনের ঝামেলা থাকবে না।
কত টাকা লেনদেন করা যাবে তা নির্দিষ্ট মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের দৈনিক লেনদেনের যে সীমা রয়েছে সেই অনুযায়ী হবে।
যেমন, একটি বিকাশ ও রকেট নম্বর থেকে দিনে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পাঠানো যায়। দিনে পাঁচটি লেনদেন করা যায়।
বিনিময়ে ব্যাবহার করে টাকা পাঠাতে এই একই নিয়ম কার্যকর হবে। বিনিময়ে রেজিস্টার করার পর মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিসের অ্যাপ আপডেট করে নিতে হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী, বিনিময় প্ল্যাটফরম ব্যাবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে মোবাইল ব্যাংকিং যেমন বিকাশ থেকে রকেটে টাকা পাঠাতে প্রতি হাজারে খরচ হবে ৫ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং থেকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতে প্রতি হাজারে খরচ হবে ১০ টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং থেকে পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের ই-ওয়ালেটে টাকা পাঠাতো খরচ হবে হাজারে ৫ টাকা।
বিনিময়ে এখনো পর্যন্ত যারা যুক্ত হয়েছে
আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগে এখনো পর্যন্ত ১১ টি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে যারা একে অপরের মধ্যে অর্থ বিনিময় করতে পারবে।
এখনো পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস বিকাশ, ডাচবাংলা ব্যাংকের রকেট, ইসলামি ব্যাংকের এমক্যাশ, বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মিউটুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক, সরকারি সোনালি ও পুবালি ব্যাংক।
মি. আজাদ জানিয়েছেন, “এই প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে আপাতত শুরু হচ্ছে। সামনে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে লেনদেন করা যাবে এভাবেই এগুনো হচ্ছে। পরে ধীরে আরো প্রতিষ্ঠান যুক্ত হবে যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
সরকারি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস নগদ এতে কেন যুক্ত হয়নি সে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, নগদও শীঘ্রই যোগ দেবে।
তবে নগদের মালিকানা নিয়ে ডাক বিভাগ ও বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের যে আইনগত জটিলতা রয়েছে এখানে সেই বিষয়টি কোনভাবে সম্পর্কিত কি না সেটি পরিস্কার নয়।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আর্থিক লেনদেনের সমন্বয় সাধন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে এই প্ল্যাটফর্মে অর্থ লেনদেনে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে পরিষ্কার করে কোন ধারণা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
কেন বিনিময় চালু করা হচ্ছে
আজকে এই সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় এই প্ল্যাটফর্মটির সাথে যুক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মেজবাউল হক বলেছেন, “ক্রেতা ও বিক্রেতার আর্থিক লেনদেনের প্রতিষ্ঠান ভিন্ন হলে লেনদেনটি একটি আন্ত:প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনে পরিণত হয়। যা নিষ্পত্তিতে জটিলতা তৈরি হয়।
“এই কারণে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়ে। বাংলাদেশে ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারদের মধ্যে আন্ত: লেনদেনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। লেনদেন সহজ, স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী করার জন্য এটি করা হয়েছে।”
এটি শুধু ভোক্তা পর্যায়ে ব্যবহার নয়, এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, রেমিটেন্স পাঠানো, ট্যাক্স, ভ্যাট পরিশোধ, বিভিন্ন উপযোগী বিল পরিশোধ ও ই-কমার্স লেনদেন করা যাবে। তবে সেসব সেবা চালু হতে কিছুটা সময় লাগবে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসবি/
আরও পড়ুন