ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

দেশেই চাষ হচ্ছে পুষ্টিকর ফল অ্যাভোকাডো

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:২৭, ৩ জুলাই ২০২৩ | আপডেট: ১৩:৫৯, ৩ জুলাই ২০২৩

ফলের নাম অ্যাভোকাডো। বলা হয় এ ফল পৃথিবীর মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার একটি বড় উপহার। কারণ এর মধ্যে রয়েছে মানুষের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ও মিনারেল।

পৃথিবীর অন্যতম এ পুষ্টিকর ফল এখন বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যে এটি বাণিজ্যিক আকার ধারণ করবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে অ্যাভোকাডোর চারা সম্প্রসারণের কাজ চলমান। একসময় সারাদেশে এ ফলের চারা বিস্তার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন উদ্যানতত্ত্ববিদরা।

২০১৯ সালে মাদারীপুরে মস্তফাপুর হর্টিকালচার সেন্টারে তিনটি গাছ রোপন করলেও এখন রয়েছে দুটি অ্যাভোক্যাডো গাছ। এই দুটি গাছে দুই শতাধিক ফল এসেছে। গাছগুলো ছোট আকারের। ফলগুলো অনেকটা পেয়ারার মতো, একসাথে কয়েকটি ধরে রয়েছে, যা গাঢ় সবুজ বর্ণের।

এর মধ্যে বড় একটি গাছে দুই বছর থেকে ফল ধরছে। এবার বিশেষ যত্নের কারণে এ গাছে পরিপক্ব ফল পাওয়া যাবে। একেকটা অ্যাভোক্যাডোর ওজন প্রায় ৪০০ থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশের কয়েকটি বাজারে বিদেশ থেকে এনে এ ফল বিক্রি হচ্ছে, যা প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। সেগুলো পুষ্টিগুণের কারণে উচ্চবিত্তদের কাছে জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

এ ফলের ভেতরে বেশ বড় ডিম্বাকার বীজ থাকে। আহার্য্য অংশ মাখনের মতো মসৃণ, হালকা মিষ্টি স্বাদের। পেঁপের মতো কাঁচা-পাকা ফল, সবজি, ভর্তা, সালাদ, শরবতসহ বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। টোস্টে মাখনের পরিবর্তে অ্যাভোক্যাডো ক্রিম দিয়ে খাওয়া, সালাদে, স্যান্ডুইচে মেয়নেজের পরিবর্তে অ্যাভোকাডোর ক্রিম দিয়ে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত।

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে এই ফল। পাশাপাশি এটি শিশু ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য উৎকৃষ্ট মানের খাবার। শিশুদের অপুষ্টি রোধ সহায়তা করে। যকৃৎকে সুরক্ষা দেয়। জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়তা করে। গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে গর্ভপাত রোধ করে এবং স্বাভাবিক গর্ভধারণে সহায়ক হয়।

এছাড়া সবার জন্য মানসিক চাপ, হতাশা দূরীকরণ, ক্ষুধা বৃদ্ধি, সুনিদ্রা নিশ্চিত করা এবং দেহের ক্ষতিকর দ্রব্যাদি প্রস্রাব ও মল আকারে বের করে দেহকে সুস্থ রাখতে এ ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পৃথিবীর অন্যতম এ পুষ্টিকর ফলটি দেশেই কয়েক বছরের মধ্যে বাণিজ্যিক আকার ধারণ করবে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টারে অ্যাভোক্যাডোর চারা সম্প্রসারণের কাজ চলমান। একসময় সারাদেশে এ ফলের চারা বিস্তার করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন উদ্যানতত্ত্ববিদরা।

এ বিষয়ে কৃষিবিদ ড. রুস্তম আলী একুশে টেলিভিশন আনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া এই ফলটির উৎপাদনে এতটাই উপযোগি যে, আমের চেয়ে ফলন বেশি হবে অ্যাভোকাডো'র। কৃষকরা এটি চাষের মাধ্যমে সহজেই মুনাফা অর্জন করতে পারবে।

এটি উৎপাদনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব বলেও মনে করেন এই কৃষিবিদ।

মস্তফাপুর হার্টিকালচারের কর্মকর্তা লতিফ গণমাধ্যমে জানান, মাদারীপুরের জন্য এই ফল একটি গর্বের বিষয়, সব হর্টিকালচারে এই ফলগাছের চারা রোপন করা হচ্ছে। কিন্ত মস্তফাপুর হর্টিকালচারে প্রথম ফল ধরেছে। তাছাড়া এই ফল থেকে আরো চারা তৈরি করে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

মস্তফাপুর হার্টিকালচারের উপ-পরিচালক এস এম সালাহউদ্দিন জানান, সাধারণত কলমের চারায় পাঁচ বছর পর ও বীজের চারায় আট বছর পর ফল ধরে। কিন্ত আমাদের হর্টিকালচারে ২-৩ বছরেই ফল ধরেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দামি ফল। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ফল। যেভাবে দেশে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে, তাতে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ফল এটি। আগামী দশ-বিশ বছর পর এ ফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হবে।

তিনি আরো জানান, এ হর্টিকালচার সেন্টারে অ্যাভোকাডোর গাছ দেওয়া হয়েছে ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প’ থেকে। এর প্রকল্প পরিচালক ছিলেন ড. মেহেদী মাসুদ। অ্যাভোক্যাডোর চারা ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি