ঢাকা, রবিবার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪

এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশন আয়োজিত গ্লোবাল বিজনেস সামিট অনুষ্ঠিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১৭, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত “3rd Global Business Summit Dhak-2023” অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে ১৭ই সেপ্টেম্বর বিকাল ৫ টায় আয়োজিত হয় এই অনুষ্ঠান।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমদ এমপি, পরিকল্পণা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী জনাব ডঃ মোঃ এনামুর রহমান সহ অনেকে। 

অনুষ্ঠানে এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশ যে দাবি গুলো জানায় সেগুলো হল। 

১। একজন অসহায় প্রবাসী জীবনের সাথে যুদ্ধ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা রোজগার করে দেশের রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। সে রেমিটেন্স যোদ্ধা যখন চিকিৎসার অভাবে বিদেশে মৃত্যুবরণ করেন তাকে দেশে পাঠানোর জন্য প্রবাসীদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চাঁদা কালেকশন করে সেই অসহায় প্রবাসীর মৃতদেহ দেশে প্রেরণ করতে হয়, যা খুবই লজ্জাজনক।  তাই সরকারের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে, সে অসহায় প্রবাসীর মৃতদেহ যেন সম্পূর্ণ সরকারি খরচে দেশে প্রেরণ করা হয়।

২। যে সকল প্রবাসী বিদেশের মাটিতে তাদের জীবন যৌবন সব কিছু বিসর্জন দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে জীবনের শেষ বয়সে বাংলাদেশে ফিরে যান ওই সময় তার আর চাকরি করার সক্ষমতা থাকেনা সেসব প্রবাসী যারা ২০ থেকে ৩০ বছর পরে দেশে ফেরত যাবে তাদের জন্য প্রবাসী ভাতা চালু করতে হবে। সরকার ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন বীমা চালু করেছেন তার মধ্যে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন দরকার আছে, বিশেষ করে সেখানে স্পষ্ট করা হয়নি পেনশন বীমা চালু হওয়ার পর যদি কোন কারণে ওই প্রবাসী সাত আট বছর পরে দেশে চলে আসে তাহলে সে ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কি থাকবে বলা হয়েছে প্রিন্সিপাল এমাউন্টটা ফেরত দেওয়া হবে। আমরা মনে করি সে প্রবাসী বীমা কন্টিনিউ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।  বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে সরকারের পক্ষ থেকে যেই ২.৫%  ইন্সেন্টিভ দেওয়া হচ্ছে তার একটি অংশ প্রবাসীদের জন্য জমা রাখা যেতে পারে।

৩। প্রবাসীরা দেশে তাদের নিশ্চিত ইনভেস্টমেন্ট মনে করে বাংলাদেশ ইউ এস ডলার বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, এবং ওয়েজ আর্নার্স বন্ডে ইনভেস্ট করে থাকেন। গত দুই বছর ধরে বন্ডে ইনভেস্ট লিমিট  করে দেওয়া হয়েছে এবং মেয়াদ শেষে রিইনভেস্ট করার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে ইউ এস ডলার বন্ডের সুদের হার দেওয়া হয়েছে মাত্র 3% যা দেখে প্রবাসীরা হতাশ। বিশ্বে অনেক উন্নত দেশে এখন ডলারের পরিবর্তে ৬% মুনাফা দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নিম্ন সুদে বন্ডে কোন প্রবাসী বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, প্রবাসীরা তাদের ইনভেস্ট নিজ নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে ডলার সংকট দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে ওয়েজ আর্নার বন্ডের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন ডিক্লারেশন আসে নাই তাই আমরা মনে করি অতিসত্বর সরকারের রিজার্ভ আরো বৃদ্ধি করার লক্ষে কোন ধরনের সীমারেখা না রেখে ওয়েজ আর্নার বন্ড বিক্রয়ের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে এবং ডলার সংকট নিয়ে গুজব বন্ধ করতে হবে। তাতে করে দেশ এবং প্রবাসী দুপক্ষই উপকৃত হবে। 

৪। প্রবাসীরা বিদেশে থেকে বাংলাদেশ ঘরবাড়ি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তাই প্রবাসীদের জন্য উপজেলা ভিত্তিক প্রবাসী পল্লি বরাদ্দ দেওয়া হলে পরিবেশগত সুন্দর আবাসন গড়ে উঠবে।
সরকারি প্লট এবং ফ্ল্যাট ক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রবাসীদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং স্বল্প সুদে প্রবাসীদের জন্য লোন বরাদ্দ দিতে হবে।

৫। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীরা সুনামের সহিত বড় মাপের শিল্প - বাণিজ্য পরিচালনা করে যাচ্ছেন, অনেক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন এবং প্রবাসীদের শীর্ষ সংগঠন এনআরবি সিআইপি এসোসিয়েশন বিভিন্ন দেশে গ্লোবাল বিজনেস সামিট  আয়োজন করে সেই সব স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদেরকে দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বারবার অনুরোধ করে যাচ্ছেন, তারই ধারাবাহিকতায় অনেক ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশ বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে অনেক প্রবাসী আগ্রহ প্রকাশ করছেন। উনাদের প্রস্তাব হচ্ছে যদি সরকার নিশ্চয়তার মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য আলাদা ইকোনমিক জোন তৈরি করতে পারে তাহলে অনেক ব্যবসায়ীগণ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। তাতে করে বাংলাদেশে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

৬। প্রবাসীরা দেশ-বিদেশে তাদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য বিমান ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। যে সকল প্রবাসী শ্রমিক কাজের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে ভ্রমণ কর তুলে নিতে হবে। উল্লেখ্য ঐ সকল প্রবাসী ভ্রমণের জন্য বিদেশে যাচ্ছেন না উনারা কাজের জন্য যাচ্ছেন।
সরকারের নেওয়া প্রবাসীদের ব্যাপারে যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণী কমিটিতে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এনআরবি সিআইপি অ্যাসোসিয়েশন কে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

৭। বাংলাদেশ স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে এবং মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রবাসীর সন্তানদের আলাদা কোটা রাখতে হবে। প্রবাসীরা বিদেশে বসে দূতাবাসের মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড করার সুযোগ করে দিতে হবে। ইতিমধ্যে কিছু দেশে ভোটার আইডি কার্ড চালু করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল, সকল দেশে প্রবাসীদেরকে ভোটার আইডি কার্ড করার সুযোগ করে দিতে হবে।

৮। প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে হবে। পাসপোর্ট করতে গিয়ে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যে সকল প্রবাসীর সন্তানরা বিদেশে জন্মগ্রহণ করে সেই ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধনের নামে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে নিতে হবে।
প্রবাসীদের ছেলেমেয়েরা বিদেশের মাটিতে পড়ালেখার ক্ষেত্রে সরকারি খরচে স্কুল কলেজ সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।

৯। প্রবাসী অসুস্থ শ্রমিকদের দেশে প্রেরণ করার ক্ষেত্রে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।
 বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা তৈরি করে নিম্নআয়ের প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতার আওতায় আনতে হবে।

১০। বাংলাদেশে বিমানবন্দরগুলোতে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।  সরকারের সকল মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদেরকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রবাসী সহায়তা-ডেক্স চালু করতে হবে। 

১১। বিদেশের মাটিতে যে সকল প্রবাসী উদ্যোক্তা বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতেছেন, তাদেরকে বাংলাদেশে সামাজিক মর্যাদায় সম্মানিত করে উৎসাহিত করতে হবে।

১২। বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশে অতিরিক্ত রেমিট্যান্স প্রেরণ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধি নিষেধ থাকে সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশে টাকা প্রেরণ করলে তা পরিবারের কর্তা ব্যক্তির নামে অন্তর্ভুক্ত করে সিআইপি আবেদন করার সুযোগ করে দিতে হবে।

১৩। প্রবাসীরা আয়কর দিতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে প্রবাসী করদাতা গনকে হয়রানি বন্ধ করে সহজ প্রক্রিয়ায় কর প্রদান করার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৪। বিশ্বের সকল দেশে দূতাবাস গুলোকে আরো গতিশীল করে হুন্ডী প্রতিরোধ করার জন্য দূতাবাস কর্তৃক প্রবাসীদের পরামর্শ গ্রহণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫। প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলার জন্য মহান জাতীয় সংসদে প্রবাসীদের প্রতিনিধি নিয়োগ দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বলা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার যদি প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবিগুলো বাস্তবায়ন করে, তাহলে প্রবাসীদের মাঝে সরকারের ভাবমূর্তি অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি