পুঁজিবাজার : পাঁচ বছরের মধ্যে টানা পতনের রেকর্ড
প্রকাশিত : ১৪:৪৫, ২১ মে ২০১৮
শেয়ার বাজারে চলছে টানা দরপতন। লাগাতার দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আসল হারিয়ে পথে বসার দশা। হতাশা থেকে এদের অনেকে শেয়ারবাজারমুখী হচ্ছেন না। কারণ এ অব্যাহত এতো বড় দরপতন গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে কেউ দেখেনি। পতনের জন্য বড় বিনিয়োগকারীদের বাজার থেকে বের হয়ে যাওয়া এবং ভালো কোম্পানি বাজারে না আসাকেই কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে টানা সাত বা আট দিন লাগাতার সূচকের পতন বা বৃদ্ধির অনেক রেকর্ড আছে। তবে টানা ১৩ দিন পতনের রেকর্ড নেই। সর্বোচ্চ টানা নয়দিনের রেকর্ড আছে ২০১৪ সালের ৩০ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। এবার ৩০ এপ্রিল থেকে শুরু টানা এ পতনে বাজারের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সূচক সোয়া ৭ শতাংশ বা ৪২৩ পয়েন্ট হারিয়ে ৫৩৯০ পয়েন্টে নেমেছে। ফিরে গেছে এক বছর আগের অবস্থানে। গত সাড়ে পাঁচ বছরে টানা এত বেশি পরিমাণ পতনেরও রেকর্ড নেই। যদিও আজ সোমবার পুঁজিবাজারের সূচক কিছুটা ঊর্দ্ধমুখী।
গত বছরের ৪ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৩ দিনে ডিএসইএক্স সূচক হারিয়ে ছিল ৩৪১ পয়েন্ট। অবশ্য মাঝে ১৭ এপ্রিল মাত্র ৩ পয়েন্ট বেড়েছিল। এই একদিনের সূচক বৃদ্ধি বিবেচনায় না নিলেও ওই সময় টানা ১২ দিন সূচক কমেছিল। ২০১১ ও ২০১২ সালের ভয়াবহ দরপতনের সময় টানা ১৮০০ পয়েন্টেরও বেশি সূচকের পতনের রেকর্ড আছে; কিন্তু সে প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অর্থনীতিবীদ ড. আবু আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘদিন দরপতনের ধাক্কা কাটিয়ে আজ বাজার একটু ঊর্ধ্বগতি। দীর্ঘদিন পতনের জন্য দুটি বিষয় কারণ হিসেবে দেখা যায়। প্রথমতো বাজার থেকে বড় বিনিয়োগকারীরা বের হয়ে গেছে। দ্বিতীয়তো নতুন করে ভালো কোন কোম্পানি বাজারে আসেনি।তবে এ পতন থেকে রেহাই পেতে আসন্ন বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা রাখা যেতে পারে। এছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর করহারও কামানো যেতে পারে।
এদিকে দরপতন ইস্যুতে গত শনিবার ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএর নেতারা। ওই বৈঠকে টানা পতনের জন্য ব্যাংক খাতের দুরবস্থাকে প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ব্যাংক খাতের সংকট না কাটলে শেয়ারবাজার পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বিষয়ে নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণের আহ্বান জানান ডিবিএ নেতারা।
ডিবিএ সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক বলেন, বছরের শুরুর অব্যাহত দরপতনের প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএসইসির চেয়ারম্যান ও মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার গণনা পদ্ধতি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অথচ আড়াই মাস পার হলেও তা কার্যকরের উদ্যোগ নেই।
ডিএসইর চেয়ারম্যান ড. আবুল হাশেম বলেন, দরপতন বিষয়ে উদ্বেগ জানাতে সংগঠনটির নেতারা এসেছিলেন। এর মধ্যে ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট ও সুদহার বৃদ্ধির কথা আছে। শেয়ারবাজারে ব্যাংকের এক্সপোজার গণনায় ভুল পদ্ধতি অনুসরণের কথাও বলেছেন তারা। তাদের বক্তব্য শোনা ছাড়া আমাদের আর কী-ই বা করার আছে।
আরকে// এআর
আরও পড়ুন