ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ফের বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:০৫, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

আবারও লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার। পণ্যটির দাম বৃদ্ধির লাগাম টানতে সরকার সম্প্রতি বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। একই সাথে টিসিবি খুচরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা কেজিতে চলে এসেছিল পেঁয়াজ। কিন্তু পেঁয়াজের সেই কমে আসা দাম স্থিতিশীল থাকেনি। ফের বেড়েছে এর ঝাঁঝ। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা। 

শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কাঁঠাল বাগান কাঁচা বাজার, মালিবাগ বাজার, মালিবাগ রেলগেট বাজার ঘুরে পেঁয়াজের এ বর্ধিত দাম দেখা যায়। বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়লেও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের সংকট আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে না আসায় এ বাড়তি দাম। 

এসব বাজারে এক সপ্তাহ আগে খুচরা প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। আর আমদানি করা মিশর ও মিয়ানমার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা এবং ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে।

অথচ সপ্তাহ যেতে না যেতেই সরবরাহ কমেছে এমন অজুহাতে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। আর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৮ থেকে ১১০ টাকা। একইভাবে পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৬ টাকা। এ সব বাজারে খুচরা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আলতাফ আহম্মেদ বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া তো তরকারি খাওয়া মুশকিল। শুনেছিলাম সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগে পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু আমরা একনও তার বাস্তবতা দেখছি না। এদিকে সরকারের নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার।

পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য বেড়েছে ২০ টাকা। আর দেশি পেঁয়াজে বেড়েছে ১০ টাকা। কারওয়ান বাজার, মানিকদী বাজার, মালিবাগ, কচুক্ষেত বাজার, রামপুরা বাজার, মহাখালী বাজার, আজমপুর বাজার ও উত্তরা বাজারের তথ্য সংগ্রহ করে টিসিবি বলছে, শুক্রবার বাজারগুলোয় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়।
টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, গত সপ্তাহে (১৮ অক্টোবর) আগের সপ্তাহের (১১ অক্টোবর) তুলনায় আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। একইভাবে ওই সপ্তাহেও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা।

টিসিবি বলছে, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকায়। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ অক্টোবর অর্থাৎ এক বছর আগে খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজের মূল্য ছিল মাত্র ২৫ টাকা। তবে পেঁয়াজের বাজার অচিরেই স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসলে এমনিতেই বাজার স্বাভাবিক হবে।

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ চেষ্টা চলছে বলেও হুমায়ুন কবির উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকা মহানগরীর প্রতিদিন ৩৫ জায়গায় ট্রাকে করে ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  ভারত রপ্তানি বন্ধের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মিয়ানমার থেকে ১২ হাজার ৮৪৯ টন, ভারত থেকে ৮ হাজার ৫৬৮ টন (নিষেধাজ্ঞার আগে এসব পেঁয়াজের ঋণপত্র খোলা হয়েছিল), মিসর থেকে ৫৬২ টন এবং চীন থেকে ৫২ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়। সব মিলিয়ে এই ২০ দিনে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৬২ হাজার টন। আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন। 
ব্যবসায়ীদের ধারণা অনুযায়ী প্রতি বছর চাহিদার ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। 

বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ১৭ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের মত। উৎপাদিত এ পেঁয়াজের ৩০ শতাংশ আবার সংরক্ষণ অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। তাতে চাহিদা পূরণ না হওয়ায় আমদানি করতে হয় ৭ থেকে ১১ লাখ মেট্রিক টন। স্বল্প দূরত্ব আর সহজলভ্যতার কারণে আমদানির বেশিরভাগটা ভারত থেকেই হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে এই উৎপাদনের হার প্রায় ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। ভারত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে। যার একটি বড় অংশ এসেছে বাংলাদেশে।

এর আগে ২০১৭ সালের শেষ দিকেও একবার ভারত নিজেদের বাজার সামাল দিতে নূন্যতম রপ্তানিমূল্য ৪৩০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ ডলার করেছিল। তখন খুচরা বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭৫ টাকা কেজিতে পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। 

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা জানান, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৯ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আর ভারত থেকে আমদানি করা হয় চাহিদার বাকি অংশ। আর আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজই দর উঠানামায় বড় ভূমিকা রাখে।

শ্যামবাজারের পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির প্রচার সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, দেশের পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে গত ২০ বছর ধরে প্রতিবছর বাংলাদেশ ১০ থেকে ১১ লাখ মেট্রিকটন পেঁয়াজ আমদানি করে। ভারতে যখন পেঁয়াজের ঘাটতি থাকে তখন তারা আমদানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশে এর দাম বেড়ে যায়।
দেশে পেঁয়াজের দাম কমাতে এর উৎপাদন বাড়াতে হবে। কৃষকদের স্বল্প সুদের ঋণ দিতে হবে। কৃষি পরামর্শ দিয়ে তাদের পেঁয়াজ উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হবে। ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। সর্বোপরি সরকারকে দীর্ঘ পরিকল্পনা নিতে হবে। আর তাৎক্ষণিকভাবে দামের লাগাম টানতে সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি