রোহিঙ্গা সমাধান রাজনৈতিকভাবেই হতে হবে: বিশ্বব্যাংক
প্রকাশিত : ১৯:১৮, ৩ নভেম্বর ২০১৯
চলমান রোহিঙ্গা সংকট রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এটা রাজনৈতিক ইস্যু। তাই এই ইস্যু রাজনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক কখনো কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে না বরং বিশ্বব্যাংক তার সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেই কাজ করে। মিয়ানমারও বিশ্বব্যাংকের স্টেক হোল্ডার। তাই তারা যদি আগ্রহী হন তবে তাদের সঙ্গে কাজ করতে বিশ্বব্যাংকের কোন দ্বিধা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত বিশ্বব্যাংক গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক প্যটারিজিও পাগানো।
তিনি বলেন, আমরা কারো দরজায় গিয়ে টোকা দেই না। সবার জন্য আমাদের দরজা উন্মুক্ত। যাদের সহায়তা প্রয়োজন তারাই আমাদের কাছে আসতে পারে। যদি মিয়ানমার সরকার আসে তাহলে আমরাও তাদেরকে অর্থ অনুদান কিংবা ঋণ দিতে আগ্রহী।
রোববার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ‘বিশ্বব্যাংক কর্তৃক মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো সম্ভবনা আছে কিনা’ জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন। ব্রিফিংয়ের আগে প্রতিনিধি দলটি অর্থমন্ত্রী মুস্তাফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে পাগানো বলেন, বিশ্বব্যাংক এখানে আছে সমস্যা সমাধানের জন্য। সমাধান হতে পারে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার মধ্য দিয়ে। আমরা এখানে কোনো রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে আসিনি। এটা আমাদের লক্ষ্য নয়। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করার জন্য জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আছে।
তিনি আরও বলেন, বিশ্বব্যাংক সবসময় সমস্যা সমাধানে কাজ করে। সেটা হতে পারে কৌশলগত দিক থেকে অথবা অর্থনৈতিকভাবে সাহায্য করে। আমরা এখানে এসেছি সহায়তার জন্য। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। যেটা এখানকার মানুষের জন্য উপকারী হবে।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১০ শতাংশ জিডিপি অর্জনের যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা অর্থমন্ত্রী নির্ধারণ করেছেন সেটা খুবই চমকপ্রদ। আর সেটি অর্জন করতে হলে অর্থনৈতিক খাতে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতি দেশ হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, দারিদ্র দূরীকরণ বাংলাদেশের ভূমিকা অসাধরণ। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যে উন্নতি সাধন করেছে তাদের অর্জনে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।
এর আগে দুপুরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভূয়শী প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। রাজধানীর কারওয়ান বাজার সোনারগাঁও হোটেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রশংসা করে বিশ্বব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল।
রোববার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানে নিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন এবং আলবেনিয়া, গ্রিস, ইতালি, মালটা, পর্তুগাল, সান মেরিনো ও তিমোর লেস্তায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ প্যাট্রিজিও প্যাগানো।
কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, ‘বাংলাদেশ নিজেই ব্যতিক্রমী হয়ে উঠবে আগামীতে। কারণ কাগজে বাংলাদেশের যে অর্জন, সেটার বাস্তবতাও রয়েছে।’
এ সময় প্যাট্রিজিও প্যাগানো বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দল আমরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছি। আমরা অবাক হয়েছি যে, বিশ্বে দ্রুত উন্নয়ন করা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করার মতো। দারিদ্র্য দূর করা বিশ্বব্যাংকের প্রধান কাজ। তাই বাংলাদেশের এই অর্জনে আমরা খুশি।’
তারপরও বাংলাদেশের বড় একটা অংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। দেশের সব মানুষই উপকারভোগী হবে এমন প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তিনি।
প্যাট্রিজিও প্যাগানো বলেন, ‘উন্নয়নে দেশের সব মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বেসরকারি খাতেরও এ ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হওয়া দরকার। বেসরকারি খাতও ভালো কাজ করে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত নিজেদের জনগণের জন্য বিনিয়োগ করা। বিনিয়োগ বলতে শুধু ভৌত অবকাঠামোকে নির্মাণ করাকেই বোঝায় না, মানবসম্পদ উন্নয়নকেও বোঝায়। মানবসম্পদ বলতে মানুসের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়কে ইঙ্গিত করে। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে অনেক কাজ করছে।’
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা তাদের সহযোগিতার কথা স্বীকার করি। আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সমৃদ্ধ, শান্তির, বৈষম্যহীন দেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবে।’
বৈঠকে বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরকে//
আরও পড়ুন