উন্মোচিত হল বাংলাদেশের প্রথম কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী কৌশলপত্র
প্রকাশিত : ২১:১৭, ২৫ নভেম্বর ২০১৯

ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলন-এ উন্মোচন করা হয়েছে দেশের প্রথম স্বাস্থ্যকর্মী কৌশলপত্র। ঢাকার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে ২৪ নভেম্বর তিন দিনব্যাপি এক সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে প্রকাশিত হলো প্রথম কৌশলপত্র।
২য় আন্তর্জাতিক কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী সম্মেলনটি আইসিডিডিআর,বি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; ব্র্যাক জেমস পি. গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ (জেপিজিএসপিএইচ) এবং সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ-এর সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনটির আয়োজন করে। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- “সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনে অসংক্রামক ব্যাধির নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্ভাবনা। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এবারের সম্মেলনে অসংক্রামক রোগ-সংক্রান্ত নানান প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা সম্পর্কে নতুন আঙ্গিকে বিভিন্ন অবস্থান নিয়ে আলোচিত হয়।
একশ বছরের বেশি সময় ধরে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলভাবে কাজ করে আসছে। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, টিকাদান কর্মসূচি, সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত শিক্ষা ও পরামর্শ সেবাদানে তাঁদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এবছরের সম্মেলনে ৩৫টি দেশের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক, বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও মাঠপর্যায়ের কর্মীরা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনে অসংক্রামক রোগসহ চিকিৎসা, সনাক্তকরণ ও পরীক্ষায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচকরা আলোচনা করেন। আলোচিত হয় প্যালিয়েটিভ সেবার মতো বিষয়ও।
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ইউএসএইড, ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে “বাংলাদেশ ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার্স (২০১৯-২০৩০)” প্রকাশ করা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে অসংক্রামক রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের ভূমিকা ও পদক্ষেপ সম্পর্কে ধারণা যুক্ত হয়েছে কৌশলপত্রে। আইসিডিডিআর,বির শেয়ার প্রকল্প, হেলথ সিস্টেমস ও পপুলেশন স্টাডিজ বিভাগের বিজ্ঞানী ও প্রকল্প পরিচালক ইকবাল আনোয়ার জানান, ‘কৌশলপত্র শুধু বাংলাদেশকেই নয় বিশ্বের অনেক দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশকে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে পথ নির্দেশনা দেবে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা সারা বিশ্বের মঙ্গলে কাজে আসবে।’
সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানা উপস্থাপিত ১৪১ পোস্টার ও গবেষণা উপস্থাপনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন। নি¤œ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবায় বিভিন্ন কৌশল ও দিকনির্দেশনা আলোচিত হয় পোস্টার ও উপস্থাপনায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জাহেদ মালেক সম্মেলনে আগত বিদেশী অতিথিদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সম্মেলন উপলক্ষে বাংলাদেশে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “আমার প্রত্যাশা সম্মেলনের বিভিন্ন প্যানেল বক্তব্য, উপস্থাপনা ও আলাপচারিতায় আপনাদের পার¯পরিক নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে।” তিনি আইসিডিডিআর,বি ও আয়োজক সহযোগীদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য কমিউনিটিকে আলোচনা ও সহযোগিতার নতুন দিকের বিস্তৃতি ও উদ্ভাবনী ধারণা জানাতে সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী এ কে এম মহিউল ইসলাম। সেভ দ্য চিলড্রেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্ক পিয়ার্স, ইউএসএইড বাংলাদেশের মিশন ডিরেক্টর ডেরেক ব্রাউন, ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ তোমো হজুমি, ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. আশা টর্কেলসন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের প্রধান ডা. বার্দান জাং রানা এবং ঢাকার করাইল বউবাজারের কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী আনোয়ারা বেগম সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সম্মেলনে ৩৫টি দেশের ৫০০ জন অংশগ্রহণকারী অংশ নেন। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের বিভিন্ন দেশের ২০জন মেধাবী নবীন গবেষককে বৃত্তি প্রদান করা হয়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন অংশগ্রহণকারীদের অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীদের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে নানাক্ষেত্রের পেশাজীবীদের আলোচনা ও কৌশল জানার সুযোগ করে দেয়। সম্মেলনটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অর্জন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রার তৃতীয় লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখবে। সম্মলনটির আয়োজনে আরও সহযোগিতায় ছিল ইউএসএইড, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন, ইউকেএইড, এমএসএইচ, ভাইটাল র্স্ট্যাটেজিস, ব্র্যাক, ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আরকে//
আরও পড়ুন