ঢাকা, সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪

পুঁজিবাজার উন্নয়নে অর্থমন্ত্রীর কাছে ডিএসই’র প্রস্তাবনা  

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৮, ২ জানুয়ারি ২০২০

দেশের পুঁজিবাজারকে একটি টেকসই, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধির স্তরে উন্নীত করার জন্য বেশকিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে এসব প্রস্তাব পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। প্রস্তবনায় বলা হয়েছে-

বাংলাদেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ পুঁজিবাজারের সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সীমিত আয়ের মানুষ। তাই এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বাজার। সে কারনে এই বাজারের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি প্রদান অপরিহার্য। আর তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকার তার সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ অব্যাহত রাখছে।

অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আপনার গৃহীত পদক্ষেপসমূহের ইতিবাচক প্রতিফলনের জন্য আপনাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পুঁজিবাজার সম্প্রসারন ও উন্নয়নের জন্য নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি আপনার সুদৃষ্টি, পরামর্শ ও সহযোগিতা একান্ত ভাবে কামনা করছি-

পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ব্যবস্থা: আপনি জানেন, প্রধানমন্ত্রী শিল্পায়নে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর নির্ভর না করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য ব্যাংক আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ঋণ মওকুফের নীতি সঠিক বাস্তবায়ন এবং ঋণখেলাপিদের যথাযথ আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে উদ্দ্যোক্তাদের উৎসাহীতকরণ। 

রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানির শেয়ার পুঁজিবাজারে আনয়ন: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের একটি বড় বাধা হচ্ছে ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। বড় এবং ভাল মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিকে বাজারে আনার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এ লক্ষ্যে সরকার পুঁজিবাজারে রাষ্ট্রয়াত্ত কোম্পানির শেয়ার অফলোড করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। উল্লেখ্য যে, সাধারণ বীমা ও জীবন বীমার মতো লাভজনক কোম্পানি নূন্যতম ২০ শতাংশ শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের অফলোডের ব্যবস্থা করা।

টি-বন্ডের লেনদেন যথা শীঘ্র চালুকরণ: ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জের প্লাটর্ফমে চালু করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা নিশ্চিতকরন জরুরী। এ লক্ষ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। কমিটির প্রস্তাবনা দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে টি-বন্ডকে এক্সচেঞ্জের প্লাটর্ফমে লেনদেন করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা। 

বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করা: বর্তমানে অনেক বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছে কিন্তু তাদের খুব অল্প সংখ্যক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আছে। এ লক্ষ্যে সরকার ঐ সকল কোম্পানিকে বিশ্বের  অন্যান্য দেশের ন্যায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করতে সহযোগিতা করতে পারে। 

গ্রামীনফোন এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দ্বন্দ্বের দ্রুত নিস্পত্তি: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশে বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীনফোনের ও বিটিআরসি দ্বন্দের কারনে বাজারে প্রভাব পড়ছে। গ্রামীনফোনের শেয়ার পুঁজিবাজার মূলধনের একটি বড় অংশ ধারণ করছে। এ বিষয়টি নিস্পত্তিতে দীর্ঘ সুত্রিতা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারে সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা জন্মেছে। বিষয়টির দ্রুত নিস্পত্তি পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ইতিবাচকভাবে তুলে ধরবে। 

ডিএসই এবং পুঁজিবাজারের লেনদেনের উপর কর হ্রাস: বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ডিএসই’র কর্পোরেট কর হার ৩৫% এর পরিবর্তে ১৫% নির্ধারণ করা। স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেকহোল্ডারদের কাছ থেকে ট্রেডের উপর অর্থ আইন ২০০৫ এর ৫৩ (বিবিবি) অনুযায়ী ০.০১৫% এর পরিবর্তে ০.০৫% হারে উৎসে আয়কর আদায় করা হয় যা বাংলাদেশের পার্শ¦বর্তী দেশসমূহের (ভারত ০.০১৩% - যার তুলনায় বাংলাদেশের কর হার ৩.৮৪ গুণ বেশী, পাকিস্তান ০.০২% - যার তুলনায় বাংলাদেশের কর হার ২.৫ গুণ বেশী এবং হংকং ০.০০২৭% - যার তুলনায় বাংলাদেশের কর হার ১৮.৫১ গুণ বেশী) তুলনায় অনেক গুণ বেশী। তাই পুঁজিবাজারকে বিনিয়োগবান্ধব ও আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং লেনদেনের উপর কর হার যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারন করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে এই কর হার ০.০১৫% নির্ধারন করা উচিত বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

অডিট রিপোর্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ: তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে হিসাববিদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্বচ্ছ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের সঠিক দিকনির্দেশনার দায়িত্বও পেশাগত হিসাববিদদের। ফলে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিরীক্ষকদের আরো বেশি সক্রিয় হওয়ার ওপর জোর প্রদানসহ ঋরহধহপরধষ জবঢ়ড়ৎঃরহম অপঃ (ঋজঅ) এর সঠিক প্রয়োগ, নিরীক্ষকদের কোড অব কন্ডাক্ট মেনে চলা, নিরীক্ষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং তাদের সঠিক অডিট ফি প্রদানের মাধ্যমে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।  

পুঁজিবাজার উন্নয়নে আইসিবি ও অন্যান্য সংন্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি: আইসিবি প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল সেকেন্ডারি শেয়ার বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। বর্তমান বাজার মূলধন বিবেচনায় পুঁজিবাজারে যথার্থ সাপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি জরুরী। তাছাড়া আইসিবি এর পাশাপাশি বিডিবিএল-কেও সেকেন্ডারি শেয়ার মার্কেটের প্রয়োজনে সাপোর্ট প্রদানের স্বার্থে পর্যাপ্ত তবহিল সরবরাহ ও তাহা যথাযথ বিনিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ: Large private and public project এবং বিশেষায়িত খাত যেমন: বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, এল এন জি টারমিনাল স্থাপন এবং বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প যেখানে বড় ইনভেস্টমেন্ট রয়েছে এবং লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় - ঐ সকল কোম্পানিগুলোর শেয়ার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে অফলোড করে সাধারন জনগণকে ঐ সকল কোম্পানির মালিকানায় সম্পৃক্ত করা। সাধারন বিনিয়োগকারীদের এই অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিশ্চিত  হবে।

বাজারে অর্থের সরবরাহবৃদ্ধি: দীর্ঘদিন নেতিবাচক অবস্থার কারণে বর্তমান অবস্থায় বিনিয়োকারীদের বিনিয়োগ সক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। তাই বাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা, যা বাজারের গতিশীলতা বৃদ্ধি করবে। এ প্রসঙ্গে বাজার মধ্যস্থ্যতাকারীদের পক্ষ থেকে বাজারে অর্থের সরবরাহের বৃদ্ধির প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে বলে আমরা অবহিত। আমরা মনে করি এ বিষয়টি বাস্তবায়ন হলে বাজারে অর্থের যোগান বাড়বে এবং গতিশীলতা ইতিবাচক ধারায় যাবে।      

উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন: সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি প্রতিনিধি ও  পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সমন্বয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। এ কমিটি পুঁজিবাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রনয়ণ, বাস্তবায়ন এবং আন্তঃমন্ত্রনালয় সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের টেঁকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
ঋণ প্রস্তাবের বিশেষ বিবেচনার অনুরোধঃ  বাজারকে সাপোর্ট দেয়ার জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ডিলারদের স্বল্প সুদে সিকিউরড ঋণের ব্যবস্থা করা জরুরী। এ বিষয়ে ১০,০০০/= কোটি টাকা ঋণ চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে, আমরা সে প্রস্তাবের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য যে, এ অর্থ একটি নির্দিষ্ট বি ও আকাউন্টের মাধ্যমে শুধুমাত্র শেয়ার ক্রয় এবং বিক্রয়ে বিনিয়োগ করা যাবে এবং যেখান থেকে শুধু মুনাফা উত্তোলন করা যাবে। 

অতএব, মহোদয়ের নিকট পুঁজিবাজারের এই সার্বিক বিষয়াদি তুলে ধরে এর টেঁকসই উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে আবেদন করছি এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে অতীতের ন্যায় এখনও আপনার সুনির্দিষ্ট ও সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করছি। 

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি